নওয়াজীশ আলি খান সাহেবও খুব মন খারাপ করলেন। তবে তিনি মন খারাপ করলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। প্রথম পর্বে আনিসের মৃত স্ত্রীর যে ছবিটি টানানো ছিল সেটি তার স্ত্রীর। বেচারা কোন জীবিত মহিলাকে মৃতা হিসাবে ছবিতে দেখাবার ব্যাপারে রাজি করাতে না পেরে তাঁর স্ত্রীর ছবি স্ত্রীকে না জানিয়েই ব্যবহার করলেন। বেচারী গেলেন রেগে। এবং ঘোষণা করলেন এই ছবি আর ব্যবহার করা যাবে না। অথচ গল্পটা এমন যে এই ছবি অনেকবার ব্যবহার করতে হবে। এই জটিল সমস্যার সমধান বেচারা নওয়াজীশ আলি খান কি করে করবেন বুঝতে পারলেন না।
নতুন যাত্রা
বন্যার পানি নেমে যাবার পর আবার বহুব্রীহি শুরু হল। দ্বিতীয় পর্ব থেকে নয় প্রথম পর্ব থেকে। নওয়াজীশ আলি খান সুযোগ পেলেন তাঁর স্ত্রীর ছবি পাল্টানোর। নতুন ছবি টানানো হল।
নতুন যাত্রা মন্দ হল না। অভিনেতা অভিনেত্রীরা চমৎকার অভিনয় করলেন। বাবা, মামা, নূর, তার দুই পুত্র কন্যা, আফজাল, মিলি, আফজাল শরীফ, রহিমার মা। কেহ কারে নাহি পারে সমানে সমান। আলাদাভাবে এদের কথা বলা অর্থহীন। এঁরা প্রত্যেকেই তাঁদের প্রতিভার পূর্ণ ব্যবহার করলেন। শুধু বড় মেয়েটি এই সুপারস্টারদের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারল না। তার দিক থেকে চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না। কিন্তু কিছু জিনিস আছে চেষ্টাতে হয় না।
আমার মন খারাপ হয়ে গেল কারণ বড় মেয়েটিকে নিয়ে গল্পের যে কাঠামো ছিল তা এখন ভাঙ্গতে হবে। নতুন কাঠামো তৈরী করতে হবে। অথচ গল্প এগিয়ে গেছে।
প্রথমদিকে পুতুলও আমাকে খানিকটা আশাহত করেছিল। দেখলাম ক্যামেরায় তাকে ভাল দেখাচ্ছে না। দুঃখের ব্যাপারগুলি যত সহজে ফুটিয়ে তুলছে অন্যগুলি তত সহজে আসছে না। তার দ্রুত কথা বলার নিজস্ব ভঙ্গি নাটকেও চলে এল।
বড় মেয়ে এবং পুতুল এই দুজনকেই চতুর্থ পর্বে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করলাম। মাঝে মাঝে আমি খুব নির্মম হতে পারি। পুতুল শেষ পর্যন্ত টিকে গেল নওয়াজীশ আলী খান সাহেবের অনুরোধে। তিনি বললেন, আরো দুএকটা পর্ব দেখুন। দেখলাম। মনে হল–এ পারবে। তার গল্প অনুভব করবার ক্ষমতা আছে। বড় অভিনেতা হবার মা প্রথম শর্ত। বড় মেয়েটিকে বাদ দিতে হল। নবম পর্বে আমি আবার তাকে আনতে চেয়েছিলাম। নওয়াজীশ আলী খান সাহেব রাজি হলেন না।
খুব উৎসাহ নিয়ে নতুন যাত্রা শুরু হয়েছিল। উৎসাহ পুরোপুরি বজায় রইল না। আমাকে বারবার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হল। তুচ্ছ সব বিষয়–কিন্তু তুচ্ছ থাকল না।
সৈয়দ বংশ
আমি যতদূর জানি, আরবী ভাষায় সৈয়দ হচ্ছে একটি সম্মানসূচক পদবী যার মানে জনবি বা ইংরেজী মিষ্টার। যে কোন মুসলমান তাঁর নামের আগে সৈয়দ ব্যবহার করতে পারেন। সৌদী আরবে কিছু সম্মানিত অমসুলমানের নামের আগেও এই সৈয়দ ব্যবহার করে তাঁদের সম্মান জানানো হয়। অথচ ভারতবর্ষে এই পদবীর ব্যবহারকারীরা দাবী করে তাঁরা হযরত মোহাম্মদ (দঃ)-এর বংশধর।
ধরা গেল তাদের দাবী সত্য–তাহলেও কিন্তু সমস্যা মেটে না। যে ইসলাম সাম্যের বাণী প্রচার করে সেই মহান সাম্যবাদ দূরে ফেলে আমরা কিন্তু জাতিভেদ তৈরি করি। এক সময় সৈয়দরা বংশ মর্যাদার ধুয়া তুলে অন্যদের শোষণ করেছে। আমি রসিকতার কারণেই সৈয়দ বংশ ব্যবহার করেছি। কারণ আজ আজ সৈয়দ বংশ কোন সমস্যা নয়।
কেউ যদি মনে করেন সৈয়দ নিয়ে রসিকতা মানে আমাদের নবীর সম্মানহানি করা তাহলে তিনি খুব বড় ধরণের ভুল করবেন। নবীর বংশধররা (?) সবাই নবীর মত এরকম মনে করার কোন কারণ নেই। তাদের নিয়ে কিছু রঙ্গ রসিকতা অবশ্যই করা যায়।
ধর্ম!
আমার জন্য একটি ধর্মভীরু মসুলমান পরিবারে যেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলি কঠিনভাবে মানা হয়ে থাকে। যার প্রতিফলন আছে বহুব্রীহিতে। বহুব্রীহির কেন্দ্রীয় চরিত্র সোবাহান সাহেব একজন অত্যন্ত ধর্মভীরু মানুষ। ধর্মীয় অনুশাসন যিনি কঠিনভাবে মানেন। যার সৎ আত্মর জন্মও হয়ত ঐ কারণেই হয়েছে। সোবাহান সাহেব নিয়মিত রোজা রাখেন। তারপরেও ক্ষুধার স্বরূপ বোঝার জন্যে তিনি দীর্ঘ উপবাসে চলে গেলেন। তিনি বললেন–রোজা রেখে তিনি ক্ষুধার স্বরূপ বুঝতে পারেন না, কারণ সারাক্ষণই তার মনে থাকে ইফতারের সময় প্রচুর খাবার দাবার পাওয়া যাবে। প্রকৃত ক্ষুধার্তদের এরকম খাবারের নিশ্চয়তা নেই। এটা হচ্ছে সৎ মানুষের সৎ উক্তি। এখানে রোজার প্রতি কটাক্ষ কোথায়?
সিমের বীচি এই নাটকে ব্যবহার করা হয়েছে এক লক্ষবার কানে ধরে উঠবস করার হিসেবের জন্যে। আপত্তি উঠেছে এখানেও। ধর্মীয় কাজে এই বীচি ব্যবহার করা হয়। খতম পড়ানো হয়। কাজেই এর অন্য কোন ব্যবহার করা যাবে না। একসময় ধর্মযুদ্ধে তরবারী ব্যবহার করা হয়েছে। কাজেই আমরা কি ধরে নেব তরবারী একটি ধর্মীয় জিনিস, এর অন্য কোন ব্যবহার চলবে না? আমাদের লজিক এত হালকা হবে কেন? ধর্ম কি এমন কোন ব্যাপার যে সিমের বীচিতেও তা থাকবে?
রহিমার মা
আমি কঠিন বিপদে পড়লাম রহিমার মাকে নিয়ে যখন তিনি খাবার টেবিলে সবার সঙ্গে একত্রে খেতে বসলেন। এটি নাকি খুবই কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য। কাতুকুতু দিয়ে হাসানোর অপচেষ্টা, আমার স্থূল বুদ্ধির পরিচায়ক। কোন কোন পত্রিকাতেও তা লেখা হল।
কি গভীর বেদনার একটা ব্যাপার। মুখে মুখে আমরা সাম্যবাদের কথা বলি। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নেই ইত্যাদি। অথচ যেই একটি কাজের মেয়ে একসঙ্গে খেতে বসে গেল ওমি আমাদের মাথা খারাপ হয়ে গেল।