——————-
* আজ থেকে ৩৬১ পুরুষ আগেকার কথা। তখন ভারত, ইরান এবং ইউরোপের জাতিগুলি ট্রাইব স্তরে ছিল। সেটা ছিল মানব সমাজের প্রারম্ভিক কাল।
০২. দিবা (স্থান : মধ্য ভোলগা তট ।। কাল : ৩৫০০ খৃষ্টপূর্ব)
দিবা (স্থান : মধ্য ভোলগা তট ।। কাল : ৩৫০০ খৃষ্টপূর্ব)
দেশ মধ্য ভোলগা তট।।
‘‘দিবা! রোদ বড় কড়া, দ্যাখ তোর সারা গা ঘামে ভিজে গেছে। আয়, এই শিলা খণ্ডের ওপর বসি।’’
‘‘বেশ তাই হোক, শুরশ্রবা-অ’’ এই বলে দিবা সুরশ্রাবার সঙ্গে এক বিশাল পাইন গাছের ছায়ায় শিলা খণ্ডের ওপর বসল।
গ্রীষ্মকাল, সময় মধ্যহ্ন। হরিণের পেছনে এত ছুটোছুটির পর দিবার ললাটে অরুণাভ মুক্তার মত স্বেদবিন্দু ঝরবে—তাতে আর আশ্চর্য কী? কিন্তু েএ স্থানটি এমনই যে ক্লান্তি দূর হতে মোটেই সময় লাগে না। পাহাড়ের নীচ থেকে মাথা পর্যন্ত শ্যামল আস্তরণে আচ্ছাদিত। বিশাল পাইন বৃক্থ আপন শাখা ও সূচালো পত্রাবলী বিস্তার করে সূর্যকিরণের গতিরোধ করছে, নিচে স্থানে স্থানে বিচিত্র বনৌষধি, লতাগুল্ম ও নানবিধ গাছ-গাছড়া পুষ্পস্মভারে মুকুলিত হয়ে আছে।ক্ষণকাল বিশ্রামের পর তরুণ-তরুণীর শ্রান্তি বিদূরিত হল। চারিদিকে রঙ বেরঙ-এর ফুল, অপূর্ব মধুর গন্ধ তাদের মন হরণ করছিল। তরুণ যুবকটি আপন ধনুর্বাণ ও পাথরের কুঠার শিলা খণ্ডের ওপর রাখল, ক্ষণকাল পরে পার্শ্বস্তিত কলকল শব্দ প্রবাহিত স্ফটিকস্বচ্ছ জলস্্রোতের পাশে এসে সাদা বেগূনী ও লাল রঙ-এর ফুল আহরণ করতে লাগল। তরুণী আপন অস্ত্রাদি রেখে তার দীর্ঘ সোনালী চুলে হাত দিয়ে অনুভব করল যে চুলের গোড়া তখন ভিজে। একবার নীচের দিকে তাকিয়ে প্রবাহিতা ভোলগার প্রশান্ত রুপ দেখে নিল।পাখীর কলগুঞ্জনে আকৃষ্ট হয়ে চোখ ফেরাতে গিয়ে দৃষ্টি আবদ্ধ হল পুষ্পচয়নরত তরুণের প্রতি। যুবকের চুলও সোনালী, তবু তরুণী তার নিজের কেশরাশির সঙ্গে তুলনা করতে চাইল না। সে জানত তার নিজের কেশদাম অনেক সুন্দর। তরুণের মুখমণ্ডল ঘণ পিঙ্গল বর্ণ গুম্ফ শুশ্রুতে ঢাকা, তার উপরে নাসিকা কপোল ও ললাটের অরুনিমা দেখা যাচ্ছিল্। তরুণীর দৃষ্টি এবার পুরুষটির পুষ্ট রোমশ বাহুর ওপর পড়ল। তার মনে পড়ে গেল, একদিন সুরশ্রবা তার শক্ত হাত দিয়ে পাথরের কুঠারের ঘায়ে হিংস্র শূকরের কোমর ভেঙে দিয়েছিল। সেদিন মনে হয়েছিল পুরুষের হাত কতই না কর্কশ ও কঠিন, আর আজ পুষ্পচয়নরত সেই বাহুকেই মনে হচ্ছে কেমন কোমল। তবে এ কথা ঠিকই যে, বাহুর শক্ত পেশী ও তার সঞ্চালনে স্ফীত মনিবন্ধের শিরা আজও সেই শক্তির পরিচয় দিচ্ছে। একবার তরুণীর মনে হল, উঠে গিয়ে বাহুযুগলকে চুম্বন করে। হ্যাঁ, এই মূহুর্তে তা খুব প্রিয় মনে হচ্ছিল। এইবার যুবকের উরুদ্বয়ের দিকে দিবার নজর পড়ল।প্রতি পদক্ষেপে গতির তরঙ্গ লীলায়িত হচ্ছিল। একেবারেই চর্বিহীন পেশীবহুল উরু। শক্তিমান জঙ্ঘা এবং ক্ষীণ কটি দিবার কাছে অতি লোভনীয় মনে হচ্ছিল। সুর অনেকবারই দিবার ভালবাসা পাবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে—অবশ্য মুখে নয় ভাবে ভঙ্গীতে; নাচের কলা-কৌশল দেখিয়ে দিবাকে খুশী করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তার ‘জনের’ অন্য যুবকেরা যখন দিবার সঙ্গে নাচের সুযোগ পেয়েছে, যখন হয়ত দিবার অধর চু্ম্বনের অনুমতি পেয়েছে কিম্বা বহুবার হয়ত তাদের অঙ্কশায়িনী হয়েছে থখন হতভাগ্য সুর একটি চুম্বন, একটি আলিঙ্গন—এমন কি নৃত্যের সময় একবার হাতে হাত ধরবার সুযোগও পায়নি।সুর অঞ্জলি-ভরা ফুল নিয়ে দিবার দিকে এগিয়ে আসছিল।কি অপূর্বই না দেখাচ্ছিল। তার দিকে তাকিয়ে এখানে বসে আজ দিবার মনে ক্ষোভ জেগে উঠল। কেন সে এতদিন সুরের কথা ভাবেনি । অবশ্য এর জন্য দিবাকে দোষ দেয়া যায় না—অপরাধ যদি কারুর থাকে তা সুরের। তার মুখচোরা লজ্জা এতদিন তার মুখ ফোটাতে দেয়নি। সুর কাছে দিবা হাসিমুখে বলল,‘‘কি সুন্দর ফুলগুলো, কি সুমিষ্ট এ গন্ধ!’’
উপলখণ্ডের ওপর ফুলগুলো রেখে সুর বলল,‘‘তোমার ওই সোনালী চুলে এই ফুলগুলো গুঁজে দিলে তবেই এর সৌন্দর্য পরিপূর্ণ হবে।’’
‘‘আচ্ছা সুর!সত্যিই কি আমার জন্যে এই ফুলগুলি তুমি এনেছ?’’
‘‘হ্যা দিবা। এই ফুলগুলো দেখে তোমার মুখের দিকে তাকালাম—মনে পড়ল জলপরীদের কথা।’’
‘‘জলপরী?’’
‘‘হ্যাঁ! জলপরীরা খুবই ভালো। তারা খুশী হলে সমস্ত মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করে—আর যদি রুষ্ট হয় প্রাণ নিতেও ছাড়ে না।’’
‘‘আমাকে কি ধরণের জলপরী মনো হয়, সুর!’’
‘‘রুদ্রাণী নয়।’’
‘‘কিন্তু, আমি তো তোমার ওপর কখনো সোহাগ দেইনি।’’ দিবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ করে গেল।
ক্ষণকাল পরে সুরশ্রবা বলল, ‘‘না দিবা!তুমি আমার ওপর কখনও রুষ্টা হওনি।
তোমার মনে পড়ে কি আমাদের ছেলেবেলার কথা?’’
‘‘তখনো তুমি কিন্তু এমনি লাজুক ছিলে।’’
‘‘তবে তুমি আমার ওপর কখনও বিরুপ হওনি?’
‘তখন আমি তোমাকে নিজে থেকেই তোমাকে চুমু খেতাম।’’
‘‘কিন্তু যখন আমার যৌবনের উন্মেষ হল, যখন সারা ‘জন’-এর তরুণকুল আমাকে পাবার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠল সেই সময় থেকে আমি তোমার কথা ভুলে গেলাম।’’
‘‘তোমার কোনো দোষ ছিল না দিবা।’’
‘‘তবে দোষটা কার?’’
‘‘আমারই। আমাদের ‘জন’-এর ছেলেরা চুমু খেতে চাইলে তুমি তা দিয়েছ,তারা যখন তোমার প্রেমালিঙ্গন কামনা করেছে তাও দিয়েছ। আমাদের সুন্দর সবল যে কোন যুবক মৃগয়ায় শৌর্য কিংবা নাচে কুশলতা দেখেয়েছে—তুমি কথনো তাদের নিরাশ করনি।’’