শুধু চিকিৎসা নয়, চিকিৎসা-সংক্রান্ত সব ব্যাপারই আমার কাছে খুব রহস্যময় মনে হয়। আমার বড় মেয়েটির জন্ডিসের মতো হয়েছে। ডাক্তার বললেন, বিলরুবিন টেস্ট করানো দরকার। এক জায়গায় না করিয়ে দুজায়গায় করাবেন। করলাম দুজায়গায়। এক জায়গায় বলল, জন্ডিস নেই। অন্য জায়গায় বিলরুবিন নাইন পয়েন্ট ফাইভ। যার মানে রোগের কঠিন অবস্থা। ডাক্তার বললেন, থার্ড এক পার্টিকে দিন। দেখি ওরা কী বলে?
আমি থার্ড পার্টিকে দিলাম না। কী দরকার? জন্ডিসের এক মালা এনে গলায় পরিয়ে দিলাম–এই মালা গা বেয়ে নামলেই রোগ সেরে যাবে বলে জতি। দেশের যে অবস্থা তাতে মনে হয় মালা, চাল পড়া, পানি পড়া এইসব আধ্যাত্মিক ওষুধ খুব খারাপ না।
ডাক্তার প্রসঙ্গে চীনদেশীয় একটি গল্প শুনুন। জনৈক চীনের তরুণকে বলা হলো, তোমার এখানে খুব ভালো ডাক্তার কেউ আছেন? চীনাম্যান হাসিমুখে বললেন, যা আছেন। তার নাম ইং চুন!
খুব ভালো ডাক্তার।
জি হ্যাঁ। উনি একবার আমাকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে এনেছেন।
কী রকম বলো দেখি।
আমার একবার খুব অসুখ হয়। তখন আমি যাই ডাক্তার লী মাইয়ের কাছে। তিনি আমাকে কী কী সব ওষুধ দেন। সেসব খেয়ে আমি প্রায় মরমর। তখন গেলাম অন্য ডাক্তারের কাছে। তার ওষুধ খেয়ে আরও খারাপ। শেষ পর্যন্ত ইং চুন-এর কাছে।
তিনি তোমাকে নতুন ওষুধ দেন।
জি-না। ডাক্তার ইং চুন তখন দেশে ছিলেন না। কাজেই ওষুধ দিতে পারেননি। এই কারণেই আমি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠি। কাজেই আমি ইং চুনকে খুব বড় ডাক্তার বলি।
বানানো গল্প বাদ দিয়ে একটি সত্যি গল্প বলি। খোদ আমেরিকার হাসপাতালের ডাক্তাররা একবার দীর্ঘ সময়ের জন্যে স্ট্রাইক করেছিল। হাসপাতাল অচল। রোগীর চিকিৎসা হয় না। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, হিসাব করে দেখা গেল স্বাভাবিক অবস্থায় যত রোগী মারা যায়, স্ট্রাইক চলাকালীন অবস্থায় রোগী মারা গেছে অনেক কম। যার মোদ্দাকথা হচ্ছে খোদ আমেরিকাতে চিকিৎসা করেই রোগী বেশি মরে। না করলে মরত না।
এলেবেলে শেষ করার আগে আমার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাটা বলে নেই। ভদ্রলোক তার স্ত্রীর ইউরিন ডাক্তারের কাছে দিয়ে এসেছেন প্রেগনেন্সি টেস্ট করানোর জন্যে। ডাক্তার টেস্ট করে বললেন, পজিটিভ রেজাল্ট। কনগ্রাচুলেশন, আপনার স্ত্রী গর্ভবতী।
আমার বন্ধু ডাক্তারকে এই মারে তো সেই মারে। কারণ বোতলে করে টিউবওয়েলের পানি নিয়ে গিয়েছিল। তার উদ্দেশ্য এই ক্লিনিকের টেস্টগুলি কেমন তা আগেভাগে যাচাই করে নেওয়া। আমার বন্ধু রাগে তোতলাতে তোতলাতে বলল, আপনি বলতে চান আমার টিউবওয়েল গর্ভবতী? ডাক্তার দার্শনিকের ভঙ্গিতে বললেন, যা তাই। আমাদের টেস্ট মিথ্যা হতে পারে না। তবে ওই জিনিস কী করে গর্ভবতী হলো তা আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। আমি বলতে পারব না।
পত্রপত্রিকা ইন্টারভিউ
পত্রপত্রিকা খুললেই আজকাল ইন্টারভিউ নামক একটি ব্যাপার চোখে পড়ে। চিত্রজগতের লোকজনদের সেখানে প্রাধান্য থাকলেও আজকাল ফাঁকে ফোকরে কিছু কবি, নাট্যকার, গল্প লেখক, চিত্রকর ঢুকে পড়ছেন। ইন্টারভিউগুলি সাধারণত দুধরনের হয়।
সহজিয়া ইন্টারভিউ–আপনি কোন রাশির জাতক? আপনার প্রিয় রঙ কী? আপনার প্রিয় খাবার কী? আপনার হবি কী? আপনি মোহামেডানের সার্পোটার, না আবাহনীর?
দ্বিতীয় ধরনের ইন্টারভিউ হচ্ছে কঠিনিয়া (বাংলা ব্যাকরণের ত্রুটি হলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি) ইন্টারভিউ। এখানে প্রশ্নকর্তা বেকায়দা অবস্থা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। বেছে বেছে এমন সব প্রশ্ন করেন যার উত্তর উত্তরদাতার জানার কোনোই কারণ নেই। উদাহরণ দিচ্ছি–মনে করা যাক একজন অভিনেত্রীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। যিনি পড়াশোনার তেমন সুযোগ পাননি। ক্লাস এইট পর্যন্ত উঠে সিনেমায় জড়িয়ে পড়েছেন। প্রশ্নকর্তা তাকে বেকায়দায় ফেলতে চান। সেটা তিনি সাধারণত এভাবে করেন–
প্রশ্ন : আচ্ছা আপা, আপনি তো সাধারণ মানুষ সম্পর্কে ভাবেন, তাই না?
উত্তর : (খুবই অবাক) ওমা ভাববো না? আপনি আমাকে কী মনে করেন? বাড়ি গাড়ি করেছি বলেই ওদের কথা ভুলে গেছি। ছিঃ, দুঃখী মানুষের কথা মনে হলেই আমার… (এইখানে তার গলা প্রায় ধরে গেছে। কথা আটকে যাচ্ছে)।
প্রশ্ন : সমাজ পরিবর্তনের কথা আপনি নিশ্চয়ই ভাবেন?
উত্তর : হুঁ, খুব ভাবি।
প্রশ্ন : অবসর সময়ে নিশ্চয়ই এই সমস্যা নিয়ে পড়াশোনাও করেন?
উত্তর : তা করি। পড়াশোনা করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।
শ্ন : দাস ক্যাপিটাল বইটা তো আপনার নিশ্চয়ই পড়া। তাই না আপা?
উত্তর : হুঁ, পড়েছি। খুব ভালো বই।
প্রশ্ন : বইটির লেখকের নাম বলতে পারবেন?
উত্তর : (একটু সময় নিচ্ছেন) আমার আবার ভাই লেখকের নাম মনে থাকে না। বইয়ের ঘটনা মনে থাকে। লেখকের নামটা তো বড় নয়, বইটাই বড়। তাই না ভাই?
প্রশ্ন : তা তো নিশ্চয়ই। দাস ক্যাপিটাল বইটির ঘটনা মনে আছে আপনার?
উত্তর : অনেকদিন আগে পড়েছি তো, পুরোপুরি মনে নেই। তবে বইটা খুব দুঃখের। লাস্ট সিনে মেয়েটা বোধহয় মারা যায়, তাই না?
এখানে যা লক্ষণীয় তা হচ্ছে প্রশ্নকর্তা ফাঁদে ফেলবার জন্যে কীভাবে এগুচ্ছেন। এবং উত্তরদাতা কত সহজে ফাঁদে পা দিচ্ছেন। সিনেমার নায়িকা নিয়ে উদাহরণ না দিয়ে আমি একটি বাস্তব উদাহরণ দিচ্ছি। এবারের উত্তরদাতা একজন রাজনীতিবিদ। শি সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে এরা চিন্তাভাবনা এবং পড়াশোনা করেন বলে অনেকেই মনে করেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো তার প্রিয় ঔপন্যাসিক কে? তিনি একটি নাম বললেন। নামটি কার তা বলছি না, তবে বুদ্ধিমান পাঠক নিশ্চয়ই আঁচ করতে পারছেন। যারা পারছেন না তারা সবত আমার বই পড়েননি। হা হা হা।