আরে না, ভিক্ষা কেন দিব।
একটা শট ওয়েভ রেডিওর দাম খুব কম হলেও দু হাজার। শর্ট ওয়েভ রেডিও ছাড়া আমরা বিবিসি শুনব কিভাবে?
তা তো বটেই, যুক্তিসংগত কথা। আচ্ছা দুহাজারই নাও–আমার দিকে একটু খেয়াল রাখবে।
তা তো রাখবোই। প্রতীক কি পেয়েছেন খবর দিবেন। আমরা বিবিসি শ্রবণ সমিতি আপনার পেছনে আছি। দলের প্রধান দুহাজার টাকা হাতে পেয়ে চেঁচিয়ে ওঠল, সিদ্দিকুর রহমান খোন্দকার। বাকি সবাই এক সঙ্গে চেচাঁল–দূর হবে অন্ধকার।
এইসব শুনতে ভাল লাগে। খুবই ভাল লাগে। কিন্তু টাকা যে হারে যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে দিন সাতেক পর আর কিছুই ভাল লাগবে না। তার উপর মার্কা হল কুমীর। কোন মানে হয়?
সিদ্দিক সাহেবের পাশে তাঁর নির্বাচনী উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মুখলেস সাহেব বসে আছেন। অতি বিচক্ষণ ব্যক্তি। সিদ্দিক সাহেবকে ভাজিয়ে ভাজিয়ে ইলেকশনে দাঁড় করানোর বুদ্ধিও তাঁর। মুখলেস সাহেব স্থানীয় হোমিওপ্যাথ ডাক্তার। তাঁর ডাক্তারখানাই সিদ্দিক সাহেবের নিবাচনী অফিস। কুমীর প্রতীকের খবর স্থানীয় জনগণকে পৌঁছে দেবার জন্যে মুখলেস সাহেব কিছুক্ষণ আগে একটা রিকশী মিছিল বের করেছেন। পঁচিশটা রিকশা। একটার পেছনে একটা যাচ্ছে।
প্রথম রিকশা থেকে একজন চেঁচিয়ে বলছে, খবর আছে?
পেছনের প্রতিটি রিকশায় দুজন করে কর্মী বসা। তাঁরা চেঁচিয়ে বলছে, আছে।
কি খবর?
কুমীর।
কার কুমীর?
সিদ্দিক সাহেবের কুমীর।
কুমীর প্রতীকের খবর শহরে ছড়িয়ে দেবার দায়িত্ব শেষ করে মুখলেস সাহেব ফার্মেসীতে এসে বসলেন। সিদ্দিকুর রহমান আগে থেকেই সেখানে আছেন। তাঁর মুখের বিরস ভাব তিনগুণ বেড়েছে, কারণ কিছুক্ষণ আগে ভয়েস অব আমেরিকা শ্রবণ সমিতিও দুহাজার টাকা নিয়ে গেছে, শ্রবণ সমিতির খবর প্রচার হলে–আরো সব সমিতি তৈরি হবে। আকাশবাণী শ্রবণ সমিতি, রেডিও শ্রীলংকা শ্রবণ সমিতি…?
মুখলেস সাহেব চায়ের কাপ হাতে সিদ্দিক সাহেবের পাশে বসতে বসতে বললেন, কুমীর মার্কা পাওয়ায় আমাদের খুবই সুবিধা হয়েছে। যাকে বলে শাপে বর।
সিদ্দিক সাহেব মরা মরা গলায় বললেন, কেন?
নতুন ধরনের ক্যাম্পেইন করব। ভোট দিবেন কিসে? কুমীর মার্কা বাক্সে জাতীয় ফাজলামী না। নতুন স্টাইল। আমরা জীবন্ত কুমীর নিয়ে আসব।
জীবন্ত কুমীর?
হ্যাঁ জীবন্ত কুমীর। নির্বাচনী প্রচার হবে জ্যান্ত কুমীর দিয়ে। পাঁচমণি দুই কুমীর থাকবে মিছিলের সামনে। পাবলিক কুমীর দেখে ট্যারা হয়ে যাবে। বাঙ্গালী হচ্ছে হুজুগের জাত। এই হুজুগে সব ভোট চলে যাবে কুমীরের বাক্সে।
কুমীর পাবে কোথায়?
ঢাকার চিড়িয়াখানা থেকে ভাড়া নিয়ে আসব।
সিদ্দিক সাহেব বিস্মিত হয়ে বললেন, ওরা কুমীর ভাড়া দেয় না-কি?
জানি না। না দেওয়ার তো কোন কারণ নেই। চেষ্টা করে দেখতে হবে। আমি নিজেই যাব। না পাওয়া গেলে সুন্দরবনের খাল থেকে কুমীর ধরা হবে। টাকা খরচ হবে–উপায় কি?
কত লাগবে?
কুমীর প্রতি পনেরো হাজার ধরুন। দুটায় ত্রিশ প্লাস ক্যারিং কস্ট। ট্রাকে করে তো আর আনা যাবে না–পানির ট্যাংকে করে আনতে হবে। আমাদের ইলেকশনে পা ফেল নির্ভর করছে কুমীরের উপর। জ্যান্ত কুমীর চলে এলে কর্মীদের মধ্যেও উৎসাহের জোয়ার চলে আসবে।
কথাটা ভুল বলনি।
সিদ্দিক সাহেবের মুখ থেকে মন খারাপের ভাব অনেকখানি দূর হয়ে গেল। মুখলেস সাহেব পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা নিয়ে ভোরের ট্রেনে ঢাকা চলে গেলেন। পৌঁছেই আর্জেন্ট টেলিগ্রাম করলেন–Send more money.
টাকা পাঠিয়ে দেয়া হল। দ্বিতীয় টেলিগ্রাম (আর্জেন্ট) চলে এল, Artist coming. Crocodiles follow. এই টেলিগ্রামের অর্থ সিদ্দিক সাহেব কিছুই বুঝলেন না। Artist coming মানে কি? হওয়া উচিত Crocodile coming. স্থানীয় কলেজের ইংরেজীর অধ্যাপককে অর্থ উদ্ধারের জন্য দেয়া হল। তিনিও কিছুই বুঝলেন না তবু হাসতে হাসতে বললেন, সামান্য জিনিস বুঝতে পারছেন না? কুমীর আসবে খুব অটিস্টিক ভঙ্গিতে। মানে কায়দা-কানুন করে আনা হচ্ছে আর কি। হা-হা-হা। সামান্য ইংরেজী লোকজন বুঝতে পারে না–So sad. বড়ই দুঃখজনক।
টেলিগ্রামের অর্থ পরিষ্কার হওয়ামাত্র সিদ্দিক সাহেবের বাসার সামনের মাঠ খুঁড়ে পুকুরের মত করা হল। সাইনবোর্ডে লেখা হল–
সাবধান! সাবধান! সাবধান!
জলে কুমীর আছে।
গোসল, কাপড় কাচা নিষিদ্ধ।
কুমীর এল না, তবে মুখলেস সাহেবের চিঠি নিয়ে জীনসের প্যান্ট এবং আউলা-ঝাউলা চুল নিয়ে এক লোক উপস্থিত। চিঠিতে লেখা–
টেলিগ্রামে পাঠানো বার্তা অনুযায়ী আর্টিস্ট পাঠালাম। সে কুমীরের ছবি এঁকে চারদিকে ছয়লাপ করে দেবে। তাকে যত্নে রাখবেন। গাঁজা না খেয়ে সে ছবি আঁকতে পারে না। ঐ দিকেও লক্ষ রাখবেন। এ দিকে কুমীরের খবর হল, ঢাকা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কুমীর ভাড়া দিতে রাজী নন। আমি অদ্য ভোরে খুলনা রওনা হচ্ছি। সরাসরি কুণীর ধরা ছাড়া অন্য পথ দেখছি না। ঠিক করেছি, সরাসরি যখন ধরতেই হচ্ছে–দুটা না ধরে গোটা দশেক ধরে নিয়ে আসব। কুমীর ধরার কাজে সহায়তা করার জন্যে প্রাণীবিদায় M.Sc (দ্বিতীয় শ্রেণী সপ্তম স্থান। একজন ছাত্রকে নিযুক্ত করেছি। তার নাম আবুল কালাম। বেতন মাসিক চার হাজার। এই সঙ্গে বিপদ ভাতা দুহাজার।