আপনার বাড়ি যা দেখলাম সোনাহাটিতে, তাতে আপনার মানথিলি ইনকাম দেড়-দু হাজারের বেশি বলে মনে হয় না। আর এতে আপনি একসঙ্গে ক্যাশ অনেক টাকা পেয়ে যাবেন। হোয়াই আর ইউ বিইং সো ফুলিশ?
এটা বংশমর্যাদার ব্যাপার। এটা আমি আপনাকে বোঝাতে পারব না।
ওই মোতি কোথায় আছে?
আমার কাছে নেই।
ওটা আপনি আনেননি?
বেচবই না যখন ঠিক করলাম তখন আর আনিব কেন?
মগনলাল তার সামনেই রাখা একটা ঘণ্টার উপর চাপড় মারল। টুং শব্দের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একটা চাকর এসে ঘরে দাঁড়াল।
গঙ্গা–এই বাবুকে সার্চ করো।
গঙ্গা বেশ ষণ্ডা লোক; সে একটানে জয়চাঁদবাবুকে বসা অবস্থা থেকে দাঁড় করাল। তারপর সবঙ্গে সার্চ করে একটা মানিব্যাগ, একটা রুমাল আর একটা মশলার কৌটো বার করে মগনলালের সামনে রাখল।
ঠিক হ্যায়, বলল মগনলাল। ওয়াপিস দে দেনা।
চাকর জয়চাঁদবাবুকে তার জিনিসগুলো ফেরত দিয়ে দিল।
বসুন আপনি।
জয়চাঁদবাবু আবার সোফায় বসলেন। মগনলাল বলল, সোনাহাটিতে জানলাম কি আপনাদের ক্লাব প্রদোষ মিটারকে রিসেপশন দিয়েছে।
ঠিকই শুনেছেন।
তার সঙ্গে আপনার দেখা হয়েছিল?
আপনার সব কথার জবাব দিতে তো আমি বাধ্য নই।
আপনার জবাবের দরকার নেই, বিকজ আই অলরেডি নো। আপনি যখন হাওড়াতে ট্রেন থেকে নামলেন, তখন থেকে আমার লোক আপনাকে নজরে রেখেছে। আপনি শিয়ালদায় যোগমায়া হোটেলে উঠেছেন। –রাইট?
ঠিক।
বিকেল পাঁচটার সময় হোটেল থেকে বেরিয়ে আপনি স্ট্যাক্সি করে সাউথে যান। আপনার ডেস্টিনেশন ছিল ফেলু মিটারের বাড়ি–রাইট?
আপনি তো সবই জানেন।
আপনার মোতি এখন ফেলু মিটারের জিন্মায় আছে।
জয়চাঁদবাবু চুপ করে রইলেন। মগনলাল বলল, ইউ হ্যাভ ডান সামথিং ভেরি স্টুপিড, মিস্টার বড়াল। আপনি পার্লটা আমাকে দিলে চালিস হাজার টাকা পেতেন। এখন আমি সে পার্ল আদায় করে নেব, আর আপনি আমার কাছ থেকে একটা পইসাও পাবেন না।
জয়চাঁদবাবু উঠে পড়লেন।
আমি তা হলে এখন আসতে পারি?
পারেন। আমাদের বিজনেস খতম। তবে আপনার জন্য আমার আপশোস হচ্ছে।
০৫. মগনলাল আন্দাজ করছে
ফোন না করে দুপুর বারোটা নাগাত জয়চাঁদবাবু নিজেই এসে হাজির। মগনলালের সঙ্গে তাঁর কী ঘটল না ঘটল বর্ণনা দিয়ে ভদ্রলোক বললেন, আপনি মুক্তোর ব্যাপারটা কী করবেন?
ফেলুদা বলল, যদ্দুর বুঝতে পারছি, মগনলাল আন্দাজ করছে যে মুক্তোটা আমার কাছে রয়েছে। লোকটা অত্যন্ত তুখোড়। সোজাসুজি যদি আমার কাছে এসে পড়ে তা হলেও আশ্চর্য হব না। যে জিনিসটা এতকাল আপনাদের ফ্যামিলিতে ছিল, সেটা এখন হাতছাড়া হয়ে যাওয়াতে আপনার মন খারাপ লাগবে সেটাও আমি বুঝি। কিন্তু তাও আমি বলব যে মুক্তোটা আমার কাছেই থাক। আপনার কাছে থাকলে ও যেন-তেন-প্রকারেণ ওটা আদায় করে নেবে। সেটা ভাল হবে না।
জয়চাঁদ রাজি হয়ে গেলেন। বললেন, আমি বিক্রি না করলে তো ও মুক্তোটা এমনিতেই পাবে না। আপদ বিদেয় হাক, তারপর ওটা আমার কাছে ফিরে যেতে পারে।
ঠিক কথা, বলল ফেলুদা। আপনি আজই ফিরছেন?
আজ্ঞে হ্যাঁ। সন্ধের গাড়িতে।
কোনও খবর থাকলে জানাতে ভুলবেন না।
পরদিন সকালে সাড়ে সাতটার সময় ফোন এল। সোনাহাটি থেকে। সোমেশ্বর সাহা। ফেলুদা কথা বলা শেষ করে ফোনটা রেখে গম্ভীর মুখ করে বলল, কাল রাত্তিরে ট্রেনে জয়চাঁদ বড়ালের মাথায় বাড়ি মেরে অজ্ঞান করে কে বা কারা যেন তার বাক্স সার্চ করে। জিনিসপত্র সব ছত্রাকার হয়ে পড়ে ছিল। অবিশ্যি সোনাহাটি আসবার আগেই ভদ্রলোক জ্ঞান ফিরে পান।
আমি বললাম, এ-ও তো মগনলালেরই ব্যাপার।
নিশ্চয়ই বলল ফেলুদা। লোকটা কোনওরকম সুযোগ ছাড়ে না। ভাগ্যিস মুক্তোটা আমার কাছে রেখে দিয়েছিলাম।
একটা নতুন কেসের গন্ধ পেলে জটায়ু মাঝে মাঝে বিকেলেও এসে হাজির হন। আজও তাই হল। বললেন, মনটা পড়ে রয়েছে। এখানে তাই বাড়িতে বসে থাকতে ভাল লাগছিল না।
ফেলুদা লেটেস্ট খবরগুলো লালমোহনবাবুকে দিয়ে দিল।
তা হলে তো মনে হচ্ছে ওঁর পায়ের ধুলো এবার এখানে পড়বে। ও তো নির্ঘাত বুঝে গেছে যে মুক্তোটা আপনার কাছে রয়েছে।
লালমোহনবাবু কথাটা বলার পাঁচ মিনিটের মধ্যে বাইরে একটা গাড়ি এসে যাবার শব্দ পেলাম। তারপর দরজার বেল বেজে উঠল। খুলে দেখি আসল লোক এসে হাজির।
মে আই কাম ইন, মিস্টার মিটার? বললেন মগনলাল।
নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই।
ভদ্রলোক ঢুকে এলেন। সেই কালো শেরওয়ানি আর ধুতি, পায়ে মোজা আর পাম্প শু। অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল কি আপনার বাড়িতে একবার আসি। আমাদের এতদিনের দোস্তি—হে হে হে! আঙ্কল কেমন আছেন?
লালমোহনবাবুকে মগনলাল যা নাস্তানাবুদ করেছে, ভদ্রলোক আর কোনওদিন মগনলালের সামনে স্বাভাবিক হতে পারবেন বলে মনে হয় না। শুকনো গলায় জটায়ু উত্তর দিলেন, ভাল আছি।
চা খাবেল? ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।
না স্যার। নো টি। আমি আপনার বেশি সময় নেব না। আমি কেন এসেছি তা বোধহয় আপনি বুঝতে পারছেন।
তা বোধহয় পারছি।
তা হলে আর টাইম ওয়েইস্ট করার দরকার নেই। হায়ার ইজ দ্যাট পার্ল? মিস্টার বড়ালের কাছে যে নেই তা তো আপনি জানেন। আপনার লোক তো ট্রেনে
আমার লোক? তা ছাড়া আর কার লোক হবে বলুন। আপনি এভাবে বলবেন না, মিস্টার মিটার। আপনার কোনও প্রমাণ নেই যে আমার লোক কাজটা করেছে।
আপনার ক্ষেত্রে প্রমাপের দরকার হয় না, মগনলালজী। আপনার কাজ মাকামারা কাজ। সে কাজ আমি দেখলেই বুঝতে পারি।