হাতঘড়ি উঠে যাব উঠে যাব করছে। তাদের মৃত্যুঘণ্টা বাজছে। সময় দেখার জন্যে এখন আর হাতঘড়ির প্রয়োজন নেই। হাতে মোবাইল আছে। সেখানে সময় দেখা যায়। শুধু সময় না, কী বার, কত তারিখ কোন শতাব্দী সব।
একসময় হাত ঘড়ির কী বাবুয়ানিই না ছিল! রেডিওর সঙ্গে সেই ঘড়ির টাইম মিলানো হতো। হাতঘড়ির টাইম রেডিও টাইম কি না তা জানা আবশ্যক ছিল। জামাইদের উপহার সামগ্রীর মধ্যে অবশ্যই হাতঘড়ি থাকতে হতো।
মৃত্যুঘণ্টা বাজছে এমন কিছু জিনিসপত্রের তালিকা আমি তৈরি করেছি। পাঠকরা মিলিয়ে দেখতে পারেন।
১. শিলপাটা
গুঁড়া মসলা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আদা বাটা, রসুন বাটা পাওয়া যাচ্ছে। মসলা গুঁড়া করার মেশিন সস্তায় কিনতেও পাওয়া যাচ্ছে, শিলপাটার কী দরকার? এই বস্তু যেহেতু চলে যাচ্ছে–চলে যাবে শিলপাটা ধার করাবার কর্মীরা। ক্লান্ত দুপুরে ঘুঘু পাখির ডাকের মতো তাদের গলা শোনা যাবে না। জানালার কাছে এসে কেউ বলবে না, শিলপাটা ধার করাইবেন?
২. বই
বাসস্থান ছোট হয়ে আসছে। বই রাখার জায়গা নেই। বইয়ের প্রয়োজনও তেমন নেই। ইন্টারনেট চলে এসেছে। যে-কোনো প্রয়োজনীয় বই ইন্টারনেটে পড়া যাবে। একটা সময় ছিল যখন মধ্যবিত্তের স্বপ্নে সবসময় ছোট্ট একটা লাইব্রেরি থাকত। সেই লাইব্রেরির দর্শনীয় সংগ্রহ–এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটেনিকা। অতি যত্নে ঝাড়পোছ করে রাখা এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটেনিকা ছিল রুচি এবং বিদ্যানুরাগের শ্রেষ্ঠ নির্দশন। (যাদের সংগ্রহে এই জিনিস আছে, তাদের কেউ তার পাতা উল্টে কখনো দেখেছেন এমন অপবাদ দেওয়া ঠিক হবে না।)
বিত্তবানদের বাড়িতে জায়গার অভাব নেই। তবে তাঁদের বইয়ের লাইব্রেরির জায়গা দখল করে নিয়েছে হোম থিয়েটার নামক এক বস্তু।
.
হারিয়ে যাওয়া জিনিসের তালিকা বড় করতে ইচ্ছা করছে না। যা হারিয়ে যাবার তা হারিয়ে যাবে। এদের জন্যে শোকগাথার কোনো প্রয়োজন নেই। আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম! বলে বিলাপ সঙ্গীত অর্থহীন।
পৃথিবী বদলাবে এটাই তো স্বাভাবিক। হারিয়ে যাওয়া সময় নিয়ে আমরা হা হুতাশ করব এটাও স্বাভাবিক।
তাহলে স্লাইড রুল নিয়ে লেখাটা কেন লিখলাম? সেদিন পুরনো ট্রাংক ঘাটতে গিয়ে আমার স্লাইড রুলটা খুঁজে পেলাম। একচল্লিশ বছর আগে আশি টাকা দিয়ে এটা কিনে ভেবেছিলাম বিজ্ঞানের কী অপূর্ব একটা আবিষ্কার এখন আমার হাতে। আমি কত না ভাগ্যবান!