.
মজাদার ঘটনা
ছবির বিষয়ে যখনই কোনো সাংবাদিক রিপোর্ট করতে যান তখন তিনি গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করেন, ছবিতে মজাদার কী ঘটনা ঘটেছে? আমাকে এ রকম কোনো প্রশ্ন এখনো কেউ করে নি। আগ বাড়িয়ে নিজেই বলছি।
১
প্রাচীন এক বটগাছের নিচে শুটিং হচ্ছে। মা (মুনমুন) এবং মেয়ে (শাওন) বটগাছের নিচে বসে কথা বলছে। মাস্টার শট নেয়া হয়ে গেছে। হঠাৎ ক্যামেরাম্যান মাহফুজ আমাকে ইশারায় একটা জিনিস দেখালেন। আমি হতভম্ব হয়ে দেখি দুই অভিনেত্রীর মাথার চার-পাঁচ ফুট ওপরে বটগাছের এক গর্ত থেকে একটি সাপ উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে। তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে যে-কোনো সময় সে গাছ বেয়ে নিচে নেমে আসবে এবং দুই অভিনেত্রীর সঙ্গে যুক্ত হবে।
আমি ইশারায় মাহফুজকে বললাম, শুটিং বন্ধ করার দরকার নেই। শুটিং চলুক। সাপ যদি সত্যি নেমে আসে তখন দেখা যাবে। এই একটি দৃশ্যে আমি দুই অভিনেত্রী কী অভিনয় করছে তা দেখি নি, সারাক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম সাপের দিকে।
২
এই ছবিতে অনেকগুলি গান আছে। গানের কোরিওগ্রাফিতে সাহায্য করার জন্যে যে ছেলেটি আছে তার নাম রহিম। কেউ তাকে নাম জিজ্ঞেস করলে সে অবশ্যি রহিম বলে না, বলে রয়। রহিম নামে মনে হয় তার মর্যাদা ঠিকমতো প্রকাশ পায় না। যাই হোক, একদিন দেখি সে ব্যস্ত হয়ে নিষাদকে নাচ দেখাচ্ছে। নিষাদের সামনে মুদ্রা করছে, কোমর দোলাচ্ছে। আমি বললাম, রয় শোন। আমার ছেলে বড় হয়ে গোঁফ কামিয়ে পুরুষ নৃত্যশিল্পী হবে এটা আমার ইচ্ছা না। তুমি এই কাজটা করবে না।
রয় বলল, জি আচ্ছা স্যার।
সে মুখে বলল, জি আচ্ছা কিন্তু তার কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে লাগল। নিষাদ মনে হয় ব্যাপারটায় মজা পেল। রয়কে দেখলেই সে হাত নাড়ায় এবং কোমর দোলানোর চেষ্টা করে।
শুটিং অনেক দিন হলো শেষ হয়েছে, রয়ের ভূত নিষাদের ঘাড় থেকে নামে নি। কোথাও গান হলেই সে হাত নাড়ে এবং কোমর দোলানোর চেষ্টা করতে গিয়ে আছাড় খায়।
.
৩
আমরা তিনটা জেনারেটার নিয়ে গিয়েছিলাম। জেনারেটারের একজন এসে বলল, তিনটা জেনারেটারের একটাতে ভূতের আছড় হয়েছে। এখন কী করা?
আমি চোখ কপালে তুলে বললাম, জেনারেটরে ভূতের আছড় মানে?
সে বলল, যে-ই জেনারেটারের আশেপাশে যাচ্ছে সে-ই আহত হচ্ছে। ছয় থেকে সাতজন বিনা কারণে আহত।
আর কিছু?
ক্যামেরা যখন বন্ধ থাকে তখন ভোল্টেজ ঠিক থাকে কিন্তু ক্যামেরা চালু করলেই ভোল্টেজ আপ ডাউন হয়।
ভূত তাড়ানোর কী ব্যবস্থা করতে হবে সেটা বলো।
মুনসি মওলানা এনে ফুঁ দেওয়াতে হবে।
মুনসি মাওলানা খবর দিয়ে আনো।
.
হযরত শাহজালাল (রাঃ) সাহেবের মাজার জিয়ারত
আমরা যেখানে শুটিং করছি সেখান থেকে হযরত শাহজালাল (রাঃ) সাহেবের দরগা এক-দেড় ঘণ্টার পথ। একদিন শুটিং বন্ধ রেখে দলবেঁধে রওনা হলাম মাজার জিয়ারতে। নিষাদকে পায়জামা-পাঞ্জাবি এবং টুপি পরানো হলো। তাকেও যথেষ্ট উৎসাহী মনে হলো।
নিষাদকে কোলে নিয়ে মাজার শরীফের দিকে যাচ্ছি, আমাকে জানানো হলো–শিশুদের প্রবেশ নিষেধ।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, কেন?
মেয়েশিশু তো কোনোক্রমেই ঢুকতে পারবে না। পুরুষশিশুরাও নিজে নিজে হাঁটতে না পারা পর্যন্ত ঢুকতে পারবে না।
নিষাদ হাঁটার পরীক্ষা দিল। তিন-চার কদম নিজে হেঁটে থপ করে পড়ে গেল।
নিতান্ত অনিচ্ছায় নিষাদকে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেয়া হলো। আমি ভাবছি, হযরত শাহজালাল (রাঃ) কি শিশুদের বিষয়ে এই নিষেধাজ্ঞা নিজে দিয়ে গেছেন? না-কি দরগার লোকজন এইসব অদ্ভুত নিয়ম বানিয়েছেন? আমাদের নবীজি যখন নামাজ পড়তেন তখন তাঁর গলা ধরে ঝুলত তাঁর নাতিরা।
হযরত শাহজালাল (রাঃ) সাহেবের মতো মহামানব মেয়েশিশু এবং পুরুষশিশুর মধ্যে ভেদাভেদ করবেন? তাদের কাছে আসতে দেবেন না? দরগার সেবায়েতরা একটি তথ্য ভুলে গেলেও হযরত শাহজালাল (রঃ) অবশ্যই কখনো ভুলেন না যে, তাঁরও জন্ম হয়েছিল এক মায়েরই গর্ভে। মেয়েরা কেন অচ্ছুৎ হবে?
.
পাদটিকা
ছবি শেষ। আমি সাড়ে তিন বছর বয়েসী অভিনেতা ওয়াফাকে বললাম, ওয়াফা! সবচে ভালো অভিনয় কে করেছে?
ওয়াফা বলল, আমি।
আমার আরেক শিশুশিল্পী মালিহাকে (বয়স চার) জিজ্ঞাসা করলাম, ভেবে চিন্তে বলো। এই ছবিতে সবচে ভালো অভিনয় কে করেছে?
মালিহা অনেকক্ষণ চিন্তা করে বলল, স্যার আপনি।
.
একজনকে বিশেষ ধন্যবাদ
সেই একজন শাওন। বিশেষ ধন্যবাদের কারণ ব্যাখ্যা করি। আমার আছে জল ছবির কোরিওগ্রাফারের নাম রতন। রতন ছবি শুরু হবার সাতদিন আগে জানাল সে কাজ করবে না। আমি শাওনকে সেই দায়িত্ব দিলাম।
সে বলল, আমি যখন অভিনয় করি তখন অন্যকিছু নিয়ে চিন্তা করতে পারি না।
আমি বললাম, পারতে হবে।
কোরিওগ্রাফির কাজটি সে করেছে। দর্শক দেখবেন কত ভালো করেছে।
একই সঙ্গে মীমকে অভিনয় করার প্রতিটি বিষয় ধৈর্য ধরে দেখিয়েও দিয়েছে। তার একটাই কথা, মীম খারাপ করলে সে একাই সবাইকে টেনে নিচে নামিয়ে আনবে।
উন্মাদ-কথা
সন্তানদের নাম সাধারণত বাবা-মা কিংবা অন্য গুরুজনরা রাখেন। আমার সর্বকনিষ্ঠ ভাই আহসান হাবীবের নাম আমার রাখা। বাবা তার কনিষ্ঠ পুত্রের জন্যে নাম খুঁজছিলেন। আমার এক বন্ধুর নাম আহসান হাবীব। দুর্দান্ত ভালো ছেলে (এখন আমেরিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকনমিক্সের অধ্যাপক এবং বিশিষ্ট তবলাবাদক। বাঙালিদের গানের অনুষ্ঠান তার তবলা বাদন না হলে জমে না।) আমি বাবাকে বললাম, আহসান হাবীব নামটা কি রাখবেন? আমার বন্ধু এবং খুব ভালো ছেলে।