খুবই ভলি সমালোচনা। যে কোনো তরুণ লেখকের অভিভূত হয়ে যাবার কথা। কিন্তু এই লেখকটি হলেন না। বরং শুকনো মুখ করে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। কারণ নিঝুম দ্বীপ বইটি ঢাকার একটি বস্তি নিয়ে লেখা। লেখক বস্তিগুলোকে দ্বীপ হিসেবে কল্পনা করে জ্বালাময়ী উপন্যাস কেঁদেছিলেন।
এত দূর যেতে হয় না, আমি নিজের উদাহরণ দেই। আমার অনিন্দ বেদনার কাব্য নামে একটা বই আছে। গল্পের বই। জনৈক সমালোচক এক পৃষ্ঠার একটি সমালোচনা লিখে জানালেন যে আনন্দ বেদনার কাব্য নামের কবিতা সংকলনটি তাঁর ভাল লেগেছে। কিছু কিছু কবিতা সুন্দর হয়েছে আবার কিছু কিছু সাধারণ মানের। ছন্দের ত্রুটি লক্ষণীয়। মিল এবং অনুপ্রাস ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাকে আরো সাবধান হতে উপদেশ দিয়ে সমালোচক লেখা শেষ করেছেন। সেই সমালোচনা পড়ে আমি এতই ঘাবড়ে গেলাম যে, আনন্দ বেদনার কাব্য বইটি কিনে এনে উল্টে পাল্টে দেখলাম–কোন কারণে গল্পগুলি কবিতা হয়ে গেল কিনা। কিছুই তো বলা যায় না। দেয়ার আর মেনি থিংস ইন হেভেন এন্ড আর্থ।
আমি লক্ষ্য করেছি বাংলাদেশে দুধরণের সমালোচনা লেখা হয়। ক শ্রেণী এবং খ শ্রেণী।
ক. আকাশে তোলা সমালোচনা
খ. পাত্তালে পাতা সমালোচনা।
ক শ্রেণীতে আকাশে তুলে দেয়া হবে। নমুনা–এই তরুণ লেখক আমাদের মনে করিয়ে দেন দস্তয়েভস্কি, টলষ্টয় এবং চেখভের কথা। সেই সব মান লেখকের যে অন্তদৃষ্টি যে বর্ণনা শৈলী আমাদে, মোহাবিষ্ট করে এই তরুণ লেখকও তাই করেছেন। আমরা মুগ্ধ বিস্মিত।
তাদের হাতে টেলিফোন ডাইরেক্টরী ধরিয়ে যদি বলা হয় এটা একটি নাটক এর উপর একটি ক শ্রেণীর সমালোচনা লিখে দিন। তা হলে তারা লিখবেন–নাটকের চরিত্র অনেক বেশী, তাতে সাময়িক অসুবিধা হয়, তবে বর্ণনাক্রমিক সাজানো বলে সেই অসুবিধা প্রধান হয়ে ওঠে না। কাহিনীর গতি জায়গায় জায়গায় শ্লথ, হাস্যরসের প্রাধান্য আর একটু থাকলে ভাল হতো। বিশাল একটা নাটক ধরে রাখার ক্ষেত্রে হাস্যরসের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না–
খ শ্রেণীতে পাতালে পুঁতে দেয়া হবে। নমুনা–প্রথমে বলে নেয়া ভাল এটা একটা চোরাই মাল। লেখক অন্যের জিনিষ তার নিজের বলে চালাতে চেষ্টা করছেন। অতি নিম্নমানের শ্লথ গদ্য। কাঁচা বর্ণনা শৈলী, শব্দের ভুল প্রয়োগ দেখে ভাবতে হয় কেন এই আবর্জনা ছাপা হল?
একই রচনাকে একজন সমালোচক ক শ্রেণী এবং অন্যজন খ শ্রেণীতে ফেলছেন এ রকম উদাহরণ প্রচুর আছে। আমি আমার নিজের একটি রচনার উপর প্রকাশিত সমালোচনা থেকেই দিতে পারি। কি হবে তাতে?
বহুব্রীহি প্রসঙ্গ
বহুব্রীহি প্রসঙ্গ
আদি কাণ্ড
এইসব দিনরাত্রির পর ঠিক করেছিলাম অরি না, যথেষ্ট হয়েছে, এখন থেকে ঘরে বসে থাকব, লেখালেখি সীমাবদ্ধ থাকবে গল্প এবং উপন্যাসে। নটিক আমার লাইন নয়। বিশেষ করে টিভি নাটকে অনেক টেকনিক্যাল খুঁটিনাটি মাথায় রাখতে হয়–খুব চাপ পড়ে। এরচে ক্লান্ত দুপুরে চমৎকার একটা উপন্যাস হাতে নিয়ে শুয়ে থাকা অনেক লোভনীয়।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে–একবার বেলতলায় গেলে বার বার যেতে হয়। ব্যাপারটা অনিবার্য নিয়তির মত। কাজেই দ্বিতীয় দফায় বেলতলা যাবার প্রস্তুতি নিলাম। নীরস গল্প নামে দুটি এপিসোড লিখে নিয়ে গেলাম প্রযোজক নওয়াজীশ আলী খানের কাছে। তিনি না পড়েই বললেন অপূর্ব। আগামী প্রান্তিক থেকে এই জিনিস যাবে। যাবে বললেই সব জিনিস যায় না, এটিও গেল না। দুমাস পড়ে রইল। এই ছমাসে কিছু কিছু পরিবর্তন হল, নাম বদলে গেল। শীরস গল্প থেকে বহুব্রীহি। কাহিনীও নামের সঙ্গে পাল্টে গেল। হাসি তামাশার ফাঁকে হাস্যকর নয় এমন কিছু জিনিস ঢুকিয়ে দেয়া হল। এইবার চরিত্র নির্বাচনের পালা। আমি বললাম অর্ধেক নেয়া হোক একেবারে আনকোরা শিল্পী, বাকি অর্ধেক পুরনো লোকজন। নওয়াজীশ আলি খান বললেন–অপূর্ব! প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি এই ভদ্রলোক আমার সব আইডিয়াকেই অপূর্ব বলে থাকেন। একবার সংলাপবিহীন একটি নাটকের আইডিয়া তাঁকে দিয়েছিলাম–তিনি যথারীতি বলেছিলেন, অপূর্ব।
তিন নতুন
তিনজন নতুন যুক্ত হলেন টিভিতে। কাদের, পুতুল এবং মিলির বড় বোন। অডিশন ছাড়া নতুনরা টিভিতে অভিনয় করতে পারেন না বলে একটি আইন আছে। সব আইনের যেমন ফাঁক আছে–এই আইনেরও আছে। কাজে কাজেই (স্পশাল অডিশনের ব্যবস্থা হল। পাঠকরা শুনে বিস্মিত হবেন যে কাদের (আফজাল শরীফ) অডিশনে পাশ করতে পারল না। বেচার: কাদেরকে থিয়েটার থেকে আমি এনেছিলাম এবং আমি তার মহাপুরুষ নাটকে অভিনয় দেখে তার অভিনয় ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলাম অথচ সে অডিশনে পাশ করতে পারছে না। এর মানে কি? তাহলে কি আমি ধরে নেব অডিশন বোর্ডের কর্মকর্তারা প্রতিভা যাচাইয়ের ব্যাপারটায় মাঝে মাঝে ভুল করেন? কে জানে, কাদেরের মত অনেক প্রতিভাবান অভিনেতাদেরও হয়ত অডিশনে ফেল করে চলে যেতে হয়েছে।
যাই হোক কাদেরের ভাগ্য ভাল ছিল। কারণ বহুব্রীহির প্রযোজক নাট্যকারের ইচ্ছার কথা মনে রেখে কিভাবে জানি কাদেরের জন্যে শুধুমাত্র বহুব্রীহিতে অভিনয়ের অনুমতি জোগাড় করলেন।
বহুব্রীহিতে পুতুলও যুক্ত হল আমার অনুরোধে। এই মেয়েটি কেমন অভিনয় করে কিছুই জানতাম না শুধু জানতাম তার অভিনয়ের খুব আগ্রহ এবং সে এ বছরেই এসএসসি পরীক্ষায় হিউম্যানিটিজ গ্রুপে ছেলেমেয়ে সবার মধ্যে প্রথম হয়েছে। এরকম স্মার্ট একজনকে সুযোগ না দেয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না।