(ক) বন্যা হয়েছে কারণ আগের সরকার অপরিকল্পিতভাবে খাল কেটেছেন। নদী ড্রেজিং করাননি। (এই থিওরি বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলার জন্যে)।
(খ) বন্যার মূল কারণ পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র। তাদের ফারাক্কা বাঁধ। এই থিওরি খুব সম্ভব শেখ হাসিনাকে বিপদে ফেলবার জন্যে, কারণ তিনি ইদানিং খুব বলে বেড়াচ্ছেন বন্যার সঙ্গে ইণ্ডিয়ার কোন সম্পর্ক নেই। কেন বলছেন কে জানে–হয়ত কাউকে বোকা বানাতে চান।
(গ) বন্যা হচ্ছে আল্লাহর গজব। আল্লাহ যেমন ফেরাউনকে শায়েস্তা করবার জন্যে নূহ নবীর সময়ে মহাপ্লাবন দিয়েছিলেন বাংলাদেশের বন্যাও তাই।
মন্তব্যটি এরশাদ সাহেবের জনৈক মন্ত্রীর। মন্ত্রী ফেরাউন বলতে কাকে বোঝাচ্ছেন কে জানে। যদি এরশাদ সাহেবকে বোঝাতে চান তাহলে বলতে হবে তিনি বোকা বানাতে চাচ্ছেন খোদ রাষ্ট্রপ্রধানকেই। তবে আমার তা মনে হয় না। এরকম কুটবুদ্ধির কাউকে এরশাদ সাহেব মন্ত্রী বানাবেন না।
(ঘ) বন্যার মূল কারণ আমেরিকা। তাদের কারণেই বিশ্বজোড়া পরিবেশ দূষণ হয়েছে। যার কারণে এই ভয়াবহ বন্যা।
বামপন্থীদের কথা। তারা সম্ভবত নিজেদেরকেই বোকা বানাতে চাচ্ছেন।
আমার এলেবেলে শ্রেণীর লেখাগুলির মূল উদ্দেশ্যও কিন্তু তাই। পাঠকদের বোকা বানানো। প্রথমে চোর নিয়ে অবিশ্বাস্য একটি গল্প ফাঁদলাম, তার সঙ্গে রিকসাওয়ালাকে নিয়ে গল্পটি (এটি সত্যি গল্প জুড়ে দিলাম। কারণ মিথ্যা সত্যির সঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশন করতে হয়, নয়ত তা গ্রহণযোগ্য হয় না। এর পর পরই বোকা বানানো প্রসঙ্গ এনে কিছু আঁতেল জাতীয় কথাবার্তা বলা হল এই আশায় যাতে কিছু পাঠক মনে করেন আরে এই লোকের এ্যানালিসিস তো। খারাপ না।
অবশ্যি পাঠকরা (যেহেতু তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তি লেখকদের চেয়ে উচ্চস্তরের) কি করবেন তাও আমি জানি। এলেবেলে শেষ করে কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থেকে লেখকের উদ্দেশ্যে দুঅক্ষরের একটি গালি দেবেন, যে গালিতে আমার বোনের সঙ্গে পাঠকের একটি সম্পর্ক স্থাপিত হবে।
তা নিয়ে আমি ঠিক বিচলিত নই, কারণ বিচলিত হবার কিছু নেই, যুগটাই এমন।
জেলখানাতে লাইব্রেরী
আপনারা জানেন কি না জানি না, সব জেলখানাতেই একটা করে লাইব্রেরী থাকে। লাইব্রেরীতে প্রচুর বই পত্রও থাকে তবে কোন কয়েদী সে সব বই পড়ে না। বই পড়ার জন্য কেউ জেলে আসে না।
একবার একটু অন্য রকম হলো–একজন কয়েদীকে দেখা গেল বই পড়ার দারুণ নেশা। রোজ বই নিয়ে যায়। লাইব্রেরীয়ান বিস্মিত হলেন–ব্যাপারটা কি? একদিন জিজ্ঞেসও করে ফেললেন, কি বই তুমি পড়?
কয়েদী মাথা চুলকে বলল, স্যার নাটকের বই।
: সে কি? শুধু নাটকের বই?
: জ্বি স্যার। নাটক ছাড়া অন্য কিছু আমি পড়ি না।
: খুব ভাল কথা। নাটক অবশ্যি আমাদের প্রচুর আছে পড়তে পারবে। দরকার হলে আরো কেনাব।
কয়েদী অল্প সময়ে সব নাটক শেষ করে ফেলল। তার জন্যে, আরো নাটক কেনা হল। সে সবও শেষ। কয়েদী লাইব্রেরীয়ানকে বিরক্ত করে মারছে–স্যার আরো দিন। আরো দিন। মোটা দেখে দিন।
শেষ পর্যন্ত লাইব্রেরীয়ান বিরক্ত হয়ে টেলিফোন ডাইরেক্টরীটা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন–বাবারে এইটা নিয়ে যাও। কয়েদী হাসি মুখে টেলিফোন ডাইরেক্টরী নিয়ে গেল। তিন দিন আর তার খোঁজ নেই। চতুর্থ দিনে লাইব্রেরীয়ান নিজেই গেলেন খোঁজ নিতে। গিয়ে দেখেন টেলিফোন ডাইরেক্টরী কোলের উপর নিয়ে সে মহানন্দে পড়ছে। তিনি অবাক হয়ে বললেন,
: কেমন লাগছে পড়তে?
: অদ্ভুত স্যার।
: বল কি?
: তবে স্যার চরিত্রের সংখ্যা অনেক বেশী। মনে রাখতে একটু কষ্ট হচ্ছে, তবুও চমৎকার। শেষের দিকে মনে হয় খুব জমবে।
লাইব্রেরীয়ান অবাক হয়ে এই পাঠকের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কি বলবেন ভেবে পেলেন না।
গল্পটা বলার পেছনে আমার একটা উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে পাঠক যে নানা পদের হতে পারে, সেই সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়া। সেই সঙ্গে বলা, এই জাতীয় পাঠকের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে।
সমালোচকরা হচ্ছেন এই জাতীয় পাঠক। প্রমাণ এবং ব্যুৎপত্তি ছাড়া আমি কিছু বলি না–প্রমাণ দিচ্ছি।
মাঝে মাঝে টিভিতে আমি কিছু নাটক-ফাটক লিখি। আহামরি কিছু নয়, আমার অন্যান্য রচনার মতই দূর্বল এবং নিম্ন মানের। এরকম একটা নাটক আর্মি লিখলাম একজন ডাক্তারকে নিয়ে যে ছুটি কাটাতে বাইরে যাবে, তখন একটা ঝামেলায় পড়ে গেল। রুগীর অপারেশন হবে ছুটিতে ডাক্তার যেতে পারলেন না স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়া হল ইত্যাদি ইত্যাদি। নাটক প্রচারিত হবার পর দৈনিক বাংলায় কেন জানি আকাশ পাতাল প্রশংসা করা হল। প্রশংসাটা এতই বাড়াবাড়ি ধরণের হল যে আমার মত নির্লজ্জ লোকও লজ্জা পেয়ে গেল। আমার মধ্যে একটু অহংকারও দেখা দিল।
এক বৎসর পর একই নাটক আবার প্রচারিত হল। দৈনিক বাংলায় আবার একটা আলোচনা ছাপা হল। জঘন্য নাটক, কুৎসিত নাটক। ঘটনা নেই, কাহিনী নেই, কিছুই নেই। আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম।
আমি এক তরুণ লেখককে জানি যে নিঝুম দ্বীপ, নামে একটা বই লিখেছিল। সেই বইয়ের সমালোচনা করলেন একজন বিখ্যাত ব্যক্তি। সমালোচনার অংশ বিশেষ–নিঝুম দ্বীপ বইটি সাগরে জেগে উঠা ভূখণ্ডের নয়া বসতির আদি পর্ব নিয়ে লেখা। লেখকের গদ্যের স্বচ্ছ প্রবহমানতা, ছোট ছোট ডিটেলের কাজ আমাদের নাড়া দিয়ে যায়। সাগরের নীল বিস্তারে নিঃসঙ্গ দ্বীপটি লেখকের মমতায় জীবন্ত হয়ে উঠে। এই তরুন গদ্যকারকে অভিনন্দন–