তবে ছোট মালিক ভুলে একটাকে মাড়িয়ে দেওয়াতে তার রাগ দেখে কে! ঘুষি পাকিয়ে তেড়ে গিয়ে, ধাঁই ধাঁই করে বেশ ক’টা লাথি কষে দিল। অন্যটা সেই সুযোগে বেচারা ছোট মালিকের পা বেয়ে উঠতে লাগল।
তখন বড় মালিক চটে গেল। ‘ঢের হয়েছে, আর না! তোদের দেখছি বড্ড বাড় বেড়েছে!’ এই বলে দুটোকে আবার হাতে তুলে নিল। তখনও তাদের তেজ কমেনি। সমানে লাফাচ্ছে আর ঘুঁষি দেখাচ্ছে। মালিক জোরে একটা ফুঁ দিতেই কিন্তু তারা নেতিয়ে শুয়ে পড়ল। মালিক আমাদের কাছে এসে পুতুল দেখাল। হাতে তুলে দেখলাম রুমালে গিঁট বেঁধে তৈরি দুটি পুতুল। কলকবজা কিছু নেই!
আমাদের চোখের সামনে তাদের গিঁট খুলে, ঝেড়ে, পকেটে পোরা হল। খেলাশেষের ঘণ্টি পড়ল। সবাই উঠে যাচ্ছিল, এমন সময় বড় মালিক বলল, ‘চাকরটা তো মাটির নীচে! আরে, সে না থাকলে, এত সরঞ্জাম তুলে রাখবে কে?’ এই বলে দুই মালিক কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে, তাকে আবার বের করল।
লোকটা ঢুলু-ঢুলু চোখে চারদিকে তাকিয়ে, গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে, গর্তটা আবার বুজিয়ে দিল। তারপর হ্যাজাকের দড়ি খুলতে লেগে গেল! আমাদের মুখে কথা নেই। আজ পর্যন্ত এর কোনও ব্যাখ্যানা খুঁজে পাইনি।
আমেরিকায় আমার স্বামী বিখ্যাত ভেলকিবাজ হুদিনির খেলা দেখেছিলেন। সে বড় আশ্চর্য ব্যাপার। সেদিন হুদিনি বলেছিলেন তিনি নাকি ভারতে এসে এক সাধুর কাছে যোগ শিখেছিলেন। তাঁর সব আশ্চর্য খেলার কিছুটা হাতসাফাই হলেও, ভাল রহস্যগুলিতে তিনি যোগবল প্রয়োগ করেন। সে ব্যাপারই আলাদা।
এর পর তিনি তাঁর বিখ্যাত বাক্স রহস্য দেখিয়েছিলেন। মঞ্চের মধ্যিখানে বারোটা উজ্জ্বল আলোর নীচে, বস্টন শহরের নামকরা কারিগররা, দর্শকদের সামনে বসে, বড় বড় তক্তা আর ছয় ইঞ্চি আট ইঞ্চি লোহার স্ক্রু দিয়ে মস্ত বড় এক বাক্স তৈরি করল। তার সব উপকরণ এক নামকরা কোম্পানি সরবরাহ করেছিল।
বাক্সের যে দিকটি দর্শকদের দিকে ফেরানো ছিল, তাতে দুটো ছ্যাঁদা করা হল। বোধহয় বাতাস যাবার জন্য। তারপর পুরোদস্তুর ডিনার স্যুট পরে হুদিনি ওই বাক্সে ঢুকলেন। বাক্সের ঢাকনি বন্ধ করে লম্বা লম্বা স্ক্রু দিয়ে এঁটে দেওয়া হল।
বাক্স চাদর দিয়ে ঢাকা হল না। উজ্জ্বল আলোর নীচে, মঞ্চের ওপর এমনি পড়ে রইল। গোড়ার দিকে সেই দুটো ছ্যাঁদা দিয়ে হুদিনি আঙুল বের করে দেখাচ্ছিলেন, যে তিনি ভিতরেই আছেন। তারপর তাও বন্ধ হল। ঘরভরতি শত শত দর্শক নিশ্বাস বন্ধ করে, বাক্সের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে বসে রইল।
হয়তো আধ ঘণ্টা সময় কেটেছিল। মনে হচ্ছিল এক যুগ। অনেকে ভাবছিল বাহাদুরি করতে গিয়ে শেষটায় লোকটা মরে-টরে গেল না তো! হঠাৎ দেখা গেল বাক্সের পাশে হুদিনি দাড়িয়ে!! ঘর্মাক্ত কলেবর, উসকোখুসকো চুল। যেন বড় বেশি পরিশ্রম করে এসেছেন। বাক্স যেমন-কে-তেমন।
সেটাকে যন্ত্রপাতির সাহায্যে খুলতেই মিনিট পনেরো লেগেছিল। দেখা গেল ভিতরে শুধু হুদিনির রুমালটা পড়ে আছে! বাক্স হুদিনির লোকরা করেনি। তার চারপাশ, তলা বা ওপর, কিছুই খোলা যেত না। তা হলে লোকটা বেরুল কী করে? যোগবলে কি?