যা বলেছেন।
আশ্চর্য এই যে এমন গৰ্হিত কাজ করার পঁচিশ-ত্রিশ বছর পরে লোকগুলো শুধু বেঁচে নেই, দিব্যি সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে চালিয়ে যাচ্ছে।
হক্ কথা, বললেন জটায়ু। কালই বাড়িতে বসে ভাবছিলুম ত্রিশ বছর আগে যাদের চিনতুম তাদের কারুর সঙ্গে আজও যোগাযোগ আছে কিনা, বা তারা এখন কে কী করছে। সেটা জানি কিনা। বিশ্বাস করুন আজই আধা ঘণ্টা ভেবে শুধু একটা নাম মনে পড়ল, অপরেশ চাটুজ্যে, যার সঙ্গে একসঙ্গে বসে বায়স্কোপ দেখিচি, ফুটবল খেলা দেখিচি, সাঙ্গুভ্যালিতে বসে চা খেইচি।
এখন কী করে জানেন?
উহুঁ। আউট অফ টাচ কমপ্লিটলি। কবে কীভাবে যে ছাড়াছাড়িটা হল, সেটা অনেক ভেবেও মনে করতে পারলুম না।
পরদিন সকালে লালমোহনবাবু এসে ফেলুদার দিকে চেয়ে বললেন, আপনাকে একটু ডাউন বলে মনে হচ্ছে? বেকারত্ব ভাল লাগছে না বুঝি।
ফেলুদা মাথা নেড়ে বলল, নো স্যার, তা নয়, একটা ব্যাপারে কৌতুহল নিবৃত্তি হল না। বলে আসোয়াস্তি লাগছে।
কী ব্যাপার?
আর ব্যক্তিটির আসল পরিচয়। ইনি একটা হুমকি-টুমকি দিলে মন্দ হত না।
রটন, রাবিশ, রিডিকুলাস, বললেন জটায়ু। আর জাহান্নামে যাক। আপনি আপনার যা প্রাপ্য তা তো পাচ্ছেনই।
তা পাচ্ছি।
ফোনটা বেজে উঠল। আমিই ধরলাম। হ্যালো বলতে ওদিক থেকে কথা এল আমি শঙ্কর বলছি। আমি ফোনটা ফেলুদার হাতে চালান দিলাম।
বলুন স্যার!
উত্তরটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ফেলুদার কপালে গভীর খাঁজ পড়ল। তিন-চারটে হুঁ বলেই ফেলুদা ফোনটা রেখে দিয়ে বলল, সাংঘাতিক খবর। ডাঃ মুনসী খুন হয়েছেন, আর সেই সঙ্গে ডায়রিও উধাও।
বলেন কী! চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে বললেন জটায়ু।
ভেবেছিলাম শেষ। আসলে এই সবে শুরু।
আমরা আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে লালমোহনবাবুর গাড়িতে বেরিয়ে পড়লাম। সুইনহো স্ট্রিটে পৌঁছে দেখি পুলিশ আগেই হাজির ইনস্পেক্টর সোম ফেলুদার চেনা, বললেন,মাঝ রাত্তিরে খুনটা হয়েছে, মাথার পিছন দিকে ভারী কিছু দিয়ে মেরেছে।
কে প্রথম জানাল?
ওঁর বেয়ারা। ভদ্রলোক ভোর ছটায় চা খেতেন। সেই সময়ই বেয়ারা ব্যাপারটা জানতে পারে। ডাঃ মুনসীর ছেলে বাড়ি ছিলেন না। পুলিশে খবর দেন ডাঃ মুনসীর সেক্রেটারি।
আপনাদের জেরা হয়ে গেছে?
তা হয়েছে, তবে আপনি নিজের মতো করুন না! আপনি যে আমাদের কাজে ব্যাঘাত করবেন। না সেটা আমি পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানি। আর চারটি তো প্ৰাণী, ভদ্রলোকের ছেলে, সেক্রেটারি, শ্যালক আর পেশেন্ট। অবিশ্যি মিসেস মুনসী আছেন। তাঁকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি এখনও।
আমরা তিনজন শঙ্করবাবুর সঙ্গে দোতলায় রওনা দিলাম। সিঁড়ি ওঠার সময় ভদ্রলোক একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললেন, অনেক কিছুই আশঙ্কা করছিলাম, কিন্তু এটা করিনি।
বাবার ঘরে পৌঁছে ফেলুদা বলল, আপনি যখন রয়েছেন তখন আপনাকে দিয়েই শুরু করি।
বেশ তো। কী জানতে চান বলুন।
আমরা সকলে বসলাম। চারিদিকে জন্তু জানোয়ারের ছাল, মাথা ইত্যাদি দেখে মনে হচ্ছিল, এতবড় শিকারি, আর এইভাবে তাঁর মৃত্যু হল!
ফেলুদা জেরা আরম্ভ করে দিল।
আপনার ঘর কি দোতলায়?
হ্যাঁ। আমারটা উত্তর প্রান্তে, বাবারটা দক্ষিণ প্রান্তে।
আপনি আজ সকালে বেরিয়েছিলেন?
হ্যাঁ।
কোথায়?
আমাদের ডাক্তারের ফোন খারাপ। উনি রোজ ভোরে লেকের ধারে হাঁটেন, তাই ওঁকে ধরতে গিয়েছিলাম। ক’দিন থেকেই মাথাটা ভার-ভার লাগছে। মনে হচ্ছিল প্রেশারটা বেড়েছে।
প্ৰেশার কি আপনার বাবা দেখে দিতে পারতেন না?
এটা বাবার আরেকটা পিকিউলারিটির উদাহরণ। উনি বলেই দিয়েছিলেন আমাদের বাড়ির সাধারণ চিকিৎসা উনি করবেন না। সেটা করেন। ডাঃ প্ৰণব কর।
আই সি.একটা কথা আপনাকে বলি শঙ্করবাবু, আপনি যে বলেছিলেন ডঃ মুনসী আপনার সম্বন্ধে উদাসীন, ডায়রি পড়ে। কিন্তু সেরকম মনে হয় না। ডায়রিতে অনেকবার আপনার উল্লেখ আছে!
ভেরি সারপ্রাইজিং!
আপনার ডায়রিটা পড়ার ইচ্ছে হয় না?
অত বড় হাতে লেখা ম্যানুসক্রিপ্ট পড়ার ধৈর্য আমার নেই।
এটা অবশ্য আশা করা যায় যে আপনার বিষয় যেটা সত্যি সেটাই উনি লিখেছেন।
বাবার দৃষ্টিতে যেটা সত্যি বলে মনে হয়েছে উনি লিখেছেন। সে দৃষ্টির সঙ্গে আর পাঁচজনের দৃষ্টি নাও মিলতে পারে। আমার বলার ইচ্ছে এই, যে বাবা আমাকে চিনলেন কী করে? তিনি তো সৰ্বক্ষণ ক্লাগি নিয়েই পড়ে থাকতেন।
আপনার বাবার মাসিক রোজগার কত ছিল সে সম্বন্ধে আপনার কোনও ধারণা আছে?
সঠিক নেই, তবে উনি যে ভাবে খরচ করতেন তাতে মনে হয় ত্রিশ-পঁয়ত্ৰিশ হাজার হওয়া
কিছু আশ্চর্য নয়।
উনি যে উইল করে গিয়েছিলেন সেটা আপনি জানেন?
না।
গত বছর পয়লা ডিসেম্বর। ঔর সঞ্চায়ের একটা অংশ ব্যবহার হবে মনোবিজ্ঞানের ऐछेझठिदकgछ।
আই সি।
আর, আপনার প্রতি উদাসীন হওয়া সত্ত্বেও আপনিও কিন্তু বাদ পড়েননি।
শঙ্করবাবু আবার বললেন, আই সি!
এই খুনের ব্যাপারে আপনি কোনও আলোকপাত করতে পারেন?
একেবারেই না। এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।
আর ডায়রিটা যে লোপাট হল?
সেইেটা ওই তিনজনের একজন লোক লাগিয়ে করাতে পারে। বাবার পেশেন্ট হিসাবে এরা এ বাড়িতে এসেছে। বাবা যে ঘরে রুগি দেখেন, তার পাশেই তো আপিস ঘর। সেখানেই থাকত বাবার লেখাটা।
আপনাদের সদর দরজা রাত্রে বন্ধ থাকে নিশ্চয়ই!
হ্যাঁ, তবে বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে জমাদার ওঠার জন্য একটা ঘোরানো সিঁড়ি আছে।