ভেরি ইন্টারেস্টিং। আপনার কি এখনও অ্যান্টিকের-ই ব্যাবসা?
হ্যাঁ। আমার ব্যাবসাটা কিন্তু চোরাই জিনিসের নয়। বেশিরভাগ জিনিসই আমি কিনে নিই। তবে সবসময়ে কিনতে চাইলেই কেনা যায় না। যার জিনিস সে হয়তো অত্যন্ত বেশি দাম চায়, কিংবা কোনো দামেই বেচতে রাজি হয় না। তখন আমাকে একটু পরিশ্রম করতে হয়।
চুরি?
হ্যাঁ।
কিন্তু আপনি তো সাধারণ চোর নন?
কে বলল আমি সাধারণ চোর নই? আমি অত্যন্ত সাধারণ, অত্যন্ত নীতিবোধহীন চোর। একজন কনফার্মড চোর। তবে আমি চুজি। কারো বাড়িতে তাদের সোনাদানা বা টাকাপয়সা চুরি করতে যাই না। আমার টার্গেট শুধু অ্যান্টিক এবং তাও প্রপার নেগোসিয়েশন ফেল করলে, দর কষাকষিতে রফা না হলে, তবেই। কিন্তু তা বলে আমাকে মহৎ চোর বলে ভাববার কোনো কারণ নেই।
ঘড়িটা নিয়ে কি আমার বাবার সঙ্গে আপনার নেগোসিয়েশন হয়েছিল?
হ্যাঁ, ফোনে। উনি সাত লাখ টাকার এক পয়সা কমে ওটা ছাড়বেন না। অথচ আমার কাস্টমার পাঁচের বেশি দিতে চাইলেন না। মুশকিল কী জানেন, অ্যান্টিক-এর কোনো ধরাবাঁধা প্রাইস ট্যাগ নেই। মনে করুন, একটা গুপ্ত যুগের কয়েনের দাম আমরা মোটামুটি একলাখ টাকা ঠিক করে রাখলাম। হট হেডে কালেক্টর কাস্টমার হলে এবং সে যদি জিনিসটার জন্য খেপে ওঠে তাহলে দশগুণ দাম দিয়ে নিয়ে যাবে। আর যদি কুল কাস্টমার হয়, তাহলে অনেক নীচে দর দেবে। এই অ্যান্টিকের বাজারটা কিন্তু অদ্ভুত।
তাই দেখছি, কিন্তু এসব কথার মধ্যে যে ইতু হারিয়ে গেল!
না, হারায়নি, সে আমার মনের মধ্যে আজও আছে। প্রত্যেক দিন, রাতে শোয়ার সময় তার মুখ আমার মনে পড়বেই। ঠিক কথা, তার সঙ্গে আর আমার কোনো যোগাযোগ নেই, খবরও রাখি না। সম্ভবত তার বিয়েও হয়ে গেছে। তাতে অবশ্য কিছু যায় আসে না।
কিছু না?
না।
আপনি তার খবর রাখেন না কেন? এক-আধবার ফোনও তো করতে পারেন! কেন? তাকে তো আমার রক্তমাংসের শরীরে আর দরকারও নেই। ওয়ান ওয়ে প্রেমের তো ওইটেই সুবিধে। প্রত্যাশা থাকে না, প্রত্যাঘাত থাকে না, কিন্তু অন্যভাবে শি বিকামস দি ক্যাপটিভ লেডি। যখন মনের মধ্যে তার আর আমার খেলা শুরু হয়, তখন সে-আমি যেমন বলাই তেমনই বলে, যেমন তাকে দেখতে চাই, সে তেমনই সেজে আসে। সত্যিকারের ইতু হয়তো সেরকম নয়।
একটা কথা বলব?
বলুন-না। তবে আমার হাতে কিন্তু আর সময় নেই। এবার অ্যাকশন।
দাঁড়ান, দাঁড়ান, বাবার ঘড়িটার জন্য আপনি কত দাম দিতে চান?
আমি চার লাখ বলেছিলাম।
আচ্ছা, যদি আমি ওঁকে ওই দরেই রাজি করাই?
আপনি! কেন বলুন তো? ওঁর কোনো ক্ষতি করব বলে ভয় পাচ্ছেন নাকি?
ভয় পাচ্ছি না, এমন কথা বলতে পারি না। চুরি করলে আপনি বিনা পয়সাতেই পেয়ে যাবেন। আর যদি আপনার দরে কিনতে চান, তাহলে বাবাকে আমি রাজি করানোর ভার নিতে পারি। দি চয়েস ইজ ইয়োরস।
চুরি করতে আমি আগ্রহী নই। কিন্তু হাতে সময় কম এবং কাস্টমার ডেডলাইন দিয়ে রেখেছে বলেই কাজটা করতে হচ্ছে।
প্লিজ! ভেবে বলুন।
ঠিক আছে। কিন্তু গ্যারান্টি কী?
আপনি কাল সকাল দশটা নাগাদ বাবাকে ফোন করলেই বুঝতে পারবেন এভরিথিং হ্যাজ বিন টেকেন কেয়ার অফ।
বলছেন?
বলছি। ইটস আ প্রমিস।
ঠিক আছে, আপনার প্রস্তাব আমি মেনে নিলাম। আপনি সত্যিই আপনার বাবাকে ভীষণ ভালোবাসেন। কিপ ইট আপ, কিপ ইট আপ। তাহলে আমি পাইপ বেয়ে নেমে যাচ্ছি। দাঁড়ান। আরও একটু কথা আছে।
কী কথা?
ইতু সম্পর্কে।
ইতু সম্পর্কে আপনাকে তো সবই বলেছি।
আপনি বলেছেন, কিন্তু আমারও যে কিছু বলার আছে!
আপনি ইতু সম্পর্কে বলবেন? কী আশ্চর্য!
কিছু কিছু আশ্চর্যজনক ঘটনা আজও ঘটে বলেই জীবনটা আনইন্টারেস্টিং হয়ে যায় না।
তাহলে বলুন।
ইতু হরিশ মুখার্জি রোডে থাকে, তাই তো?
হ্যাঁ।
বয়েস এখন উনি প্লাস বা কুড়ির কাছাকাছি?
হিসেবমতো তাই।
আমার ছকটা মিলে যায় যদি সে নিমচাঁদ বসুর মেয়ে হয়ে থাকে।
আপনি আমাকে খুব চমকে দিয়েছেন। হ্যাঁ, ইতু নিমচাঁদ বসুর-ই মেয়ে। চেনেন বুঝি?
চিনি। আপনি যেমন বলেছেন, ইতু হচ্ছে সেরকমই, নরম নরম শান্ত, স্নিগ্ধ চেহারা। স্বভাবে বা মুখশ্রীতে কোনো উগ্রতা নেই। চোখ দুটিও ভীষণ মায়াবী।
সর্বনাশ! আপনিও যে তার প্রেমে পড়েছেন মশাই।
তাতে কি দোষ হয়েছে?
আরে না, না। দোষের কথা হচ্ছে না। পছন্দ হলে আপনি তাকে বিয়ে করে ফেলুন-না। আমি আগাম অভিনন্দন জানিয়ে রাখছি। এত সহজে অধিকার ছেড়ে দেবেন?
অধিকার! হাসালেন মশাই, অধিকার কীসের যে ছেড়ে দেব? তার জীবনে আমি বরাবর একজন নন-এন্টিটি। এবং তাতে আমার আর কিছু যায় আসে না। আপনাকে তো বললাম, ইতু নয়, ইতুর ইমেজটাই আমাকে চমৎকার সঙ্গ দেয়। আই অ্যাম ভেরি হ্যাপি নাউ।
অনেকক্ষণ কথা বলে, আপনাকে আমার খুব ভালো লাগল মশাই। আপনি একজন লাভিং, কেয়ারিং, কনসিডারেট এবং ভদ্র মানুষ। আপনার মনটাও বেশ নরম। আমার মতো রাফ অ্যাণ্ড টাফ নন। আপনার সঙ্গে ইতুকে চমৎকার মানাবে।
জেনেটিক্স কিন্তু অন্য কথা বলে। জেনেটিক্স বলে, সমধর্মীর মিলন ভালো হয় না।
সায়েন্স-এর নিয়মে কি আর জীবন চলে মশাই? এসব না ভেবে, ইতুকে বিয়ে করে আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে জমিয়ে সংসার করুন। আপনার মতো সজ্জনের সঙ্গে বিয়ে হলে ইতু সুখী হবে।