আমি বললাম, এই বিষয়টা নিয়ে কী করা যায় তা আমরা পারিবারিক মিটিং বসিয়ে ঠিক করব। আপনি এ নিয়ে একেবারেই চিন্তা করবেন না।
Book of Useless Information পড়ে দেখি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের এই ভীতি ছিল। প্রবলভাবেই ছিল। তিনি উইল করে গিয়েছিলেন যে মৃত্যুর পরে পরেই তাকে কবর দেওয়া যাবে না। তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে তিনি আসলেই মারা গেছেন কিনা।
বইটি থেকে কিছু মজার তথ্য জানাচ্ছি।
প্রাণীজগৎ
ক. পৃথিবীর ৮০ ভাগ প্রাণীর পা ছয়টি।
খ. ব্যাঙ তরল খাদ্য এবং নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস তাদের চামড়া দিয়ে নেয়। মুখে না।
গ. ছোট্ট একটা ব্যাঙ হজম করতে একটা সাপের ৫২ ঘণ্টা সময় লাগে।
ঘ. মানুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গরিলাদের ক্ষেত্রেও কাজ করে।
ঙ. একটা জোকের মস্তিষ্কের সংখ্যা হলো বত্রিশ।
চ. পোলিও রোগের ধরন বুঝার জন্যে ত্রিশ হাজার বাঁদরের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছিল।
খাবারদাবার
ক. আদি কোকাকোলার রঙ ছিল সবুজ।
খ. কেচাপ (Ketchup) এর জন্ম চীন দেশে।
গ. পটেটো চিপস প্রথম তৈরি হয় আমেরিকার লুসিয়ানাতে, ১৮৫৩ সনে।
ঘ. পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচের নাম Habanero।
পাঠক কি হাই তুলতে শুরু করেছেন? আমার বড় সমস্যা হলো আমার যা ভালো লাগে তা সবাইকে জানাতে ইচ্ছা করে। একটা সময় ছিল প্রতি পূর্ণিমায় একদল বন্ধুবান্ধব নিয়ে নুহাশ পল্লীতে পূর্ণিমা দেখতে যেতাম। বন্ধুরা যে হা করে পূর্ণিমা দেখত তা-না। তারা তাস খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ত। আকাশে চাঁদ উঠেছে কি না তারচেয়ে ডিনারে কী আয়োজন হয়েছে–এই সংবাদ সংগ্রহে তাদের উৎসাহী বলে মনে হতো।
আকাশের তারা দেখার জন্যে আমার কাছে খুব দামি দুটা টেলিস্কোপ আছে। এর একটি পৃথিবীর ঘূর্ণনের সঙ্গে তাল রেখে নিজেও ঘুরে যেন Focus নষ্ট না হয়। এখন পর্যন্ত আমার কোনো বন্ধুকে বলতে শুনি নি যে, আজ আকাশের তারা দেখা যাক!
অ্যাসিমভের বুক অব ফ্যাক্ট দেখে আমার মনে পড়ল কলেজজীবনের কথা। তখন মোটা একটা চামড়ায় বাঁধানো খাতা কিনেছিলাম। খাতা ভর্তি করে ছিলাম নানান ধরনের তথ্য দিয়ে। খাতাটা এখন সঙ্গে থাকলে কাজে আসত। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবার লাইব্রেরির সমস্ত বইপত্রের সঙ্গে খাতাটাও হারিয়ে গেছে। খাতায় টুকে রাখা একটি তথ্য দেখি নোয়েল বোথাম সাহেবের বইতেও আছে। তথ্যটা হলো—
Twinkle Twinkle Liltle Star
How I Wonder What You are…
এই নার্সারি রাইমটি সঙ্গীতের মাস্টার মোৎসার্ট পাঁচ বছর বয়সে রচনা করেছিলেন।
সব বাদ দিয়ে এই তথ্যটি মনে রাখার একটা কারণও আছে। কারণটা হলো লাল কালির একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে আমি লিখেছিলাম, তথ্যটি বিশ্বাসযোগ্য না। মোৎসার্ট ছিলেন জার্মান। পাঁচ বছর বয়সে তাঁর ইংরেজি জানার কথা না।
নোয়েল বোথাম সাহেবের বইটিই বা অগ্রাহ্য করি কীভাবে? বইটি Time পত্রিকার Best seller list-এ অনেকদিন ছিল।
বোথাম সাহেব ঢাকার একটি তথ্যও বইতে দিয়েছেন। তিনি অবশ্যি ঢাকাকে India-র একটি শহর ধরে নিয়েছেন। বইয়ে লেখা Decca, India,
তথ্যটা হলো—
ঢাকা শহরের ভিক্ষুকরা কনভেনশন করে সিদ্ধান্ত নেয় পনেরো পয়সার নিচে তারা ভিক্ষা নেবে না।
.
বোথাম সাহেবের বইয়ের সর্বশেষ তথ্যটি আমার পছন্দ হয়েছে। তিনি বলছেন, যত Statistics প্রকাশিত হয় তার ৯৭ ভাগই বানানো।
কথা হচ্ছে তার নিজের বইটিও Statistics-এ ভর্তি। তাহলে কি…
মা
আমেরিকানরা রসিকতা করতে পছন্দ করে। তাদের রসিকতার বিষয় শাশুড়ি, মা না। আমাদের দেশে ব্যক্তি নিয়ে রসিকতা শালা-দুলাভাই, দাদা-নাতিতে সীমাবদ্ধ। মা-শাশুড়ি কিংবা বাবা-শুশুর কখনো না।
আমার মা রসিক মানুষ। তিনি তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে রসিকতা করেন। কাজেই তাঁকে নিয়ে তার ছেলেমেয়েদেরও রসিকতা করার অধিকার আছে। মার রসিকতার নমুনা দেই।
একবার এক অপরিচিত মহিলা মাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনা ছেলে কয়টি?
মা বললেন, তিনটি।
বড় ছেলে কী করে?
মা বললেন, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার পিএইচডি ডিগ্রি আছে কেমিষ্ট্রিতে।
ভদ্রমহিলা : মাশাল্লাহু। মেজোটি কী করে?
মা : সে সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার একটা পিএইচডি ডিগ্রি আছে ফিজিক্সে।
ভদ্রমহিলা : মাশাল্লাহ। তিন নম্বর ছেলেটি কী করে।
মা : সে উন্মাদ।
ভদ্রমহিলা : আহারে, কী সর্বনাশ! সবচেয়ে ছোট টা উন্মাদ।
মা : সে উন্মাদ না। সে উন্মাদ নামে একটা পত্রিকা বের করে।
ভদ্রমহিলা হতভম্ব। তার সঙ্গে রসিকতা করায় খানিকটা রাগ। মা নির্বিকার।
আমি তখন অচিন রাগিনী নামের তিন খণ্ডের একটা নাটক বানিয়েছি। মা আমার বাসায় বেড়াতে এসেছেন। নাটক আমার সঙ্গে দেখবেন। তিনি আগ্রহ নিয়ে নাটক দেখলেন। আমি বললাম, কেমন লাগল?
মা বললেন, তোর নাটক দেখতে দেখতে একটা কথা মনে হলো। তোর বাবা আগেভাগে মারা গিয়ে তোর জন্যে সুবিধা করে দিয়েছে।
আমি বললাম, কী রকম?
মা বললেন, সে ছিল নাটকপাগল। তোর নাটকে আসাদুজ্জামান নূর যে পার্টটা করেছে, এটা সে করার জন্যে তোকে বলত। তুই পার্ট তাকে দিতি না। এই নিয়ে পিতাপুত্রের মন কষাকষি। সমস্যা না? আগেভাগে মারা যাওয়ায় তুই বিরাট বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছিস।