ঘুমে জড়িয়ে এল তার চোখ।
ঘুমিয়ে পড়ল..
*
বারান্দা দিয়ে হেঁটে চলল মুসা। পাশে একটা দরজা দেখে থামল। দরজা খুলে উঁকি দিয়ে দেখে একটা বেডরূম। বিছানায় শুয়ে নিশ্চিন্তে নাক ডাকাচ্ছে ওর বন্ধু ড্যানি।
ড্যানি? আস্তে করে ডাকল মুসা। শুনছ? ওঠো। উঠে পড়ো।
আড়মোড়া ভেঙে উঠে পড়ল ড্যানি। হাই তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করল, কে?
আমি, ড্যানি। মুসা।
ওর কথা যেন শুনতেই পায়নি ড্যানি। দরজার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলা, কেরিআন্টি, দাঁড়াও, আসছি।
আন্ডারওয়্যার পরা অবস্থায়ই তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে এগিয়ে গেল সে। মুসার পাশ দিয়েই গেল অথচ ফিরেও তাকাল না ওর দিকে।
কি হলো? দেখল না কেন ওকে? ড্যানি কি অন্ধ হয়ে গেছে? না সে নিজেই ভূত হয়ে গেছে–মানুষের চোখে অদৃশ্য?
দরজায় দাঁড়িয়ে বারান্দায় উঁকি দিল ড্যানি।
একটা শব্দ কানে আসছে মুসার। নিচতলা থেকে।
আবার খালার নাম ধরে ডাকতে লাগল ড্যানি। তারপর ছুটে বেরিয়ে গেল।
নিচে কিসের শব্দ দেখার জন্যে তার পেছন পেছন দৌড় দিল মুসা। চিৎকার করে সাবধান করল ড্যানিকে, ড্যানি, বাইরে যেয়ো না। তত্ত্বাবধায়কটা কোনখান থেকে তাকিয়ে আছে কে জানে!
কিন্তু শুনল না ড্যানি। ওভাবে আন্ডারওয়্যার পরেই নিচতলার সদর দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলে বাইরে তাকাল। গ্যারেজ থেকে মনে হয় শব্দটা আসছে। গাড়ির গায়ে সিরিশ দিয়ে ঘষছে যেন কেউ।
কে ওখানে? চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল ড্যানি।
যেয়ো না, যেয়ো না! বন্ধুর পাশে এসে দাঁড়াল মুসা। ওই লোকটা হবে।
শুনল না ড্যানি। কে কে করতে করতে বেরিয়ে চলে গেল। হাত ধরে। টেনে ওকে ভেতরে নিয়ে আসার চেষ্টা করল মুসা। কিন্তু জোর পেল না। মনে হলো একটা ছায়াকে ধরেছে। খুব সহজেই ওর হাতের মুঠো থেকে পিছলে বেরিয়ে অযত্নে বেড়ে ওঠা লন ধরে দৌড় দিল ড্যানি।
ড্যানি, আল্লার দোহাই লাগে তোমার, থামো! চিৎকার করে বলল মুসা।
গ্যারেজের ভেতরে ঘষার শব্দ থেমে গেছে। সুইচের জন্যে হাতড়াতে শুরু করল ড্যানি। পাওয়ার পর যখন টিপে দিল তখনও অন্ধকার হয়ে রইল গ্যারেজ। আলো জ্বলল না। দ্রুকুটি করল সে। বড় বড় হয়ে গেল চোখ যখন দেখল তার আন্টির গাড়ির বেশ খানিকটা জায়গার রঙ ঘষে ঘষে তুলে ফেলা। হয়েছে।
তুলুক, তাগাদা দিল মুসা, দেখার দরকার নেই। জলদি চলো এখান থেকে।
গ্যারেজের ভেতরে শব্দ হলো আবার। বোকার মত দুঃসাহস দেখিয়ে বসল ড্যানি। গ্যারেজের ভেতরে যেতে যেতে ডাকল, অ্যাই, কে ওখানে?
ঝপঝপ করে একগাদা তরল পদার্থ এসে পড়ল ওর গায়ে। ভিজে গেল গা। ঝনঝন করে মেঝেতে একটা বালতি পড়ার শব্দ হলো। কি ঘটছে ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই খস করে ম্যাচের কাঠি জ্বলে উঠল। গাড়ির হুডের কাছে। দাঁড়িয়ে আছে একটা ছায়ামূর্তি। বিদঘুঁটে গন্ধ ঢুকল মুসার নাকে।
ড্যানি! চিৎকার করে উঠল সে। একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করছে, যতই চিৎকার করুক না কেন, গলা দিয়ে স্বর বেরোয় না।
জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি ড্যানির দিকে ছুঁড়ে মারল ছায়ামূর্তি। বুকে লেগে কাঠিটা পড়ল পায়ের কাছে জমে থাকা ট্রেলে। দপ করে জ্বলে উঠল আগুন। একটা সেকেন্ড বোকা হয়ে আগুনের দিকে তাকিয়ে রইল ড্যানি। পরক্ষণে জীবন্ত এক মানব-মশালে পরিণত হলো। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল কমলা রঙ আগুন। মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ল পা থেকে মাথায়। অদ্ভুত এক কাকতাড়ুয়া পুতুলের মত নাচানাচি শুরু করল, ড্যানি। ভয়াবহ যন্ত্রণায় অমানুষিক চিৎকার করছে।
ওকে ধরার চেষ্টা করল মুসা। আগুন থেকে বাঁচাতে চাইল। একটা কিছু করার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠল। কিন্তু কিছুই করতে পারল না। কিছু করার নেই। অনেক দেরি হয়ে গেছে। মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগল ড্যানি। চামড়া পুড়ে, কুঁচকে, বিকৃত হয়ে যাচ্ছে মুখ। মাঢ়ীসহ দাঁত বেরিয়ে পড়ছে। ভয়াবহ দৃশ্য। কিন্তু শুধু চিৎকার করা ছাড়া আর কিছু করতে পারছে না। মুসা। চোখের সামনে প্রিয় বন্ধুর মৃত্যু ঘটতে দেখেও সহ্য করতে হচ্ছে। চিৎকার-চিৎকার-চিৎকার…
*
চোখ মেলতে ছাতের দিকে নজর গেল মুসার। প্রথমে বুঝতে পারল না কোথায় রয়েছে। কেয়ারও করল না। যেখানে খুশি থাক। দুঃস্বপ্নটা যে কেটেছে এতেই সে খুশি। এত ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন কমই দেখেছে।
পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখল, সোফায় কুকড়ি-মুকড়ি হয়ে ঘুমাচ্ছে ক্রিসি। মুহূর্তে মনে পড়ে গেল ওর কোথায় রয়েছে, বিকেলে কি কি ঘটেছিল, সব।
কিন্তু বিছানায় এল কি করে? ছিল তো টেবিলে। ম্যাসাজে আরাম পেয়ে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তারমানে ক্রিসি ওকে বয়ে এনেছে। জোর তো সাংঘাতিক!
উঠে বসল মুসা। ভীষণ ক্লান্তি লাগছে। ঘুমানোর পর এরকম তো লাগার। কথা নয়! মাথার মধ্যে ঘোরটা এখনও কাটেনি। গাটাও গোলাচ্ছে ও। তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। একে শরীর অসুস্থ, তার ওপর গত কিছুদিন ধরে যে পরিমাণ উত্তেজনা আর মানসিক চাপ যাচ্ছে, এরকম হওয়াই স্বাভাবিক। তবে ঘাড়ের ব্যথাটা কমেছে। বাড়ি যাওয়ার তাগিদ অনুভব করল সে। নিজের বিছানায় ছাড়া ঘুমিয়ে শান্তি নেই।
দুঃস্বপ্নটা চেপে আছে এখনও মনে। ড্যানির পুড়ে যাওয়ার দৃশ্যটা এতই বাস্তব লেগেছিল, ভুলতে পারছে না। এত জায়গা থাকতে কেন কেরিআন্টির বাড়িতে ওকে দেখল, তারও যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। ড্যানির ওখানে যাওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। যদিও কাউকে বলে যায়নি। কিন্তু অনুমান করতে কষ্ট হয় না।