আপনি পত্র পাওয়ামাত্র নিচের ঠিকানায় আরো কুড়ি হাজার পাঠিয়ে দেবেন। মনে সাহস রাখবেন। আমাদের বিজয় নিশ্চিত। জয় কুমীর।
আর্টিস্ট পঞ্চাশ টাকার গাঁজা এবং তিন প্যাকেট স্টার সিগারেট খেয়ে বিশাল এক কুমীর এঁকে ফেলল। সিদ্দিক সাহেব হতভম্ব হয়ে বললেন, লাল রঙের কুমীর? কুমীর কি লাল হয়?
আর্টিস্ট বিরক্ত মুখে বললেন, লাল না–এটা মেজেন্টা কালার। কুমীর কি মেজেন্টা কালারের হয়?
হয় না–ইচ্ছা করেই মেজেন্টা করে দিলাম। দূর থেকে চোখে পড়বে রাগী কুমীর।
রাগী কুমীর মানে–আমি কি রাগী?
আর্টিস্ট থমথমে গলায় বললেন, কি যন্ত্রণা! আপনি কি কুমীর নকি? আপনার মার্কা কুমীর। আপনার মনের মিল রেখে কুমীর আঁকতে হলে তো কুচকুচে কালো রঙের কুমীর আঁকতে হয়।
সিদ্দিক সাহেব অনেক কষ্টে রাগ সামলে বললেন, কুমীরের লেজ থাকে বলে জানতাম। এটার লেজ কোথায়?
লেজ আছে। লেজটা বেঁকিয়ে শরীরের পেছনে রেখেছে বলে আপনি দেখতে পাচ্ছেন না।
লেজটা বেকিয়ে শরীরের পেছনে কেন রাখল জানতে পারি?
অবশ্যই জানতে পারেন। কাগজ কম পড়ে গেল। পোস্টার বোর্ড আরো বড় হলে চমৎকার লেজ দিয়ে দিতাম।
কুমীরের বিশাল ছবি সিদ্দিক সাহেবের নির্বাচনী অফিসের সামনে টানিয়ে দেয়া হল। সিদ্দিক সাহেব তৎক্ষণাৎ আর্টিস্টকে ডেকে পাঠালেন। রাগী গলায় বললেন, লোকে বলছে কুমীরটা দেখতে টিকটিকির মত হয়েছে।
আর্টিস্ট হাসিমুখে বললেন–ঠিকই বলছে।
ঠিকই বলছে মানে?
মন দিয়ে শুনুন–ছবি কি ভাবে আঁকতে হয় আপনাকে বুঝিয়ে বলছি। একটা মডেল সামনে রাখতে হয়। সেই মডেল দেখে দেখে আঁকতে হয়। আমার সামনে কোন মডেল ছিল না–টিকটিকি দেখে এঁকেছি। এখন বুঝলেন? আসল কুমীর দেখে যখন ছবি আঁকব তখন বুঝবেন কুমীর কাকে বলে। স্যার, গাঁজার পরিমাণ বাড়াতে হবে। পঞ্চাশ টাকার গাঁজায় কিছুই হয় না।
সিদ্দিক সাহেব বললেন, দয়া করে আর ছবি আঁকবেন না। কুমীর আসুক। কুমীর দেখে যা আঁকার আঁকবেন।
নো প্রবলেম।
নির্বাচনী প্রচারেও ভাটা পড়ে গেল। কুমীর এলে জোরে সোরে শুরু হবে এই অবস্থা। মুখলেস সাহেব বাগেরহাট থেকে টেলিগ্রাম পাঠালেন–
Good News. Coming with fifty crocodiles.
চারদিকে হৈ হৈ শুরু হয়ে গেল। সন্ধ্যাবেলা সিদ্দিক সাহেবের বাসায় থানার ওসি এসে উপস্থিত।
সিদ্দিক সাহেব, এসব কি শুনছি?
কি শুনছেন?
পঞ্চাশটা কুমীর না-কি আনছেন?
ঠিকই শুনেছেন। নির্বাচনী কাজে আনা হচ্ছে। কাজ হলে সুন্দরবনে ছেড়ে দিয়ে আসা হবে।
নিবাচনী নীতিমালা লংঘন করছেন। কুমীর আপনি আনতে পারেন না।
অবশ্যই পারি। কোন আইনে আছে যে নির্বাচনে কুমীর ব্যবহার করা যাবে না?
ওসি সাহেব অনেক ঘাঁটাঘাটি করে নির্বাচনী নীতিমালায় এমন কোন আইন খুঁজে পেলেন না। তবে শহরে ঘোষণা দিয়ে দিলেন–কুমীরদের কাছ থেকে সবাই যেন দূরে থাকেন। তিনি জেলা শহরে কুমীর বাহিনী শান্তি রক্ষার জন্যে বাড়তি পুলিশ চেয়ে পাঠালেন। সারা শহরে হৈ চৈ পড়ে গেল।
পুরো ব্যাপারটায় উৎসাহী হয়ে সিদ্দিক সাহেব মুখলেসকে জরুরী টেলিগ্রাম পাঠিয়ে লিখলেন–সম্ভব হলে একশ কুমীর নিয়ে এসো। আরো কুড়ি হাজার টাকা পাঠালাম। জয় কুমীর।
আমার ধারণা, উন্মাদের পাঠক-পাঠিকারা আমার এই রচনা পড়ে আমার উপর যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তাঁদের কাছে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে নিবেদন করছি ঘটনা সবই সত্য। কুমীর প্রতীকে নির্বাচন করেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। আমার উপর দায়িত্ব ছিল ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে কুমীর নিয়ে যাওয়ার। আমি যথাসময়ে কয়েকটা মাটির কুমীর নিয়ে উপস্থিত হই। কবি গুণের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। তাঁর ধারণা, এই ভরাডুবি হয় আমার কারণে। আমি যথাসময়ে কুমীর নিয়ে এলে এই কান্ড হত না।
এর পরেও যারা আমার কথা বিশ্বাস করছেন না তাঁদের কবি গুণের বাসভূমি বারহাট্টায় যেতে বলছি। কবির পৈতৃক বাড়ির পেছনে পুকুরের কাছে এখনো সাইনবোর্ড ঝুলছে–
সাবধান! সাবধান! সাবধান!
জলে কুমীর আছে।
গোসল, কাপড় কাঁচা নিষিদ্ধ।
ভিক্ষুকের ঘোড়ার গল্প
ভিক্ষুকের ঘোড়ার গল্পটা আপনাদের জানা আছে কি না বুঝতে পারছি না। যে বিষয় নিয়ে লিখতে বসেছি তার জন্যে ভিক্ষুকের ঘোড়ার গল্প জানা থাকলে ভাল হয়। গল্পটা এই রকম–
এক গ্রামে এক ভিক্ষুক ছিল। বেচারা খোড়া। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করতে পারে না–বড় কষ্ট। কাজেই সে টাকা-পয়সা জমিয়ে একটা ঘোড়া কিনে ফেলল। এখন ভিক্ষা করার খুব সুবিধা। ঘোড়ায় চড়ে বাড়ি বাড়ি যায়।
এক জোছনা রাতে গ্রামের কিছু ছেলেপুলে ঠিক করল–একটা ঘোড়া দৌড়ের ব্যবস্থা করবে। পঁচিটা ঘোড়া জোগাড় হল। ডিসট্রিক্ট বোর্ডের ফাঁকা রাস্তায় ঘোড়া ছুটল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, চাবটা ঘোড়া জায়গামত এসে পৌঁছল, পঞ্চম ঘোড়ার কোন খোঁজ নেই। একেবারে লাপাত্তা। সবাই চিন্তিত হয়ে অপেক্ষা করছে। ঘন্টা দুই পর পঞ্চম ঘোড়ার দেখা পাওয়া গেল, হেলতে দুলতে আসছে। বন্ধুরা চেঁচিয়ে উঠল, কিরে কোথায় ছিলি তুই?
ঘোড়ার উপর থেকে ক্লান্ত ও বিরক্ত গলা ভেসে এল–আর বলিস না, আমার ভাগে পড়েছে ঐ হারামজাদা ভিক্ষুকের ঘোড়া। এই ঘোড়া রাস্তায় ওঠে না–মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। গ্রামের যে কটা বাড়ি আছে সব কটার সামনে দাঁড়িয়ে তারপর আসলাম।