মাথা দোলালো কেএস খান।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো ছফা। “এই কেসটা তাহলে আপনার আমার দু জনের জন্যই প্রথম ব্যর্থ কেস হয়ে গেলো, তাই না, স্যার?”
কেএসকে নিঃশব্দে হাসি দিলে নুরে ছফা একটু অবাকই হলো। “কেসটা কইলাম সলভ…খালি আসামী ধরন বাকি। ওইটা করা যাইবো। আপনে কোনো চিন্তা কইরেন না। সে ধরা পড়বোই।”
ভুরু কুচকালো ছফা। “কেস সলভ মানে? আমরা তো জানিই না মুশকান জুবেরি পাঁচজন ভিক্টিমের সাথে কি করেছে!”
হাসি দিয়ে ছফাকে আশ্বস্ত করলো কেএসকে। “এইটা আসলে আমরা জানি,” কথাটা বলে জাওয়াদের দিকে তাকালো। “আপনেরে পরে সব বলবো…এখন রেস্ট নেন।” উঠে দাঁড়ালো সাবেক ডিবি কর্মকর্তা।
“আপনি জানেন?” মাথা নেড়ে সায় দিয়ে আবারো আশ্বস্ত করলো কেএস খান।
“তাহলে আমাকে বলছেন না কেন, মুশকান জুবেরি ঐ পাঁচজন ভিক্টিমকে কি করেছে, কেন করেছে?”
“মুশকান কোনো অর্গ্যান পাচারের সাথে জড়িত না, আপনের এই হাইপোথিসিসটা ভুল ছিলো।”
পুরো কথাটা শোনার জন্য অপেক্ষা করলে সে।
“মহিলা তার ভিক্টিমদের শরীরের একটা অর্গ্যান খায়া ফেলতো!”
“কি!” কথাটা শুনে ভিরমি খেলো ছফা। “এরকম একজন রুচিবান মহিলা এটা কেন করবে?” অবিশ্বাসে বলে উঠলো সে।
ছফা যে আন্দিজের ঘটনাটা জানে না সেটা বুঝতে পারলো। এই লম্বা গল্পটা এখন না বলে সরাসরি আসল প্রসঙ্গে চলে গেলো। “কারণ খুব কঠিন এক সিচুয়েশেনে পইড়া, বাই-অ্যাকসিডেন্ট সে ইনভেন্ট করছে, মানুষের শরীরে একটা বিশেষ একটা অঙ্গ খাইলে যৌবন ধইরা রাখা যায়।”
বিস্ময়ে চেয়ে রইলো ছফা। “এটা তো পুরোপুরি আজগুবি কথা,” মেনে নিতে না পেরে বলে উঠলো। “কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই না। বিকৃত মস্তিষ্কের কাজ-কারবার!”
কেএসকে কিছুই বললো না।
“আ-আপনি এটা বিশ্বাস করেন, স্যার?”
“দেখেন, আমি হইলাম যুক্তির মানুষ…যুক্তি ছাড়া কিছু বিশ্বাস করি না। যা দেখি নাই দুই নয়নে তা মানি না গুরুর বচনে?”
“আমিও, স্যার। এইসব আজগুবি ফালতু কথা কে বলছে?”
“ঐ ডাক্তার…আসকার ইবনে সায়িদ।”
“ও-ওকে আমি এমন শিক্ষা দেবো…” দাঁতে দাঁত চেপে বললো ছফা। “ আমাদের সাথে রসিকতা! এসব কথা বলে ওই ডাক্তার আসলে অর্গান পাচারের ব্যাপারটা আড়াল করতে চাইছে, স্যার।”
গাল চুলকালো কেএসকে।
অবিশ্বাসে চেয়ে রইলো ছফা। সে জানে কেএস খানের এই ভঙ্গিটির অর্থ কি। “আ-আপনি এই উদ্ভট গল্পটা বিশ্বাস করেন?”
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বললো, “আমি কি বিশ্বাস করি না করি সেইটা বলার আগে আমারে একটা কথা বলেন। আপনে তো মহিলারে সামনে থেইকা দেখছেন…বললেন তো, ওর বয়স কতো হইতে পারে?”
একটু ভেবে নিলো ছফা। “মমম…কতে হবে…ত্রিশ? বড়জোর পঁয়ত্রিশ এর বেশি হবে না। আমি নিশ্চিত। অবশ্য মহিলাকে দেখলে যদি আরো কম বয়সি মনে হয় তাহলেও দোষ দেয়া যাবে না।”
দীর্ঘশ্বাস ফেললো কেএস খান। “মুশকান জুবেরির বর্তমান বয়স ছেষট্টি!”
ছফার মনে হলো তার সাথে মশকরা করা হচ্ছে। “ছেষট্টি মানে??”
“মাইট যোগ ছয়!”
.
অধ্যায় ৪৫
সুন্দরপুরের এমপি আসাদুল্লাহ সারাদিন এখোটা ব্যস্ত ছিলো যে নিজের এলাকার খবর নিতে পারে নি। রাজনীতি এমনিতেই ব্যস্ততম একটি পেশা, তার উপরে ক্ষমতাসীন দলের এমপি হলে ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুন। শীতকালীন সংসদ অধিবেশন চলছে। অনেকদিন পর আজ সংসদে বসেছিলো কয়েক ঘণ্টা। এক সময় ঘুমিয়েও পড়েছিলো। এ নিয়ে কলিগেরা হাসাহাসি করেছে। নিজদলের এক এমপি টিটকারি মেরে বলেছে, মাল টেনে এসেছে কিনা। কথাটা সে সহজভাবেই নিয়েছে। অন্তত বাহ্যিকভাবে, কিনতু ভেতরে ভেতরে গজগজ করে উঠেছিলো। হারামজাদা, আমি এখনও তোর মতো হতে পারি নি! কোথায় কি খেয়ে যেতে হয় সেটা ভালো করেই জানি! অবশ্য মুখটা এমন করে রেখেছিলো যেনো কী-যে-বলেন-না-ভাই’ টাইপের।
যাইহোক, রাত নটার পর সংসদ ভবন থেকে বের হয়ে আরেক এমপির বাসায় গিয়ে ‘মাল’ অবশ্য ঠিকই টেনেছে। সেটা আর এমন কি। সবাই তা করে। কেউ স্বীকার করে, কেউ করে ভণ্ডামি।
রাত বারোটার পর ফাঁকা অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে মেজাজটাই বিগড়ে গেলো। সারাদিন এতো কাজ করার পর যদি শূন্য বাড়িতেই ফিরে আসতে হয় তাহলে এতোসব কিসের জন্য করছে? তার বউ-বাচ্চারা মনে করে এই দেশে মানুষ থাকে না! কানাডার নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করে ওরা। এজন্যে অবশ্য ওদেরকে খুব বেশি দোষও দেয়া যায় না। এক/এগারোর আগেভাগে সে নিজেই পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে অন্য অনেকের মতো বউ-বাচ্চাকে ওখানে পাঠিয়ে দেয়। শত শত রাজনীতিকের বেগমসাহেবরা থাকেন বলে কানাডার ঐ জায়গাটাকে এখন লোকজন বেগমগঞ্জ বলে টিটকারি মারে।
জামা-কাপড় না খুলেই বিছানায় গিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়লো। পকেট থেকে দুটো সেলফোন বের করে রাখলো বালিশের পাশে। রাত বারোটার পর সব সেলফোন বন্ধ করে রাখে, শুধু একটা বাদে। ওটার নাম্বার খুব কম লোকের কাছেই আছে। যাদের কাছে আছে তাদের কাণ্ডজ্ঞান অতো নীচে কখনও নামবে না যে, রাত-বিরাতে অদরকারে-কমদরকারে ফোন করে প্রাইভেট লাইফে বিঘ্ন ঘটাবে।
চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকলো কয়েক মুহূর্ত। টের পেলো মাথাটা খুব ধরে আসছে। সে জানে যথেষ্ট মদ পেটে না গেলে তার এরকম হয়। অন্যের মদ খেতে বসে একটু ভদ্রতা করেছিলো বলে এই অবস্থা। এখন আরেকটু না খেলে সারারাত এমন মাথাব্যথা নিয়েই বিছানায় পড়ে থাকতে হবে। অবশেষে বিছানা ছেড়ে উঠে ফ্রিজ থেকে পাসপোর্টের একটি বোতল আর গ্লাস নিয়ে আবারও ঢুকলো বেডরুমে। বিছানার পাশে সোফায় বসে কিছুটা পানীয় টেলে চকচক করে পান করলো। বোতলটা রাখলো সোফার পাশে মেঝেতে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ওষুধের মতো কাজ করলো যেনো। মাথাব্যথাটা চলে গেলো পুরোপুরি। আরেকটু পান করার লোভ সামলাতে পারলো না। বেশি খেলে তার খুব একটা সমস্যা হয় না, কম খেলেই যতো বিপত্তি।