না। চিৎকার করার কোন সুযোগই হয়তো পায়নি সে।
যে ভাবে চাপা পড়েছে বলছ, তাতে মনে হয় রাস্তায় হাঁটার সময় হঠাৎ করে চাকার নিচে চলে এসেছিল সে। সেটা কি সম্ভব? ভেবে দেখো, হাঁটার সময় কারও গায়ে ধাক্কা লাগলে শব্দ হবে, লোকটা চিৎকার করবে সেসবও কোন কিছুই শোনোনি তোমরা।
গাড়ির মধ্যে এত বেশি চেঁচামেচি করছিলাম আমরা, শোনার সুযোগই ছিল না…
কি জানি! আমার দৃঢ় বিশ্বাস, একটা ভুলের শিকার হয়েছ তোমরা। ভয় তোমাদের স্বাভাবিক চিন্তার ক্ষমতাও নষ্ট করে দিয়েছে। যেহেতু কবর দিয়ে ব্যাপারটা গোপন করে ফেলেছ, ওর মাকে কষ্ট দিয়েছ, সেটা পূরণের এখন সবচেয়ে ভাল উপায় হলো আসল খুনীকে ধরে আদালতে সোপর্দ করা। রাত দুপুরে ওই মরুভূমিতে কি করতে গিয়েছিল তার ছেলে, সেটা জানতে হবে আগে।
কিছুটা শান্ত হলো রবিন। কি করে জানব কে খুন করেছে?
অবশ্যই তদন্ত করে। আজ রাতে আর কিছু করার নেই আমাদের। বাড়ি গিয়ে ভালমত একটা ঘুম দাও। কাল সকালে উঠে ব্রেকের দোকানে যাব। ঠিকানা যখন জেনে গেছি, খুঁজে বের করতে কষ্ট হবে না। ওর মার। সঙ্গে দেখা করে কথা বলব।
কি লাভ হবে? নিখোঁজ সংবাদটা দেখে তো মনে হয় না ছেলে কোথায় যেতে পারে এ ব্যাপারে মিসেস ব্রেকের কোন রকম ধারণা আছে।
অনেক সময় জানলেও চেপে যায় মানুষ। নিখোঁজ হওয়ার পেছনে এমন সব কারণ থাকে, যেগুলো লজ্জা কিংবা অস্বস্তিতে পড়ার ভয়ে ফাস করতে চায় না। যে নিখোঁজ হয়েছে তার খোঁজ পাওয়ার জন্যে যতটুকু দরকার, তার বেশি বলে না। রবিনকে কম্পিউটারের সামনের চেয়ারটা থেকে সরিয়ে তাতে বসল কিশোর। আবার খুলল ডেভন ব্রেকের ফাইলটা। হাতের তালুতে থুতনি রেখে পর্দার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল।
কি দেখছ? জানতে চাইল রবিন।
জবাব না দিয়ে কিশোর জিজ্ঞেস করল, কনসার্টের দিনটা কত তারিখ। ছিল?
জুলাইর শেষ দিন। একতিরিশ।
কিন্তু এই প্রতিবেদনটার তারিখ দেখো। জুলাইর মাঝামাঝি। বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছে তোমরা ওকে ধাক্কা দেয়ার দুই হপ্তা আগে। ওর ঠোঁটের কোণে তাজা রক্ত দেখেছ তোমরা। তারমানে মারা গেছে সে একতিরিশ তারিখেই। বাড়ি থেকে বেরোনোর প্রায় পনেরো দিন পর।
ইনটারেসটিং তো!
গুড। মাথায় তাহলে ঢুকতে আরম্ভ করেছে। আমি ভাবছি ওই দুটো হপ্তা কোথায় ছিল ডেভন? কার সঙ্গে? পর্দার দিকে আঙুল তুলল কিশোর। যেন জবাব চায় কম্পিউটারের কাছে। সেটা জানলে খুনী কে সেটাও জানতে পারব সহজেই।
*
পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে কিশোর কোথায় যাবে জানতে চাইল রবিন। কিশোর বলল, রকি বীচে। স্যালভিজ ইয়ার্ডে। গোস্ট লেনে ওদের বাড়িতে থাকতে অনুরোধ করল রবিন। কিশোর বলল, জরুরী কাজ আছে। সকালে উঠেই তাকে বেরোতে হবে। গোস্ট লেন থেকে বেকায়দা। রকি বীচে যাওয়াই ভাল।
আর কিছু বলল না রবিন। চুপচাপ গাড়ি চালাল।
হঠাৎ জিজ্ঞেস করল কিশোর, আংকেলরা কবে ফিরবেন?
দেরি হবে।
হু
আবার কিছুক্ষণ চুপচাপ। এবার রবিন কথা বলল, কিশোর, একটা কথা তোমাকে বলা হয়নি। চিঠিতে আমার নাম নেই। গাড়িতে সেরাতে আমরা যারা যারা ছিলাম, তাদের মধ্যে শুধু আমার নামটাই নেই।
ঝট করে সোজা হলো কিশোর। আগে বলোনি কেন?
ভুলে গিয়েছিলাম। কেন লিখল না বলো তো? এত কিছু যখন জানে তত্ত্বাবধায়ক, নিশ্চয় জানে আমি কে?
তা তো জানেই। সব জানে সে। সেজন্যেই তো দুশ্চিন্তা হচ্ছে আমার।
কেন?
নিশ্চয় কোন উদ্দেশ্য আছে ওর। অকারণে করছে না এসব। আমি শিওর, কারণটা ভয়ানক কিছু।
০৯.
কফি খাওয়া শেষ হলে লম্বা একটা টেবিলের কাছে মুসাকে নিয়ে এল ক্রিসি। বলল, কাপড় খুলে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ো।
খাইছে! কাপড় খুলব?
হাসল ক্রিসি, কেন, লজ্জা লাগছে? আরে সব খুলতে হবে না। শুধু শাট আর গেঞ্জিটা খোলো। ঘাড়ের কাছটা ডলতে হবে না?
হাঁপ ছাড়ল মুসা, তাই বলুন। আমি তো ভাবলাম…
পাশের ঘরে চলে গেল ক্রিসি। একটা তোয়ালে আর দুটো শিশি নিয়ে ফিরে এল। একটা শিশিতে বড়ি, আরেকটাতে মালিশ। তোয়ালেটা একটা চেয়ারের হেলানে রেখে জিজ্ঞেস করল, রেডি?
হ্যাঁ
উপুড় হয়ে টেবিলে শুয়ে পড়তে গেল মুসা।
দাঁড়াও, শিশি খুলে দুটো বড়ি বের করল ক্রিসি। এদুটো আগে খেয়ে নাও।
পেইন কিলার?
রোগীর অত কথা জানার দরকার নেই, রহস্যময় কণ্ঠে বলে চোখ মটকে হাসল ক্রিসি। যা করতে বলছি করো।
পানি দিয়ে বড়ি দুটো গিলে টেবিলে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল মুসা।
ডান হাতের তালুতে তেল নিয়ে ডলে ডলে দুই হাতেই মিশিয়ে নিল। ক্রিসি। আস্তে করে হাত দুটো রাখল মুসার পিঠে। শিউরে উঠল মুসা। তেলের কারণে নাকি হাতের স্পর্শে, বুঝতে পারল না। তবে অস্বস্তি বোধ করতে লাগল।
ডলতে শুরু করল ক্রিসি। আস্তে আস্তে চাপ বাড়াচ্ছে।
কেমন লাগছে?
ভাল, অস্বস্তি বোধটা চলে যাচ্ছে মুসার।
তোমার মনে কোন দুশ্চিন্তা আছে, যেন কথার ছলে কথাটা বলল ক্রিসি। প্রশ্ন নয়।
উহু
স্বীকার না করলে কি হবে? আমি জানি, আছে।…পিঠ অত শক্ত কোরো না। আরও ঢিল করো।-হ্যাঁ, এখন বলো তো দেখি তোমার সমস্যাটা কি?
চুপ করে রইল মুসা। এক ধরনের ঘোর লাগছে মাথার মধ্যে। ঝিমুনি ঝিমুনি ভাব। স্বপ্নের জগতে চলে যাচ্ছে যেন সে। সত্যি, ম্যাসাজ করতে জানে বটে ক্রিসি। এত আরাম লাগছে! যেন জাদু করে ব্যথাটা কমিয়ে দিচ্ছে।