হিমুদের যে মিসির আলির বই পড়া নিষিদ্ধ এই তথ্য আমি নিজেও জানতাম না। নতুন জ্ঞান পেয়ে ভালো লাগল।
মেয়ে হিমুদের একজন এসে বলল, স্যার, সোনার রঙ তো হলুদ। আমরা মেয়ে হিমুরা কি সোনার গয়না পরতে পারি?
আমি বললাম, অবশ্যই পরতে পার।
হলুদ শাড়ি পরলে মনে হয় কোনো গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। এর কী করব?
হলুদ পাঞ্জাবি পরলে হয় না?
না হয় না। তাহলে ছেলে হিমুদের সঙ্গে আমাদের তফাত কী থাকল?
টেলিফোন কোম্পানি হিমুদের জন্যে কিছু গিফটের ব্যবস্থা করেছিল। তার মধ্যে একটা করে মোবাইল ফোনের সেট ছিল। হিমুরা সবাই আগ্রহ করে মোবাইল সেট নিল, যদিও হিমুদের বৈষয়িক আসক্তি থেকে মুক্ত থাকার কথা।
দুপুর আড়াইটায় খাবার দেয়া হলো। হলুদ রঙের খাবার– খিচুড়ি। আমি প্রচণ্ড মাথা ধরেছে এই অজুহাতে হিমুদের কাছ থেকে বিদায় চাইলাম।
তারা বলল, গুরু রেস্ট নিন। আপনার রেস্টের প্রয়োজন আছে।
.
খুব হালকাভাবে লেখাটা লিখলাম। লেখাটা আরেকটু গুরুত্বের সঙ্গে লেখা উচিত ছিল। পৃথিবীতে কাল্টের (Cult) বিষয়টি প্রবলভাবেই আছে। কিছু মানুষের জিনের ভেতরই হয়তোবা Cult সদস্য হবার বিষয় থাকে। গুরুর নির্দেশে এরা করতে পারে না এমন কাজ নেই।
কাল্টের সংজ্ঞা হচ্ছে, ক্ষুদ্র একদল মানুষ যারা গুরুর পেছনে সীমাহীন আবেগে একত্রিত হয়। শ্রীলঙ্কার প্রভাকরণকে এক অর্থে Cult গুরু বলা চলে। তালেবানরাও তাই। জাপানে এক প্রায় অন্ধ Cult গুরুর (Shoko Asahara) আদেশে বহু মানুষকে Serin গ্যাস দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনা ১৯৯৫ সনের। এই গুরুর দলের নাম Aum Shinikyo দলের সদস্যরা গুরুকে দেখত শারের
জিম জোনস (James Warrarn Jim Jones)-এর ঘটনা তো সবার জানা। ১৭ নভেম্বর ১৯৭৮ সনে তার কারণে ৯০০ মানুষ স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করে।
হিমু নামের যে গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে এরা অবশ্যই নির্বিষ, ভেজিটেবল টাইপ। তবে এদেরকে কখনোই একত্রিত হতে দেয়া যাবে না। সব কাল্ট সদস্য একসময় নির্বিষ ভেজিটেবল থাকেন।
.
পাদটিকা
রাশিয়ার মস্কো শহরে একটি হিমু ক্লাব হতে যাচ্ছে। ক্লাবের সদস্যরা বাঙালি না, রাশিয়ান। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের ছাত্রছাত্রী। ওরা হিমুকে নিয়ে লেখা কয়েকটি বই রুশ ভাষায় অনুবাদ করেছে। বইগুলির প্রকাশনা উৎসবেই ক্লাব তৈরির ঘোষণা দেয়া হবে। উৎসবে আমন্ত্রিত সব অতিথিনে হলুদ রঙের কিছু পরতে হবে। অতিথিদের বড় অংশ ডিপ্লোমেট। তাদের জন্যে ৫০টা হলুদ টাই কেনা হয়েছে।
.
সূত্র : বাংলাদেশে রুশ দূতাবাসের এক তরুন কর্মকর্তা, পাভেল। সে নিজেও নাকি একজন হিমু।
প্রীতি-উপহার
বাসায় হঠাৎ এক পালকি উপস্থিত। সুন্দর করে সাজানো কাগজের রঙিন পালকি। পালকির দরজা খুলে দাওয়াতের চিঠি উদ্ধার করলাম, অমুক আপুর গায়েহলুদ। আপনি সবাইকে নিয়ে আসবেন। ইত্যাদি।
সবকিছু বদলে দেবার জন্যে চারদিকে ভালো হৈচৈ শুরু হয়েছে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকেও দেখলাম নিজেকে বদলানোর জন্যে কাগজপত্রে দস্তখত করছেন। লোকমুখে শুনেছি তার বাসার কাজের ছেলেকে তিনি এখন দুবেলা পড়ান। কাজের ছেলে চাকরি ছেড়ে পালিয়ে যাবার ধান্দায় আছে। তাকে ঘর থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। গ্রাজুয়েট হয়ে বের হবে, তার আগে না।
দেশ অবশ্যি নিজের নিয়মেই বদলাচ্ছে। পালকির ভেতরে নিমন্ত্রণপত্র তার প্রমাণ। নিমন্ত্রণের ধরন পাল্টাচ্ছে। বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান পাল্টাচ্ছে। আমার ছোট ভাই আহসান হাবীবের কাছে শুনলাম, সে মাথায় টুপি পরে কোনো এক কুলখানিতে গিয়েছিল। সেখানে মিলাদের পরিবর্তে হঠাৎ করে মৃত ব্যক্তির প্রিয় গানের আসর বসল। আহসান হাবীব চট করে টুপি পাঞ্জাবির পকেটে লুকিয়ে ফেলল এবং গানের তালে তালে মাথা দোলাতে লাগল। আহসান হাবীব যেহেতু উন্মাদ নামক পত্রিকা চালায়, তার সব কথা বিশ্বাসযোগ্য না।
বিয়ের আচার-অনুষ্ঠান কীভাবে বদলাচ্ছে সেই নিয়ে কিছুক্ষণ গল্প করি।
আমার শৈশবে বিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অনুসঙ্গ ছিল প্রীতি-উপহার নামক এক যন্ত্রণা। কেন যন্ত্রণা বলছি তা ব্যাখ্যা করব, তবে তার আগে প্রীতি-উপহার বিষয়ে বলি। বর-কনেকে আশীর্বাদ এবং বরণসূচক ছড়ার সংকলনই প্রীতি-উপহার। সস্তা কোনো প্রেস থেকে এই জিনিস ছাপা হয়ে আসত। শুরুতে ছবি–মেহেদিপরা একটা হাত পুরুষের গরিলাটাইপ রোমশ হাতকে হ্যান্ডসেক করছে। কিংবা একটি কিশোরী পরী ফুলের মালা হাতে আকাশে উড়ছে। প্রীতি-উপহালের শুরুটা হয় এইভাবে–
দোয়া মাগি তোমার হাতে ওগো দয়াময়
দুইটি প্রাণের মিলন যেন পরম সুখের হয়।
এখন বলি কেন প্রীতি-উপহারকে আমি যন্ত্রণা বলছি। আমার বাবা তাঁর সমস্ত আত্মীয়স্বজনের বিয়েতে প্রীতি-উপহার দেয়া অবশ্যকর্তব্য মনে করতেন। রাত জেগে নিজেই লিখতেন। বিয়ের আসরে এই কাব্য আমাকেই পাঠ করে শুনাতে হতো। পাঠ শেষে জনে জনে তা বিলি করা হতো। তারপর আমাকে প্রীতি উপহার নিয়ে পাঠানো হলো মেয়েমহলে। কনেকে ঘিরে থাকত তার বান্ধবীরা। তারা তখন আমাকে নিয়ে নানান রঙ্গ-রসিকতা করত। আমি যথেষ্ট আবেগ দিয়ে প্রীতি-উপহার পড়ছি, এর মধ্যে কেউ একজন বলে বসল, এই বান্দর, চুপ কর। মেয়েরা সবাই হেসে এ ওর গায়ে গড়িয়ে পড়। আমি চোখ মুছতে মুছতে বিয়ের আসরে ফিরতাম।