“ছফা তো কোনো রেসপন্স করতাছে না!” চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো কেএসকে। আর কোনো কথা না বলে ফোনটা জাওয়াদের হাতে দিয়ে দিলো সাবেক ডিবি কর্মকর্তা।
ছেলেটা কানে ফোন চেপে বলতে লাগলো, “স্যার? স্যার, আমি জাওয়াদ..স্যার?” ফ্যালফ্যাল চোখে ছেলেটা তাকালো কেএস খানের দিকে।
“কইলাম না, কোনো রেসপন্স করতাছে না,” অনেকটা বিড়বিড় করে বললো ক্রিমিনোলজির শিক্ষক।
“ছফা স্যার কিছুই বলেন নি?”
মাথা দোলালো সে।
“তাহলে ফোনটা কে রিসিভ করেছে?”
ছেলেটার দিকে তাকালো সাবেক ইনভেস্টিগেটর। “কলটা কাটছেন তো, নাকি?”
“ওহ, সরি।” কলটা কেটে দিয়ে জানতে চাইলো জাওয়াদ, “এখন তাহলে কি করবো আমরা?”।
“বুঝবার পারতাছি না,” চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো মি. খান। তার মাথায় নানান আশংকা ঘুরপাক খাচ্ছে। “মনে হয় একবার একটু দু-হা করলো…তারপর চুপ।”
“ঘটনা কি?”
যেনো সম্বিত ফিরে পেলো কেএসকে, তারপর ঝটপট বলতে লাগলো, “তুমি সুন্দরপুরে এসপিরে ফোন দাও…ওরে বো ছফার ব্যাপারে কিছু জানে কিনা…ছফা কই আছে সেই ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলো…জলদি করো..আর আমি একটু ডাক্তারের সাথে কথা বইলা আসতেছি,” কথাটা বলেই পেছন ফিরে ডাক্তারের অ্যাপার্টমেন্টের দরজার দিকে পা বাড়ালো আবার।
কলিংবেল বাজাতেই ডাক্তার নিজেই এসে দরজা খুলে দিলেন। কেএস খানকে দেখে অবাক হলেন ভদ্রলোক। “আপনি!”
“সরি…একটা জরুরি দরকারে আপনেরে আবার ডিস্টার্ব করতে হইলো।”
.
অধ্যায় ৩৯
“কি?” বেশ রহস্য করে বললো মুশকান জুবেরি, “তুমিও কি ঐ কেএসকের মতো মনে করো, আমি অন্য কেউ?” ছফার মোবাইলফোনের ডিসপ্লেতে। কেএসকে নামটা সে দেখেছে।
কিনতু যাকে বললো সে চোখের পাতা খুলে রাখতেই বেগ পাচ্ছে। এখন। মুখ দিয়ে শব্দ বের করতে গিয়ে আবারো জড়িয়ে গেলো।
ছফার গালে আলতো করে টোকা দিয়ে লম্বা করে ঘ্রাণ নিলো সে। এটা করার সময় চোখ দুটো কয়েক মুহূর্তের জন্য বন্ধ করে ফেললো। “তোমাকেও অপচয় করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।”
মুচকি হেসে আবার নিজের আসনে ফিরে গেলো। ছফার দুলুঢুলু চোখে আতঙ্কের প্রচ্ছায়া দেখা যাচ্ছে এখন।
“ভয় পাচ্ছো?” স্থিরচোখে চেয়ে রইলো কয়েক মুহূর্ত। হঠাৎ করেই গুনগুন করে গাইতে শুরু করলো মুশকান :
“তোমায় কিছু দেব বলে চায় যে আমার মন, নাই-বা তোমার থাকল প্রয়োজন।
যখন তোমার পেলেম দেখা, অন্ধকারে একা একা ফিরতেছিলে বিজন গভীর বন।
ইচ্ছা ছিল একটি বাতি জ্বালাই তোমার পথে, নাই-বা তোমার থাকল প্রয়োজন।”
গানটা থামিয়ে গভীর করে নিঃশ্বাস নিলো। “তোমার শরীরের ঘ্রাণটা বেশ…খেতে দারুণ লাগবে।”
ছফা কিছু বলার চেষ্টা করেও বলতে পারলো না।
তর্জনি নাড়িয়ে মানা করলো মুশকান। “না…আমি আমার কথা বলছি।” তারপর আবারো হাসি, আবারো রহস্যময় চাহনি। “ওদের কিন্তু আমি একা খাই নি। রবীন্দ্রনাথে যারা খেতে আসে তারাও ওদের স্বাদ পায়!”
এমন অবস্থায়ও ছফা আৎকে উঠলো কথাটা শুনে।
“আর তারা সবাই বেশ আয়েশ করে ওদের খায়?”
বিস্ফারিত চোখে চেয়ে রইলো ইনভেস্টিগেটর। সেও ঐ রেসটুরেন্টে খেয়েছে। আয়েশ করেই খেয়েছে!
“ওদের খেতে তোমার কেমন লেগেছে?”
ছফার মনে হলো সে বমি করে দেবে। রাগে কাঁপতে লাগলো তার সারা শরীর। আতঙ্কের সাথে টের পেলো বমিটা বোধহয় এবার আর আটকাতে পারবে না।
“চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই। তুমি এখন কথা বলতে পারবে না, হাতঘড়িতে সময় দেখলো। কিছুক্ষণ পর আমার কথাও শুনতে পাবে না তুমি। আর এতোক্ষণ ধরে আমি যা বললাম সে-সব কথা অন্য কাউকে শোনানোর সুযোগ তুমি পাবে না। তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছো?”
নুরে ছফা জোর করে চোখের পাতা খুলে রাখার চেষ্টা করলো।
*
“এইটা কেমনে সম্ভব?”
একটু আগে যেখানে বসেছিলো ঠিক সেখানেই আবারো বসে আছে কেএসকে। ডাক্তার আসকারও আগের চেয়ারে বসে আছেন, তবে জাওয়াদ এখন ঘরে নেই।
“এইটা তো কোনো যুক্তি-বুদ্ধিতে মিলানো যাইতাছে না।”
ডাক্তার আসকার মাথা নেড়ে সায় দিলেন। “আপনি কেন, কেউই এটা বিশ্বাস করবে না। করতে পারবে না। আমেরিকা থেকে যে ডাক্তার এখানে জয়েন করেছিলো তারও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছিলো। কিনতু ঘটনা সত্যি।”
আরেকবার বিস্মিত হলো কেএস খান। “কি কারণে এমনটা হইছে তা কি আপনেরা জানেন? মানে আপনে নিজেও একজন নামকরা ডাক্তার…আপনের তো আইডিয়া থাকার কথা?”
ডাক্তার আসকার ইবনে সায়িদ গম্ভীর হয়ে গেলেন। তার মুখ থমথমে। “এটা মেডিকেল সায়েন্স দিয়ে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। অন্তত আজকের দিন। পর্যন্ত এটা অব্যাখ্যাতই বলতে পারেন।”
“আপনে মুশকানুরে এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করেন নাই?”
আলতো করে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ডাক্তার। “করেছিলাম…এরকম একটি বিস্ময়কর ঘটনা আমাকেও দারুণ কৌতূহলি করেছিলো…কিন্তু মুশকান আমাকে যেটা বলেছিলো সেটা একেবারেই অবিশ্বাস্য।”
“কি বলছিলো আপনেরে?”
“আগেই বলেছি, আন্দিজের প্লেন ক্রাশের সময় ওরা মৃত সহযাত্রিদের লাশ খেতো। মেডিকেল সায়েন্সের স্টুডেন্ট হিসেবে ওগুলোর কোন অংশ খাওয়ার উপযোগী সেটা বাছাই করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো মুশকানের উপরেই” একটু থেমে গেলেন ডাক্তার। “কাকতালীয়ভাবে পর পর কয়েকদিন মানুষের শরীরের নির্দিষ্ট একটি অংশ ও খেয়েছিলো। ওর ধারণা এরফলেই ওর এমন পরিবর্তন। আই মিন, ঘটনাচক্রে আবিষ্কার করেছে সে।”