দু-জন ভদ্রলোক হতাশ হয়ে ফিরে গেলো রাস্তার ওপাড়ে পার্ক করা গাড়ির কাছে।
“খাওনের কী শখ!” চোখমুখ বিকৃত করে বললো দোকানি। “গাড়ি লইয়া আইসা পড়ছে?” তারপরই ওয়াক থু। এই ঘেন্নাটা বেশ আনন্দের সাথেই প্রকাশ করতে পারলো সে। রহমান মিয়ার চোখেমুখে আনন্দ। সামনে রাখা গুড়ের পিণ্ডের উপরে এক ঝাঁক মাছি বসে থাকলেও সেগুলো হাত দিয়ে তাড়ালো না।
রবীন্দ্রনাথ কেন, ঐ ডাইনিটাও আর কখনও এখানে আসবে না।
.
অধ্যায় ৪৪
কেএস খান বসে আছে বিছানার পাশে। তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে জাওয়াদ। তারা দুজনেই চেয়ে আছে বিছানায় বসে থাকা নুরে ছফার দিকে। বাইরে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। ঘণ্টাখানেক আগে সুন্দরপুর থেকে ফিরে এসেছে একদম অক্ষত শরীরে। বলতে গেলে তেমন কিছুই হয় নি তার। সম্পূর্ণ সুস্থ আছে এখন। উদ্ধারের পর পরই জ্ঞান ফিরে পায় সে। কোথাও কোনো ধরণের চোট পায় নি। তবে গতরাতের ঘটনার কিছুই মনে করতে পারছে না। ডাক্তার বলেছে, তার কোনো সমস্যাই নেই। তবে কড়া ডোজের অজ্ঞাত একটি ড্রাগস দেয়া হয়েছে। ছফার রক্ত পরীক্ষা করলে সেটার পরিচয় জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ড্রাগসটি অচেতন করে দিয়েছিলো তাকে।
“আপনের কিছুই মনে নাই?” হতাশ হয়ে জানতে চাইলো কেএসকে। কফির কাপে চুমুক দিতে ভুলে গেছে সে।
মাথা দুলিয়ে জবাব দিলো ছফা। বিছানার উপরে বসে আছে সে, তার হাতেও কফির কাপ। তবে জাওয়াদ কফি খায় না বলে তার হাত খালি।
“ঐ বাড়িতে যে গেলেন, এইটাও মনে করতে পারছেন না?”
মুখ তুলে তাকালো নুরে ছফা। “ওটা মনে আছে, স্যার…মানে ঐ বাড়িতে গেলাম…মহিলার সাথে কথা বললাম…তারপর…” চুপ মেরে গেলো।
…মহিলা আমাকে একটা অ্যালবামের মতো কিছু দিলো…”
উদগ্রীব হয়ে চেয়ে রইলো কেএস খান।
“…সম্ভবত ছবির অ্যালবাম…”
“একটা ছবির অ্যালবাম?”
“জি, স্যার…ছবির অ্যালবাম।”
“কার ছবি?”।
“মুশকান জুবেরির…” মনে করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো সে৷ “.ওর ছোটোবেলার ছবি…” তারপর আর কিছু মনে করতে পারলো না।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো কেএসকে, সে বুঝতে পারছে ছফার অবস্থা। “একটা বইয়ে পড়ছিলাম…এক ধরণের ড্রাগস আছে…এইটা যে যার উপরে অ্যাপ্লাই করা হয় তার মেমোরি লস হইয়া যায়…টেম্পোরারি মেমোরি পুরা ইরেজ কইরা দেয়। এইজন্য ড্রাগসটা কাজ শুরু করার কয়েক মিনিট আগে থেইকা যে মেমোরি আছে তাও নষ্ট হইয়া যায়। একটু থেমে আবার বললো সে, “সব স্মৃতিই টেম্পোরারি মেমোরিতে থাকে..তারপর সেইটা পারমানেন্ট মেমোরিতে চইলা যায়। বুঝলেন?”
ছফা অবাক হলো। ডিবির ইনভেস্টিগেটর এইসব কথা কি করে জানে।
“এইগুলা সব বই পইড়া জানছি,” শিশুসুলভ হাসি দিয়ে বললো কেএস খান।
“কিন্তু স্যার,” বললো নুরে ছফা, “যতোটুকু মনে পড়ছে, আমি ওখানে কোনো কিছুই খাই নি…ওই মহিলাও আমার থেকে বেশ দূরে বসেছিলো…তাহলে এটা কিভাবে হলো?”
“কন কি?” অবাক হলো কেএসকে। নতুন কোনো ব্যাখ্যা খুঁজতে লাগলো। “কোনো রকম কন্ট্যাক্ট হয় নাই? আপনে কিছু মুখেও দেন নাই?”
মাথা দুলিয়ে সায় দিলো ছফা। যতোটুকু মনে আছে এরকম কিছুই হয় নি। ঐ অ্যালবামটা খুলে পড়তে শুরু করেছি…তারপরই সবকিছু কেমন ওলট পালট হয়ে গেলো।”
অনেকক্ষণ চুপ করে রইলো ডিবির সাবেক ইনভেস্টিগেটর। “অ্যালবামটা দেওনের আগে কি কি হইছে সব মনে আছে?” অবশেষে জানতে চাইলো সে।
কপালের ডানপাশটা আঙুল দিয়ে ঘষলো ছফা। “অনেকটাই মনে আছে…মানে, আমি ঠিক শিওর না…”
“থাক, কষ্ট কইরা মনে করনের দরকার নাই। কয়েকদিন রেস্টে থাকেন, সব ঠিক হইয়া যাইবো।”
মাথা নেড়ে সায় দিলো নুরে ছফা। “মিসেস জুবেরি সবকিছুই নিজে। থেকে বলছিলো…আমি যেসব বিষয় নিয়ে সন্দেহ করছি তার সবকিছু পরিস্কার করে দিয়েছিলো…”
“তাই নাকি?”
“জি, স্যার। মহিলাকে নিয়ে আমি যেসব সন্দেহ করেছিলাম সব কিছুর লজিক্যাল এক্সপ্লানেশন দিয়েছিলো।”
“এইসব আপনের মনে আছে?”
“হ্যাঁ, মনে আছে।”
“এইটা কি ঐ ফটো-অ্যালবামটা দেওনের আগে না পরে?”
“আগে …”
“হুম,” গভীর ভাবনায় ডুবে গেলো কেএসকে। “তাইলে কি ঐ অ্যালবামটার মইধ্যেই মেকানিজম করছিলো?” অনেকটা আপন মনে বিড়বিড় করে বললো সে।
“কি বললেন, স্যার?” নুরে ছফা বুঝতে পারলো না।
“আমার মনে হইতাছে মহিলা ঐ অ্যালবামটার মইধ্যেই কিছু করছিলো..মাইনে, আপনে তো কইলেন, ওইটা ছাড়া আর কিছু টাচ করেন। নাই…”
“অ্যালবামের মধ্যে?…” ছফার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। “সেটা কিভাবে সম্ভব?”
মুচকি হাসলো মি. খান। “ঐ যে…আরব্য-রজনীর কাহিনীতে আছে…বইটার প্রত্যেক পৃষ্ঠায় বিষ মাখায়া রাখছিলো?”
ছফা বুঝতে পারলো কিনা সেটা বোঝা গেলো না, আলতো করে মাথা নেড়ে সায় দিলো সে।
“এই ধরণের পয়জন কিন্তু বহুত আছে,” গুরুগম্ভীরভাবে বললো কেএস খান। “একটু ওভার-ডোজ হইলেই বিপদ আছিলো।”
নুরে ছফা অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলো, “স্যার, ঐ মহিলা পাঁচজন ভিক্টিমকে আসলে কি করেছে বলে মনে করেন, আপনি?”
কেএস খান পেছন ফিরে জাওয়াদের দিকে তাকালো। ছেলেটা নিজের অভিব্যক্তি লুকানোর চেষ্টা করতে গিয়ে পারলো না, গাল চুলকে কাচুমাচু খেলো একটু।
“অর্গ্যান পাচারের ব্যাপারে কি কোনো প্রমাণ জোগাড় করতে পেরেছেন হাসপাতালের ঐ ডাক্তারের কাছ থেকে?”