কি তদন্ত করবে?
এই তত্ত্বাবধায়ক লোকটা যদি তোমাদের কেউ না হয়ে থাকে তাহলে বাইরের লোক। অ্যাক্সিডেন্টের কথাটা সে জানে। আমার প্রথম প্রশ্ন: কি করে জানল? তোমাদের মধ্যে মুখ ফসকে কেউ বলে ফেলেছে অন্য লোকের সামনে। তা যদি না হয়ে থাকে তাহলে খুন হওয়া লোকটার সঙ্গে তত্ত্বাবধায়কের কোন সম্পর্ক ছিল। কিংবা অ্যাক্সিডেন্টটা সেরাতে ঘটতে দেখে। ফেলেছে সে।
না, দেখেনি, আমি শিওর। ওই সময় ত্রিসীমানায় কোন লোক কিংবা গাড়ি দেখা যায়নি। কেউ ছিল না।
তাহলে জানল কি করে? বেশ, তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, যেভাবেই হোক জেনেছে…
জেনেছে তাই বা কি করে বলব? চিঠিতে তো উল্লেখ করেনি। কেবল লিখেছে: তোমাদের গোপন কথাটা আমি জানি। অনেক ব্ল্যাকমেইলারই একরম আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ে কামিয়াব হয়ে যায়, সেজন্যেই বলে এমন করে।
তা হয়। কিন্তু আমাদের এই বিশেষ লোকটি আসল কথাটা জানে না এটা ভেবে ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। ও জানতেও পারে। তত্ত্বাবধায়ককে খুঁজে বের করতে হলে এখন আমাদের প্রথম কাজ হবে সেই মৃত লোকটার পরিচয়। জানা। এমনও হতে পারে লোকটাকে ড্যানি খুন করেনি। ত্রিসীমানায় আর কোন গাড়ি দেখোনি বলছ। এমনও হতে পারে আগেই তাকে খুন করে এনে রাস্তার ওপর ফেলে রেখেছিল কেউ। এবং সেই কেউটা হতে পারে এই তত্ত্বাবধায়ক। কেবল এইভাবেই তোমাদের কথা তার জানা সম্ভব।
এতক্ষণে হাসি ফুটল রবিনের মুখে। এই না হলে কিশোর পাশা। এতদিন ধরে এই সহজ কথাটা ওদের কারও মাথায় আসেনি। তাহলে এই সম্ভাবনার কথাটা আমরা গিয়ে পুলিশকে বললেই তো পারি?
না, মাথা নাড়ল কিশোর, আমি বিশ্বাস করছি বলেই যে ওরাও করবে, তা না-ও হতে পারে। করাতে হলে এর স্বপক্ষে কিছু প্রমাণ জোগাড় করা দরকার।
কি করে করবে? কোন সূত্রই তো নেই।
পুলিশ স্টেশনে গিয়ে ওদের কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারি। গত এক মাসে যত লোক নিখোঁজ হয়েছে, তাদের লিস্ট বের করব। ওদের মধ্যে থেকে খুঁজে বের করব আমাদের বিশেষ লোকটাকে। এখন ওর চেহারা-সুরৎ সম্পর্কে যতটা পারো, জানাও আমাকে। কবর দেয়ার আগে দেখেছ তো?
মাথা ঝাঁকাল, রবিন। যতটা সম্ভব নিখুঁতভাবে লোকটার চেহারার বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করুল রবিন। বয়েস সাতাশ-আটাশ, ককেশিয়ান, সুদর্শন। গায়ে। ছিল তামাটে স্পোর্টস কোট আর হালকা বাদামী স্ন্যাকস।
হু, চমৎকার, একটা পেপারওয়েট নিয়ে উল্টো করে গোল মাথাটা টেবিলে রেখে ঘোরাতে লাগল কিশোর। আচ্ছা, ড্যানি সত্যি সত্যি শহর ছেড়ে চলে যাবে তো?
তাই তো বলল।
কোথায় যাবে কাউকে কিছু বলেছে?
জানি না। মুসাকে বলতে পারে। ওর সঙ্গে খাতির বেশি।
না বললেই ভাল করবে, পেপারওয়েটটার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করল কিশোর।
কেন? মুসা মরে গেলেও কাউকে বলবে না।
জবাব না দিয়ে আচমকা উঠে দাঁড়াল কিশোর। চলো, বেরোই। পুলিশ। অফিসে যেতে হবে।
.
০৮.
রকি বীচ পুলিশ স্টেশনের কম্পিউটার রূমটা বেশ সাজানো-গোছানো। ঢোকার মুখে ডেস্কে বসে কাজ করছেন একজন অফিসার। তিন গোয়েন্দাকে চেনেন। কম্পিউটার থেকে কিছু তথ্য নিতে চায় জানাল কিশোর।
কেন, কোন কেসের তদন্ত করছ নাকি?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর, হ্যাঁ।
কি কেস?
এখনও বলার সময় আসেনি।
কিশোর পাশার স্বভাব জানা আছে অফিসারের। হেসে ঢোকার অনুমতি দিয়ে দিলেন।
ঘরটা এখন খালি। কেউ নেই। থাকার কথাও নয়। কোন কাজ না পড়লে, অর্থাৎ তথ্যের দরকার না হলে কেউ ঢোকে না এখানে। সারাক্ষণ বসে ডিউটি দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
ঢুকেই রবিনের উদ্দেশ্যে লেকচার শুরু করল কিশোর, কম্পিউটার হলো আগামী প্রজন্মের ডিটেকটিভ। সঠিক প্রোগাম আর সঠিক ডাটা সরবরাহ করতে পারলে যে কোন ধাঁধার জবাব দিয়ে দিতে পারে কম্পিউটার। রহস্য সমাধান করতে চাইলে এর চেয়ে যোগ্য গোয়েন্দা আর কোথাও পাবে না। এর জন্যে কয়েকটা প্রোগ্রামও লিখেছি আমি। আমার নিজস্ব উদ্ভাবন। কাজে লাগানোর সুযোগ খুঁজছিলাম। পেয়ে গেছি আজ। আমি যেটা ব্যবহার করব, একধরনের ফিল্টার বা ছাঁকনি বলতে পারো একে। আসল লোকটাকে ছাড়া বাকি সব বাদ দিয়ে দেবে। এটা করতে পারা খুব জরুরী। সময় বাঁচবে অনেক। প্রতিমাসে লস অ্যাঞ্জেলেসে কত লোক যে নিখোঁজ হয়, হিসেবটা শুনলে তুমি আঁতকে উঠবে।
যায় কোথায় ওরা? জানতে চাইল রবিন।
কোথায় আর যাবে? বেশির ভাগই পালায়। অসুখী স্বামী কিংবা স্ত্রী। পালিয়ে বাঁচে।
হুহ
হাসছ?
তো কি করব? খুনের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই।
একেবারেই নেই তা বলা যাবে না। এদের কেউ কেউ খুনও হয়ে যায়। এখানকার কেসফাইলগুলো যদি সব পড়তে তাহলে হাসি মুছে যেত মুখ থেকে। মনে হত দুনিয়াটা বড় বিশ্রী জায়গা। এখানে হাসির কিছু নেই।
তোমার লেকচারটা একটু থামাও না দয়া করে।
কেন, ভাল লাগছে না?
মানুষের চরিত্র নিয়ে আলোচনা করতে আমার ভাল লাগে না।
বলো কি! মানুষ নিয়ে গবেষণা করাটাই তো সবচেয়ে মজার। এত রহস্যময় আর বিচিত্র প্রাণী সারা দুনিয়ায় আর একটাও খুঁজে পাবে না তুমি। মানুষ যে কি করে আর করে নাঃ অত
দোহাই তোমার, কিশোর, হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গিতে দুহাত তুলল রবিন, কচকচি ভাল্লাগছে না! যা করতে এসেছ, করো।
চিন্তিত ভঙ্গিতে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে আনমনে মাথা দোলাল কিশোর, হু, তোমার মনমেজাজ এখন খুব খারাপ। দুশ্চিন্তায় ভরা। এসব কথা এখন তোমার ভাল লাগবে না।