নুরে ছফা কিছু বলতে গিয়েও বললো না।
“কয়দিন থাকবেন ওইখানে?”
কটু ভাবলো সে। “তিন-চারদিন?”
“তিন-চাইরদিনে আপনের কাম হইয়া যাইবো?”
“আপনার মতো যোগ্য লোক পেলে হয়ে যাবে আশা করি।”
একটু বিগলিত হলো আতর। “কথাটা কওন ঠিক না, কিন্তু আপনে কইলাম আসল লোকের দেহা-ই পাইছেন।”
“আমারও তাই মনে হচ্ছে।”
“এইবার কন, কি জানবার চান?”
একটু গুছিয়ে নিলো নুরে ছফা। “ঐ মহিলা কোত্থেকে এসেছে, এখানে এরকম জায়গায় কেন এসেছে…এর পেছনে সত্যিকারের কারণ কি..তার রেস্টুরেন্টের খাবারগুলো কেন এতো সুস্বাদু হয়…এইসব।”
“আপনে না কইলেন হের খাওন আপনের ভালা লাগে নাই?” আতরের চোখেমুখে সন্দেহ।
“আমার ভালো লাগে নি তো কি হয়েছে, সবার তো লাগে..” একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে বললো সে।
“ঠিকই কইছেন।”
“আমি যে কয়দিন এখানে থাকবো আপনি আমাকে একটু হেল্প করবেন। চিন্তা করবেন না, এজন্যে আমি আপনাকে বখশিস দেবো।” টাকা না বলে বখশিস বললো ইচ্ছে করেই।
আতরের লালচে দাঁত বখশিসের কথায় আবারও বিকশিত হলো।
“কিন্তু একটা শর্ত আছে৷” সপ্রশ্নদৃষ্টিতে তাকালো ইনফর্মার।
“কি?”
“আমার ব্যাপারে কাউকে কিছু বলতে পারবেন না। মানে আমি যে সাংবাদিক এটা-”
“আরে, আমি আবার কারে কমু?” কথার মাঝখানে বলে উঠলো। “আমার কি খায়দায়া কাম নাই? এই আতর খামোখা পাবলিকের লগে কুনো বিষয়-আসয় নিয়া গপ মারে না।”
“আমি পাবলিকের কথা বলছি না।”
“তাইলে?”
“পুলিশের কথা বলছি।”
চুপ মেরে গেলো লোকটা।
“আমি জানি আপনি পুলিশের হয়ে কাজ করেন, নুরে ছফা ইনফর্মার শব্দটাও ব্যবহার করলো না। স্বাভাবিকভাবেই পুলিশকে বলতে পারেন আমি কে, কেন এখানে এসেছি..” একটু থেমে আবার বললো, “কিন্তু এটা করলে পুলিশ আমাকে ডিস্টার্ব করতে পারে। বোঝেনই তো, ঐ মহিলার সাথে ওদের কেমন খাতির?”
হাত তুলে থামিয়ে দিলো ইনফর্মার। “আর কওন লাগবে না। এইটা আমার চায়া আর কে বেশি জানে…আপনে এইটা নিয়া টেনশনই কইরেন না। পুলিশ কিছু জানবার পারবো না।”
“কিনতু তারা যদি আমার ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে কিছু জানতে চায় তখন কী বলবেন?”
একটু ভেবে নিলো আতর। “এইটা এমন কঠিন কিছু না। আমি পুলিশরে কমু আপনে জমি কিনবার আইছেন। আমি আপনেরে হেল্প করতাছি।”
এবার নুরে ছফার মুখে হাসি দেখা গেলো। “বাহ, দারুণ তো। আপনি কি জমি-টমিও খুঁজে দেবার কাজ করেন নাকি?” জমির দালাল শব্দটিও ইচ্ছে করে বাদ দিলো সে।
বিনয়ী হাসি দেখা গেলো আতরের মুখে। “মাজেমইদ্যে এইটাও করতে অয়। কুনখানে কুন জমিটা মাইনষে বেইচবো এইটা আমার জানা থাকে। আপনে কইতে পারেন এইখানকার গেরাম আর টাউনে কেউ যদি ঘরের চিপায় ঢুইকা পাদও মারে এই আতর ঠিকই জানবার পারে। হের লাইগাই তো মাইনষে আমারে বিবিচি কয়।”
আতরের চোখেমুখে একধরণের গর্বিত ভাব দেখতে পেলো নুরে ছফা।
“কুন পোলায় কুন মাইয়ার লগে চকর চালাইতেছে তাও আতর জানে!”
নুরে ছফা মুচকি হাসি দিয়ে পকেট থেকে একশ’ টাকার একটি নোট বের করে লোকটার হাতে ধরিয়ে দিলো। “এটা রাখুন। চা-সিগারেট খাবেন। কাল থেকে আমি আর আপনি একসাথে কাজ শুরু করবো। এরজন্য প্রতিদিন আপনি পাবেন পাঁচশ’ টাকা, ঠিক আছে?”
টাকাটা হাতে নিয়ে দাঁত বের করে হেসে মাথা নেড়ে সায় দিলো ইনফর্মার। দুর্দিনের সময় এমন একজন লোক জুটে যাওয়াতে খুশিই হলো। কয়েকটা দিন নিশ্চিন্তে থাকা যাবে। “ঠিক আছে, কাম হইবো। এই আতর আলী ট্যাকা-পয়সারে দাম দেয় না…দাম দেয় মিল-মহব্বতরে। আপনেরে আমার অনেক পসন্দ হইছে, এইটাই হইলো আসল কথা।”
“আমারও আপনাকে খুব পছন্দ হয়েছে। আপনি আসলেই কাজের মানুষ। আমার মনে হয় না আর কারোর হেল্প দরকার হবে আমার।”
“কেউ আপনেরে হেল্প করবো কেমনে? ওরা তো ঐ ডাইনির তিরি সীমানায়ও যাইতে পারে না।”
“এখন বলুন, ঐ মহিলা কোত্থেকে এলো, কিভাবে এখানে এলো?”
আতর একটু গাল চুলকালো। “লম্বা কাহিনী..কইতে অনেক টাইম লাগবো..আমার তো অহন একটা কাম আছে..থানায় যাইতে হইবো…রাইতে। আপনের হোটেলে আইতাছি…তহন কমুনে?”
“ঠিক আছে।” একটু ভেবে নিলো ছফা। “আর ঐ বাবুর্চি ছেলেটার সাথে কি কথা বলা যাবে?”
“বেটি তো ঐ পোলারে কবেই চাকরি নট কইরা দিসে।”
“বলেন কি?” অবাক হলো ছফা।
“পোলাটা যে আমার লগে মিলামিশা করতো হেইটা মনে লয় বেটি বুইঝা গেছিলো।”
“ঐ মহিলা কিভাবে জানতে পারলো এটা? সে কি আপনাদেরকে একসাখে দেখেছিলো?”
“আরে না, আমাগো কুনোদিন দেখে নাই। তয়, আগেই কইছি..বেটি একটা ডাইনি…হে কেমনে জানি সব জাইনা যায়।”
“ও,” একটু আনমনা হয়ে গেলো ছফা।
“আমি কইলাম এর আগেও আপনাগো লগে কাম করছি।”
“কি?” বুঝতে না পেরে বললো সে।
“সাম্বাদিকগো কথা কইতাছি।”
“ও।”
বিগলিত হাসি দিলো ইনফর্মার।
“আপনার মোবাইলফোন আছে না?”
“আছে একটা…তয় সুবিধার না, কাচুমাচু খেয়ে বললো সে।
“বুঝলাম না?”
“আমারে ফোন করন যায়…আমি কাউরে ফোন করতে পারি না।”
ছফা বুঝতে না পেরে চেয়ে রইলো।
“বুঝলেন না? ডিচপ্লে আন্ধার হইয়া গেছে।”
“ও,” হেসে বললো ছফা।
“সমস্যা নেই আমিই কল করবো। নাম্বারটা দিন।”
আতর আলী ফোন নাম্বারটা মুখস্ত বলে গেলে ছফা তার ফোনে সেভ করে রাখলো। “তাহলে রাতে কথা হবে। আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো।”