কেরিআন্টি থাকেন সান্তা বারবারায়।
বিছানা থেকে নেমে একটা ভোয়ালে টেনে নিয়ে বাথরূমে রওনা হলো মুসা। ম্যাসাজ টেবিলটার পাশ কাটানোর সময় ফোনের ওপর নজর পড়তেই থমকে দাঁড়াল। একটা ফোন করলে কেমন হয়? দূর! কি ভাবছে! স্বপ্ন কখনও সত্যি হয় নাকি?
কিন্তু ইচ্ছেটা তাড়াতে পারল না মন থেকে। শেষে পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে তুলে নিলে রিসিভার। ক্রিসির দিকে তাকাল। তেমনি ঘুমাচ্ছে। নম্বর টিপল। ওপাশে রিঙ হচ্ছে। দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করছে মুসা।
ফোনটা ড্যানিই ধরল। কণ্ঠ শুনে বোঝা গেল ঘুম থেকে উঠে এসেছে। তাতে অস্বস্তি বোধ করল না মুসা। দুঃখ নেই মোটেও। বরং স্বস্তি। একটা বিরাট বোঝা নেমে গেল মন থেকে। স্বপ্নটা মিথ্যে। ড্যানি বেঁচে আছে।
কি ব্যাপার? জানতে চাইল ড্যানি।
তুমি ভাল আছ নাকি শিওর হয়ে নিলাম।
হাই তুলল ড্যানি। ভালই আছি। এখানে এসেছি তুমি জানলে কি করে?
অনুমান, স্বপ্নের কথাটা চেপে গেল মূসা। সরি, তোমার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলাম। যাও, শুয়ে পড়োগে। কেরিআন্টি কোথায়?
বেড়াতে গেছে।
আচ্ছা, রাখি। দুদিন পর যোগাযোগ করব।
ওখানে সব ঠিক আছে?
আছে। গুড নাইট, ড্যানি।
গুড নাইট।
রিসিভার নামিয়ে রাখল মুসা। ফিরে তাকাতে দেখে সোফায় সোজা হয়ে বসে আছে ক্রিসি। চোখে চোখ পড়তে হাসল। কোথায় ফোন করলে?
সান্তা বারবারায়। আমার এক বন্ধুকে।
অ। কেমন লাগছে এখন?
ব্যথাটা কমেছে।
আবার হাসল ক্রিসি। কমতেই হবে। বলেছিলাম না, আমার ম্যাসাজে জাদু আছে? … যাচ্ছ কোথায়?
বাথরূমে। বাড়ি যাব। ঘুমাতে হবে।
কেন, এখানে অসুবিধে কি?
আমার কোন অসুবিধে নেই। অসুবিধেটা আপনার। বিছানা আমি দখল করে রাখলে সোফায়ই থাকতে হবে আপনাকে…
তাতে কি? আমার অসুবিধে হচ্ছে না।
কিন্তু আমার হবে। অস্বস্তিতে ঘুমাতে পারব না আমি। শরীরটাও যে রকম খারাপ লাগছে, না ঘুমালে মারা পড়ব।
বাথরূমের দিকে এগোল মুসা।
.
১০.
পরদিন রবিবার। সকালবেলা রবিনকে ফোন করল কিশোর। খবর আছে। ডেভন ব্রেকের দোকানের নতুন মালিক ওরই চাচা উইনার ব্রেক। মিসেস ব্রেকের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে দোকানটা। লোকটা কোন সহযোগিতা। করতে রাজি হয়নি। এমনকি ব্রেকের বাড়ির ফোন নম্বরটাও দিতে চায়নি।
রবিনকে মাথা ঠাণ্ডা রাখার পরামর্শ দিল কিশোর। গোস্ট লেনে এখন ঘনঘন যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। বহুদিন পর বাড়ি ফিরেছে। ইয়ার্ডে কাজ জমে গেছে অনেক। তা ছাড়া আরও কাজ আছে।
সারাটা দিন মুসার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করল রবিন। কিন্তু পেল না। ওকে। কোথায় যে গেছে, কেউ বলতে পারল না।
সোমবারেও মুসার খবর নেই।
এমনকি সোফির শেষকৃত্য অনুষ্ঠানেও যোগ দিতে এল না।
ব্ল্যাক ফরেস্ট গোরস্থানের গির্জার সামনে রাখা হলো কফিন। আত্মীয় স্বজন বন্ধু-বান্ধবরা এল শোকের কালো পোশাক পরে। মারলার পাশে দাঁড়ানো রবিন। চুপচাপ তাকিয়ে আছে কয়েক গজ দূরের কফিনটার দিকে। সোফি যে মারা গেছে, মাথাটা আলাদা, ধড়ের সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে সেলাই। করে দিয়েছে হাসপাতালের ডাক্তার, এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না। একঘেয়ে বিষণ্ণ কণ্ঠে মৃত্যুর ওপারের সেই সবুজ তৃণভূমি আর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া টলটলে পানির নহরের বর্ণনা করে চললেন পাদ্রী। রূপকথার মত লাগছে রবিনের কাছে।
অনুষ্ঠান শেষ হতে বহু সময় লাগল। সোফিকে কবর দেয়ার পর তার মা বাবার কাছে গিয়ে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যে নানা কথা বলতে লাগল রবিন। কোন সাহায্য লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করল। নিজের কানেই বড় ফাপা শোনাল কথাগুলো। কি সাহায্য করবে সে? তাদের মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারবে? সোফি ছিল তাদের একমাত্র মেয়ে।
সবাই যার যার বাড়ি ফিরে গেল। রবিনের ফিরতে ইচ্ছে করল না। একা বাড়িতে মন টিকবে না। মুসাকে পাওয়া যাচ্ছে না। ইয়ার্ডে গিয়ে কিশোরের সঙ্গেও আড্ডা দিয়ে সময় কাটানো সম্ভব নয়। ও বলে দিয়েছে ব্যস্ত থাকবে।
গাড়ি নিয়ে পাহাড়ের কাছে চলে এল সে। পাহাড়ে চড়তে ভাল লাগে। ওর। কিন্তু আজ লাগল না। চুড়ায় খানিকক্ষণ বসে থেকে আবার নেমে এল নিচের উপত্যকায়। লেকের পাড়ে বসে রইল, ঘোরাঘুরি করল, লেকের শান্ত পানিতে ঢিল ছুঁড়ল। অন্যমনস্ক। সারাক্ষণ মন জুড়ে রইল সোফির মৃত্যু, রহস্যময় তত্ত্বাবধায়কের চিঠি, মুসার জন্যে দুর্ভাবনা।
সারাটা দিন কাটিয়ে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরল সে। বাবা-মা ফেরেননি। কি করবে? মুসাকে ফোন করল আবার। পাওয়া গেল না। একটা বই নিয়ে পিঠে বালিশ ঠেকিয়ে আধশোয়া হলো বিছানায়। কিছুতেই মন বসাতে পারল না। ড্যানির চেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা হচ্ছে এখন মুসাকে নিয়ে। ড্যানি কাউকে কিছু না। বলে পালিয়েছে, বাঁচার জন্যে। মুসাও কি তাই করল?
সারাদিনের পরিশ্রমের ক্লান্তিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল, বলতে পারবে না। টেলিফোনের শব্দটা যেন ঘুমের মধ্যেও কানে বোমা ফাটাল তার।
চোখ মেলতেই নজর পড়ল ঘড়ির দিকে। বারোটার বেশি। কেঁপে উঠল বুক। কে করল? কোন দুঃসংবাদ ছাড়া এত রাতে কেন ফোন করবে?
কাঁপা হাতে রিসিভার তুলে নিয়ে কানে ঠেকাল। হালো?
রবিন? কাঁদো কাদো স্বরে মারলা বলল। ড্যানি…
কি হয়েছে ড্যানির?
ও নেই…
ইমপসিবল!
ফোঁপাতে লাগল মারলা। সান্তা বারবারায় ওর খালার বাড়িতে চলে গিয়েছিল। এইমাত্র ফোন করে জানাল আমাকে মুসা। ও বাড়ি ফিরে এসেছে।তত্ত্বাবধায়ক ঠিকই খুঁজে বের করেছে ড্যানিকে। গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। …উফ, কি ভয়ঙ্কর!… রবিন, এবার আমার। পালা…