এক ঘণ্টার মধ্যেই ভারত জিতে গেল ম্যাচ। জনতা গর্জন করে উঠল। ঢোলাকিয়া জিন্দাবাদ। সমগ্র পৃথিবী স্তম্ভিত। এ কী আশ্চর্য বোলিং! পরদিন পত্রপত্রিকা আর ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে কেউ কেউ দাবি করল ঢোলাকিয়া চাক করছে, ওকে নো বল ডাকা উচিত।
দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যাণ্ড, তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া একে একে উড়ে যেতে লাগল। ফাইনালে শোচনীয়ভাবে হারল দুর্ধর্ষ ওয়েস্ট ইণ্ডিজ। তারা পনেরো রানে অল আউট।
বিশ্বকাপের উত্তেজনার পর তার নির্জন বাড়িতে ফিরে এল ঢোলাকিয়া। এত উত্তেজনা, এত চেঁচামেচি ও শোরগোল ইত্যাদিতে সে বড়ো অস্বস্তিতে ছিল। নিরিবিলিতে এসে, সে খুব শান্তি পেল। তার কাজ শেষ। পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে তার কলাকৌশল আর গোপন রাখা যাবে না। অন্যেরা কপি করে নেবে। তা নিক, লুপ আর শুটার নিয়ে বিস্তর গবেষণা হবে। বদল করা হবে বল, তাতে আর কিছু আসে যায় না অরুণ ঢোলাকিয়ার, সে তার অঙ্ক নিয়ে থাকবে।
অস্বস্তিটা শুরু হল তৃতীয় দিন থেকে। অধ্যাপক অরুণ ঢোলাকিয়ার খুব একা লাগছে। বড্ড একা, তার সময়। কাটতে চাইছে না। প্রচুর অভিনন্দন জানিয়ে লোকে ফোন করছে, উপহার পাঠাচ্ছে, অনেকে চলেও আসছে তাকে দেখতে, পৃথিবীজুড়ে তাকে নিয়ে আলোচনা। এ-সবই তার কাছে বিরক্তিকর এবং অস্বস্তিকর।
কয়েকদিনের জন্য সে সমুদ্রের ধার থেকে ঘুরে এল। কিন্তু সারাক্ষণ একটা নিঃসঙ্গতা সঙ্গে রয়েছে তার। প্রিয় অঙ্কশাস্ত্রও যেন আলুনি লাগছে আজকাল। কেন এমনটা হচ্ছে? সারাক্ষণ একটা অস্থিরতা বোধ করছে সে।
একদিন রাতে বিছানায় শুয়ে নিজেকেই সে প্রশ্নটা করল, এমন লাগছে কেন? কেন এমন লাগছে?
কোনো জবাব খুঁজে পেল না সে।
রামনাথ ফোন করল দশদিন বাদে, অভিনন্দন জানাচ্ছি। তুমি আমাকে ধাপ্পা দিয়েছিলে বলে, গত দশদিন ফোন করিনি। আমার অভিমান আর রাগ হয়েছিল, সেটা সামলে উঠেছি।
রামনাথের গলা শুনেই কেন যে বুকটা হঠাৎ এমন দুরুদুরু করতে লাগল কে জানে! ধরা গলায় অরুণ ঢোলাকিয়া বলল, অনেক ধন্যবাদ।
ফোন রেখে অনেকক্ষণ ভাবল অরুণ, রজনিরও কি উচিত ছিল-না, একবার ফোন করা বা অভিনন্দন জানানো? অদ্ভুত তো মেয়েটা! খুব রাগ হল অরুণের। কেন জানাল না? কেন এত দেমাক ওর! কেন ওর এত অবহেলা তাকে? তার যে ভীষণ রাগ হচ্ছে। রাগে যে জ্বলে যাচ্ছে গা। অসহ্য। অসহ্য।
আরও দু-দিন সময় দিল সে, তারপর আরও তিনদিন, নাঃ এ তো সহ্য করা যাচ্ছে না! কিছুতেই না।
সাতদিনের দিন এক সকালবেলা, সে রজনির মোবাইল ফোনের নম্বর বের করল কম্পিউটার সেন্টারে ফোন করে।
রজনির মিহি হ্যালো শুনেই রাগে ফেটে পড়ল অধ্যাপক অরুণ ঢোলাকিয়া, কী–কী ভেবেছ তুমি! অ্যাঁ! কী ভেবেছ? আমাকে এত অবহেলা করার মানে কী আমি জানতে চাই…
এই তীব্র রাগের জবাবে মেয়েটা তাকে অবাক করে দিয়ে খিলখিল করে হাসল। তারপর বলল, হ্যাঁ!
হ্যাঁ! হ্যাঁ মানে কী?
হ্যাঁ মানে হ্যাঁ।
অরুণ একটু লাল হল লজ্জায়। তারপর বলল, ও, তাহলে হ্যাঁ?
হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ।