ও আরে না না আমার জন্যে কিছু আনার দরকার নেই। যচ্ছি বেড়াতে বাজার করতে তো আর যাচ্ছ না। লাল বাবা জর্দা এক কৌটা নিয়ে এসো আর সস্তায় যদি কাজ করা শাল পাওয়া যায় তা হলে একটা আনতে পার, ঘিয়া রঙ্গ দেখে আনবে। তোমার ভাবীর বোধ হয় কি একটা ফরমাশ আছে। শাড়ি কাড়ি হবে। মেয়ে মানুষের এই এক রোগী। নাও তোমার ভাবীর সঙ্গে কথা বল।
ঘরে ভ্রমণের প্রস্তুতি চলতে থাকে। চারটা মেক্রোসাইজ স্যুটকেস কাপড়ে ভর্তি হয়ে যায়। গোদের উপর বিষ ফোড়ার মত চার স্যুটকেসের সঙ্গে আছে খালি দুই স্যুটকেস। এরা যথা সময়ে ভর্তি হয়ে ফেরত আসবে, এই পরিকল্পনা। আমি একবার শুধু ক্ষীণস্বরে বলেছিলাম, এই স্যুটকেসগুলি নিতেইতো ছোটখাট একটা প্লেন দরকার। এতে আমার স্ত্রী থমথমে গলায় বললেন,–সবকিছু নিয়ে কলিকতা করবে না। জীবনটা উন্মাদের এলেবেলে নয়।
আমি চুপ করে গেলাম এবং মনে মনে বললাম–যে কবি লিখেছিলেন–দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘরের বাহিরে দুই পা ফেলিয়া–তিনি যে কত সুখে ছিলেন তা তিনি জানেন না।
ঈদ প্রায় এসে গেল
ঈদ প্রায় এসে গেল।
এবারের লেখাটা ঈদ নিয়েই লেখা উচিত। ঈদ নিয়ে কিছু রঙ্গ রসিকতা। তেমন ভরসা পাচ্ছি না। বহুব্রীহিতে সৈয়দ নিয়ে রসিকতা করায় এখানকার একটি পত্রিকা বলেছে আমার এবং সালমান রুশদীর চিন্তাধারায় কোন তফাৎ নেই। আমরা দুজন নাকি একই পথের পথিক।
এসব শোনার পর রসিকতা করার ইচ্ছা মোমের মত উবে যায়। এদেশের লোকজন অদ্ভুত। রসিকতা এরা কখনো রসিকতা হিসেবে নেয় না। মনে করে খুব সিরিয়াস কথা বলা হচ্ছে। আবার সিরিয়াস কথা যদি বলতে যাই তখন ভাবে রসিকতা করা হচ্ছে। এটা আমার কলার দোষও হতে পারে। এখন আমার ধারণা হচ্ছে কিভাবে রসিকতা করতে হয় এটাই বোধ হয় আমি জানি না। উদাহরণ দেই–কয়েকদিন আগে আমি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে মোটামুটি করুণ একটি গল্প বললাম। বন্ধু খুব আগ্রহ নিয়ে গল্পটি শুনল এবং গল্প শেষ হওয়া মাত্র হাসতে হাসতে ভেঙ্গে পড়ল। হাসি আর থামেই না–আমি হতভম্ব। করুণ গল্প কলছি লোকে হাসছে–আমি কি ঢাকাই ফ্লিম হয়ে গেলাম নাকি? সমস্যাটা কি? আমি আরো কয়েকজনকে গল্পটা বললাম। একই অবস্থা। যেই শুনে সেই হাসে।
আমি বরং গল্পটা বলে নেই। একজন কুখ্যাত রাজাকার ধরা পড়েছে মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়বার পরই সে মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে পড়ল। তাকে না মারার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করল। কোন লাভ হল না। মুক্তিবাহিনীর কমান্ডারের নির্দেশে তাকে বাধা হল কাঁঠাল গাছের সঙ্গে। কমান্ডার তকে নিজেই গুলি করতে গেলেন। তিনি বন্দুক উঁচু করেছেন ওম্নি রাজাকারটি বলল, ভাইজান একটু আস্তে গুলি কইরেন।
আমার ধারণা, এটা শুধু যে করুণ গল্প তাই না–ভয়াবহ গল্প। একজন মানুষ মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে কোন পর্যায়ে চলে গেছে তা এই গল্পটি থেকে বোঝা যাচ্ছে। অথচ গল্প শুনে আমরা হাসছি। ভুলে যাচ্ছি যে সব কিছু নিয়ে রসিকতা করা যায় কিন্তু মৃত্যু নিয়ে করা যায় না। আমি নিজে অন্তত পারি না। প্রসঙ্গক্রমে মৃত্যু নিয়ে আরেকটি রসিকতা বলি। রসিকতাটা আমি শুনি একজন আইরিশ ভদ্রমহিলার মুখে আমেরিকার সানফ্রানসিসকো শহরের কফি শপে। আইরিশদের বোকামী হচ্ছে গল্পের মূল বিষয়।
একজন আমেরিকান একজন আইরিশ এবং একজন ফরাসির মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। গিলোটিনের সাহায্যে মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। তিন জন দাঁড়িয়ে আছে। গিলোটিনের ধারাল ব্লেন্ড কপিকলের সাহায্যে উঁচুতে তোলা হল। প্রথম ডাকা হল আমেরিকানকে। সে মাথা পেতে বসল। গিলোটিনের ব্রেড উঁচু থেকে ছেড়ে দেয়া হল। তীব্র গতিতে তা নেমে আসছে। আশ্চর্য কাড, মাঝামাঝি এসে ব্লেড থেমে গেল। আমেরিকানকে মুক্তি দেয়া হল।
একই ব্যাপার ঘটল ফরাসী লোকটির বেলায়। ব্রেড থেমে গেল মাঝপথে। ফরাসীও মুক্তি পেয়ে হাসতে হাসতে চলে গেল। সবার শেষে এল আইরিশ। গিলোটিনে মাথা পাবার আগে সে বলল, ভাই সাহেব, সমস্যাটা কি আমি ধরতে পেরেছি। বুঝতে পেরেছি কেন গিলোটিনের ব্রেড মাঝ পথে থেমে যাচ্ছে। ঐ দেখুন এক টুকরা কাঠ মাঝ পথে বেঁধে আছে। ঐটি নামিয়ে ফেলুন দেখবেন ব্রেড কৃত সুন্দরভাবে নেমে আসে।
কাঠের টুকরাটি নামিয়ে ফেলা হল। আইরিশ ভদ্রলোক মাথা পেতে বসলেন। এইবার আর কোন সমস্যা হলনা। ধারাল ব্রেড শেষ পর্যন্ত নেমে এল। ভদ্রলোকের মাথা ধব থেকে আলাদা হল।
গল্প শুনে সবাই হা হা হো হো করে হাসছে। একমাত্র আমিই গম্ভীর হয়ে আছি। ভদ্রমহিলা বললেন, আপনি হাসছেন না কেন? আপনার কাছে কি গল্পটা যথেষ্ট মজার বলে মনে হয়নি?
আমি বললাম, মৃত্যু নিয়ে কোন রসিকতা আমি গ্রহণ করতে পারি না। কিছু মনে করবেন না।
ভদ্রমহিলা খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, মৃত্যুটাই যে বিরাট বড় একটা রসিকতা এটা কি আপনার কখনো মনে হয় না?
হালকা ধরণের কিছু কথাবার্তা বলে কিছু মিছু শেষ করব বলে ভেবেছিলাম। খন দেখছি লেখাটা ক্রমেই গম্ভীর ধরণের হয়ে যাচ্ছে।
আসলে উৎসবের আগে আগে আমার সব লেখা রসকষহীন হয়ে পড়ে বলে আমার ধারণা। যাই হোক, দুএকটা রসিকতা করে পরিবেশ হালকা করা যাক।
মিলিটারীতে মিলিটারী-মৌলানা আছে তা বোধ হয় আপনারা জানেন, তারা সামরিক বাহিনীরই অংশ। এদের ওয়াজ কখনো শুনেছেন? একটু নমুনা দেই।