কেএসকের মনে হলো আগামী কয়েকমাস কোনো মাংস খেতে পারবে। ঠিক এমন সময় দরজায় নক হলো। সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালেন ডাক্তার।
“জাওয়াদ আসছে মনে হয়।” কথাটা বলে মি. খান নিজেই উঠে গেলো দরজা খুলে দিতো।
“স্যার!” ঘরে ঢুকেই উদ্বেগের সাথে বললো জাওয়াদ। “সুন্দরপুরের এসপি বলেলো ছফাসার নাকি ঐ মহিলার বাড়িতে গেছেন। উনিও ফোন দিয়েছিলেন কিন্তু উনার কলটাও রিসিভ করা হয় নি। উনাকে এক্ষুণি ফোর্স নিয়ে ঐ বাড়িটা রেইড দিতে বলে দিয়েছি।” হরবর করে বলে গেলো নুরে ছফার সহকারি।
কেএসকে পেছন ফিরে তাকালো ডাক্তারের দিকে। ভদ্রলোক ভুরু কুচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন।
“আপনি না বললেন মুশকানকে পুলিশ কাস্টডিতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে?”
মাথা দোলালো মি. খান। “আসলে ছফা মুশানের বাড়িতে গেছে…মহিলা নিজেই ওরে ফোন কইরা দেখা করতে বলছে। ঐ বাড়িতে ঢুকার আগে সে আমারে ফোন দিয়া এইটা জানাইছিলো।”
ডাক্তার আর কিছু বললেন না। তাকে যে ধোঁকা দিয়ে কথা আদায় করা হয়েছে সেটা ভালোমতোই বুঝতে পারছেন এখন। “আমার মনে হয়। আপনারা এখানে সময় নষ্ট না করে ওই লোককে বাঁচানোর চেষ্টা করলেই বেশি ভালো হয়।”
কেএসকে টের পেলো তার গায়ের পশম দাঁড়িয়ে গেছে।
“মুশকান কোনোভাবেই ধরা দেবে না। মরে যাবে, তবুও না!”
উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে দাঁড়ালো খোদাদাদ শাহবাজ খান।
“হয় সে আপনার ঐ লোককে মেরে ফেলবে, নয়তো সে নিজে মরবে।”
.
অধ্যায় ৪০
একটু আগে সুন্দরপুরের এসপি কল করেছিলো ছফার ফোনে, মুশকান সেটা ধরে নি। পর পর তিনবার চেষ্টা করেছে পুলিশের লোকটি। তার মানে ছফার ব্যাপারে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। সেটাই স্বাভাবিক। গভীর করে দম নিয়ে নিলো সে। তার সামনে যে বসে আছে তাকে নিয়ে এখন কোনো মাথাব্যথা নেই৷ পুরোপুরি জ্ঞান হারাবার পথে আছে সে। একটু আগে কোল থেকে পেপার-ক্লিপিংসের অ্যালবামটি মেঝেতে পড়ে গেছে। এখন ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে সেটার দিকে। সেই দৃষ্টিতে শুধুই অসহায়ত্ব। তাকে যে ড্রাগস দেয়া হয়েছে সেটা কাজ করে পা থেকে, তারপর আস্তে আস্তে উপরে উঠতে শুরু করে। অবশ হতে থাকে হাত-মুখ। শেষে পুরোপুরি অচেতন। ক্লিপিংসের অ্যালবামের পাতার দুই কোণে মাখিয়ে রেখেছিলো সে। খুবই শক্তিশালী ডোজের একটি ড্রাগস। আঙুল থেকে সামান্য পরিমাণও যদি জিভে লাগে কাজ হয়ে যায়।
আজ বিকেলের দিকে খুব দ্রুত সে বুঝতে পেরেছিলো ঘটনা কোন দিকে মোড় নিচ্ছে। যে এসপি তার সেবা করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করে সে তার ফোন ধরছে না। যে এমপি উদগ্রীব হয়ে ঢাকা থেকে বার বার ছুটে আসে তার সান্নিধ্য পাবার আশায়, তাকে পাবার জন্য হুমকি-ধামকি পর্যন্ত দিতে পারে, সেও হাত-পা গুটিয়ে ফেলেছে আচমকা।
এদিকে বিকেলের শেষের দিকে সার্ভিল্যান্স ক্যামেরায় দেখেছে তার বাড়ির সামনে এসে নজর রাখতে শুরু করেছে দু-জন মানুষ। গত কয়েক দিনের ঘটনা আর এইসব এক করে খুব দ্রুত সে বুঝে যায় কি ঘটতে চলেছে। সে ভাবে নি ঢাকা থেকে কোনো পুলিশ এসে তার পেছনে লেগেছে। যদি বুঝতো বহূ আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতো।
যাহোক, সন্ধ্যা নামার আগেই বুঝে যায় খুব দ্রুতই ধরা পড়তে যাচ্ছে। বাড়ি থেকে বের হওয়াটাও সম্ভব নয়। আবার পেছন দিক দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পথটা সে নিজেই কয়েক মাস আগে বন্ধ করে দিয়েছে কুমিরের চাষ করে। সে জানে না তার ব্যাপারে পুলিশ কতোদূর জানতে পেরেছে, কিভাবে জানতে পেরেছে। এখন সবটাই পরিস্কার তার কাছে। অনেক কষ্টে শেষ পর্যন্ত কঠিন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে-এই দুর্গতুল্য বাড়িতে অনেক কিছু আছে যেগুলো অন্য কারোর হাতে পড়ার আগেই ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এটা খুব জরুরি।
মুশকান এও বুঝতে পারছে যা করার দ্রুত করতে হবে। ঘরের এককোণে রাখা মনিটরটি চালু করে দিলো সে। ছয়টি উইন্ডো ভেসে উঠলো পদায়। সবগুলো উইন্ডোতে এই বাড়ির সার্ভিল্যান্স ক্যামেরাগুলোর ফিড দেখা যাচ্ছে। রিমোটের চেয়ে সামান্য বড় একটা জয় স্টিক হাতে তুলে নিয়ে বাইরের মেইনগেটের উপরে যে ক্যামেরাটি আছে সেটা নিয়ন্ত্রণ করলো। মেইনগেটের বাইরে সাদাপোশাকের দু-জন লোককে দেখতে পেলো সে। দু জনেই সিগারেট ফুকছে গেটের ওপাশে দাঁড়িয়ে। আর গেটের ভেতরে, একপাশে ছোট্ট একটা টুলের উপর বসে আছে দারোয়ান ইয়াকুব।
দরজা দিয়ে কেউ ঢুকছে টের পেয়ে সেদিকে তাকালো মুশকান। গোরখোদক ফালু দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।
নুরে ছফা এখনও পুরোপুরি অচেতন হয়ে যায় নি। সে হয়তো হাত-পা নাড়াতে পারছে না, মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে পারছে না কিনতু সবই দেখতে পাচ্ছে। সম্ভবত ফালুকে ঘরে ঢুকতে দেখে সে আতঙ্কিত হয়ে উঠলো, আধো অচেতনে থেকেও আতঙ্ক গ্রাস করলো তাকে।
একটু আগে এসপি ফোন করার পর পরই ইন্টারকমটা তুলে রাতকানা মেয়েটিকে বলেছিলো, সে যেনো তার ভাইকে এক্ষুণি উপরতলায় পাঠিয়ে দেয়। কথাটা শুনে সাফিনা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছিলো।
“আমি জানি সে তোমার ঘরে লুকিয়ে আছে,” বেশ জোর দিয়ে। বলেছিলো মুশকান। দারোয়ান আর সাফিনার সাহায্যে সে যে এই বাড়িতে ঢুকেছে সেটাও সিসিক্যামে দেখেছিলো। “তোমার ভাইয়ের ভালোর জন্যই বলছি…ওকে উপরে পাঠিয়ে দাও। বাইরে পুলিশ আছে। ও পালাতে পারবে না। আমি ওকে বাড়ি থেকে বের করার ব্যবস্থা করছি।” এ কথা বলেই ইন্টারকমের রিসিভারটা নামিয়ে রাখে সে।