দক্ষিণারঞ্জনের প্রেমিকা বসন্তকুমারী, যাঁর জীবন এক দীর্ঘশ্বাস। দক্ষিণারঞ্জন যাঁকে বর্ধমানের ধুলো থেকে বহু ঝুঁকি সত্বেও তুলে নিয়েছিলেন বুকে। রাজকন্যা নন এক রাজবধূ। তিনি উপহার দিয়েছিলেন একমাত্র বংশধর মনোহররঞ্জন। কান্যকুজ দেশীয় হিন্দুস্থানি ব্রাহ্মণ কাশীরাম শুকুলের কন্যা রামকুমারী দেবীর সঙ্গে মনোহরের বিবাহ দিলেন। মনোহরের দুটি কন্যা ও একটি পুত্র হল। পুত্র ভুবনরঞ্জনের বিবাহ হল এক ব্রাহ্মণ কন্যার সঙ্গে। অনেক আলোর ঝাড়বাতি।
কিন্তু নায়ক এইবার যাবেন বুঝি চির বিশ্রামে। তা অনেক হল! কী বলো বসন্তকুমারী! চিরকাল কি কেউ বসন্তে থাকে? শীত আসবেই শীতল মৃত্যু নিয়ে। অযোধ্যা কী শ্রীরামচন্দ্রকে ধরে রাখতে পেরেছে যে আমাকে পারবে! বসন্ত! নবাব ওয়াজিদ আলি সাহেবের কথা মনে পড়ে! সেই হতভাগ্য রাজা! কৈসার বাগ! কৈসার বাগ! প্রমোদ উদ্যান, প্রমোদ ভবন। মঞ্জিলা! ফোয়ারা, গীত, গজল এক কোটি টাকা খরচ করেছিলেন নবাব! প্রাচীর ঘেরা সেই বাগান! এক-একটি সৌধে এক-একজন বেগম। প্রতিটি সৌধে আলাদা বাগান। আনন্দের ফোয়ারা! বসন্ত সব শ্মশান। দেশীয় রাজাদের দিন শেষ। ইংরেজের ঘোড়া ছুটছে। কামানের গর্জন! হাত ছাড়ো! আমি যাই। তুমি আরও কিছু দিন থাকো। আমি তোমাকে ভালোবাসি বসন্ত! সেই ভালোবাসারই টানে আবার কোনওদিন ফিরে আসব। আবার, আবার সেই এক খেলা। শত্রু, মিত্র সবাই রইল, পরিবার, পরিজন তাদের দেখো!
আমার কথাটি ফুরলো,
নটে গাছটি মুড়লো।।
তুমি চিরকালই একা। মনোহররঞ্জনও অকালে চলে গেল। কে যায়, কে থাকে?
ক্যালেন্ডার লিখে রাখে–১৮৭৮ সাল, ১৫ জুলাই, ৬৪ বছর বয়সে লখনউ নগরীতে রাজা দক্ষিণারঞ্জন মুখোঁপাধ্যায়ের জীবনাবসান।
.
ঋণ স্বীকার
মন্মথনাথ ঘোষ।।
সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।।
আবদুল গণি খান।।