কী কথা?
সাধু সাবধান।
ঠিক আছে। অনেক ধন্যবাদ।
আর কিছু–?
না, আর কিছু জানার নেই।
ইয়ে, বিজ্ঞাপন দেখে বুঝতে পারিনি এটা আপনার বাড়ি।
সেটা না বোঝারই কথা।
আপনাকে মিট করে খুব ইয়ে হলাম।
ঝাড়া পাঁচ ঘণ্টা তার ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থেকে বিকেলে চা খেতে বেরিয়ে এসে ফেলুদা হাজরাকে একটা টেলিফোন করল :
কাল সকালে কী করছেন?
কেন বলুন তো?
হালদার বাড়িতে আসতে পারবেন।–নটা নাগাদ? মনে হচ্ছে রহস্যের কিনারা হয়েছে। তৈরি হয়ে আসবেন।
লালমোহনবাবুকে টেলিফোনে বলে দেওয়া হল, আমরা ট্যাক্সি করে চলে যাব তাঁর বাড়ি সাড়ে আটটায়। সেখান থেকে তাঁর গাড়িতে বারাসত।
রহস্য আরও বৃদ্ধি পেল নাকি?
না। সম্পূর্ণ উদঘাটিত।
সব শেষে অমিতাভবাবুকে ফোন করা হল।
আপনাদের বাড়িতে কাল সকালে একটা ছোটখাটো মিটিং করব ভাবছি।
মিটিং?
আপনাদের পুরুষ মেম্বার যে কজন আছেন তাঁরা যেন থাকেন। আর হাজরাকে থাকতে বলেছি।
নটায় হাজিরা। আপনার কাজের হয়তো একটু দেরি হতে পারে, কিন্তু ব্যাপারটা জরুরি।
অমিতাভবাবু রাজি হয়ে গেলেন। —পুরুষ মেম্বার মানে কি অনুকেও চাইছেন?
না। সে না থাকাটাই বাঞ্ছনীয়। এটা শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।
আমরা যখন পৌঁছলাম, তার আগেই হাজরার দল হাজির। ফেলুদা এ রকম ধরনের মিটিং এর আগেও করেছে। প্রত্যেক বারই আমার মনের মধ্যে একটা চনমনে ভাব, কারণ জানি না। কী হতে চলেছে, কার ভাগ্যে হাতকড়া আছে, কীভাবে ফেলুদা রহস্যের সমাধান করেছে। লালমোহনবাবু আমাকে বললেন, আমি চিন্তাটাকে স্রেফ অন্য পথে ঘুরিয়ে নিয়েছি। এ ব্যাপারে ব্রেন খাটিয়ে কোনও লাভ নেই, কারণ আমার ঘিলুতে অনেক ভেজাল, তোমার দাদারটা পিওর। নিজের তৈরি রহস্যের সমাধান এক জিনিস, আর অ্যাকচুয়েল লাইফে সমাধান আরেক জিনিস।
নীচের বৈঠকখানা ঘরে জমায়েত হয়েছি। হৃষীকেশবাবুর দিল্লি যাবার সময় হয়ে এসেছে। বললেন, এ বাড়ি ছেড়ে যেতে পারলে বাঁচি মশাই! কাগজ থাকলে তরু একটা কথা। এখন প্রাণ হাঁপিয়ে ওঠে।
অচিন্তবাবুর সঙ্গে ভাল করে আলাপ হয়নি। তিনি আপত্তি করেছিলেন এই মিটিং-এ উপস্থিত থাকার ব্যাপারে। তাঁর নাকি একটা বড় পার্ট নিয়ে খুব পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কালই নাকি নাটকটার প্রথম শো। ভদ্রলোক ফেলুদাকে বললেন, আপনার এ ব্যাপারটা কতক্ষণ চলবে?
ফেলুদা বলল, খুব বেশি তো আধা ঘণ্টা।
ভদ্রলোক তাও গজগজ করতে লাগলেন।
কফি খাবার পর ফেলুদা উঠে দাঁড়াল। কালশিটে ঢাকার জন্য ও আজ কালো চশমা। পরেছে। এটা ওর একেবারে নতুন চেহারা। হাত দুটোকে প্যান্টের পকেটে পুরে সে আরম্ভ করলে তার কথা।
পাৰ্ব্বতীচরণের খুনের ব্যাপারে। আমাদের যেটা সবচেয়ে অবাক করেছিল সেটা হল সাধন দস্তিদারের অন্তধন। দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে খুনটা হয়। সাধন দস্তিদার পার্বতীবাবুর ঘরে ছিলেন সোয়া দশটা থেকে সাড়ে দশটা পর্যন্ত। সাড়ে দশটায় তাঁকে আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির দিকে যেতে দেখেছি; দশটা পঁয়ত্ৰিশে অনিরুদ্ধর সঙ্গে কথা বলে পাৰ্বতীবাবুর ঘরে গিয়ে আমরা তাঁকে মৃত অবস্থায় দেখি। তৎক্ষণাৎ সাধন দস্তিদারকে খোঁজা হয়, কিন্তু পাওয়া যায় না; দারোয়ান বলে, তাঁকে গেট থেকে বেরোতে দেখেনি। বাগানে খোঁজা হয়, সেখানেও পাওয়া যায়নি। কম্পাউন্ডের যে পাঁচিল, সেটা আট ফুট উঁচু। সেটা টপকানো সহজ নয়, বিশেষ করে হাতে একটা ব্রিফকেস থাকলে। আমরা–
এখানে অচিন্ত্যবাবু ফেলুদাকে বাধা দিলেন।
সাধনবাবুর আগে যিনি এসেছিলেন, তাকে কি আপনি বাদ দিচ্ছেন? আপনার বাবাকে যেভাবে আঘাত করা হয়েছিল, সেটা শক্ত সমর্থ লোকের পক্ষেই সম্ভব। পেস্টনজীর আকঞ্জাইটিস আছে, তিনি ডান হাত কাঁধের উপর তুলতে পারেন না। অবিশ্যি পেস্টনজী ছাড়াও একজন তৃতীয় ব্যক্তি ছিলেন যিনি পেস্টনজী ও সাধনবাবুর ফাঁকে পাৰ্ব্বতীবাবুর ঘরে গিয়ে থাকতে পারেন।
তিনি কে?
আপনি।
অচিন্ত্যবাবু সোফা ছেড়ে উঠে পড়েছেন।
আ-আপনার কি ধারণা আমি।–?
আমি শুধু বলেছি আপনার সুযোগ ছিল। আপনি খুন করেছেন সে কথা তো বলিনি।
তাও ভাল।
যাই হাক–সাধনবাবুর অন্তর্ধান বিশ্বাসযোগ্য হয় এক যদি দারোয়ান ভুল বা মিথ্যে বলে থাকে। আর দুই, যদি সাধনবাবু এ বাড়ি থেকে না বেরিয়ে থাকেন।
কোনও চারা কুঠুরিতে আত্মগোপন করার কথা বলছেন? হৃষীকেশবাবু প্রশ্ন করলেন।
অমিতাভবাবু বললেন, সে রকম লুকোনোর কোনও জায়গা এ বাড়িতে নেই। একতলার অধিকাংশ ঘরই তালাচাবি বন্ধ। এক বৈঠকখানা খোলা, রান্নাঘর ভাঁড়ারঘর খোলা আর হৃষীকেশবাবুর ঘর খোলা।
এবং সে ঘরে তাকে আমি আশ্রয় দিইনি। সেটা আমি বলতে পারি, বললেন। হৃষীকেশবাবু। শুধু তাই নয়, সাধনবাবু যখন আসেন, তখন আমি ছিলাম না।
আমরা পোস্টাপিসে খোঁজ নিয়েছি, বলল ফেলুদা।আপনি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছেন পোস্টাপিস খোলার সঙ্গে সঙ্গে। তখন দশটা। পাঁচ মিনিট লেগেছে। আপনার টেলিগ্রাম করতে। তারপরেই আপনি–
তারপর আমি যাই ঘড়ির ব্যান্ড কিনতে।
দুঃখের বিষয় দোকানের লোক আপনাকে মনে করতে পারছে না।
মিঃ মিত্তির, দোকানের লোকের স্মরণশক্তির উপর নির্ভর করেই কি আপনি গোয়েন্দাগিরি করেন?
না, তা করি না। এবং তাদের কথায় আমরা খুব আমল দিইনি। আর আপনিও যে সত্যি কথা বলছেন সেটা আমরা মানতে বাধ্য। নই।
কেন, আমি মিথ্যে বলব কেন?