“আমারটা একটু ক্রিটিক্যাল,” তীর্যক হাসি দিলো কেএস খান। “কোনো পার্টিকুলার রোগ আমারে ভোগায় না…বলতে পারেন, সব রোগই পালা কইরা আমারে ভোগায়। একটা যায় তো আরেকটা আইসা হাজির।” আবারো হাসলো সে তবে নিঃশব্দে।
ভুরু তুললেন ডাক্তার। “মানে?”
“মানে খুব সোজা,” গাল চুলকালো সাবেক ডিবি অফিসার, “আমি প্রতিদিনই কোন না কোনো রোগে ভুগি…তয় কোনোটাই বড় কিছু না…সবই। সামান্য…এই ধরেন সর্দি, জ্বর, মাথাব্যথা, ঘাড় ব্যথা…”
“আপনার উচিত থরো চেকআপ করা।”
“আমার পারসোনাল ডাক্তার আছে…রেগুলার চেক-আপ করি।”
“উনি আপনার সমস্যাটা ধরতে পারছেন না?”
“উনি কেন…কেউই আমার সমস্যা ধরতে পারে না। সবাই কয়, আমার নাকি সব ঠিকঠাকই চলে…কিন্তু…”
“কি কি?”
“বাদ দেন আমার কথা, আপনের কথা বলেন।”
“আমি কি বলবো? আপনারা আমার কাছে কি চান তা-ই তো বুঝতে পারছি না।”
খোদাদাদ শাহবাজ খান কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে কথাগুলো গুছিয়ে নিলো। “আসল কথায় যাওনের আগে আপনেরে একটু ক্লিয়ার কইরা নেই, নাকটা এবার হাত দিয়ে চুলকে নিলো সে, “আমি কইলাম মিসেস জুবেরির কেসটা নিয়া তদন্ত করতাছি না। ঐটা করতাছে ডিবির সিনিয়র ইনভেস্টিগেটর নুরে ছফা।”
ডাক্তার একটু অবাকই হলেন কথাটা শুনে কিনতু নিজেকে সংযত রাখলেন বাড়তি আগ্রহ দেখানো থেকে।
“আমি রিটায়ার্ড মানুষ নতুন ইনভেস্টিগেটরগো ক্রিমিনোলজি পড়াই” একটু থেমে আবার বললো সাবেক ডিবি কর্মকর্তা, “নুরে ছফা আমারে বললো, আপনের ইন্টারভিউটা যে আমি নেই। বিষয়টা একটু ক্রিটিক্যাল তো, তাই।”
“ক্রিটিক্যাল কেন?” ভুরু কুচকে জানতে চাইলেন ডাক্তার।
“ছফা একটা কেস নিয়া তদন্ত করতাছে, তদন্ত করতে গিয়া মুশকান। জুবেরিরে প্রাইম সাসপেক্ট হিসাবে পাইছে সে। মহিলারে অলরেডি ইন্টেরোগেট করছে..উনার কাছ থেইকা অনেক কিছুই জানবার পারছে, মহিলা কিছু কথা স্বীকারও করছে…” একটু থেমে সামনে বসা ডাক্তারের অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করলো। “এখনও তার ইন্টেরোগেশন চলতাছে…কিছু ইনফর্মেশন ডাবল চেক করবার চাইতাছে ছফা। এই কাজটা ইনভেস্টিগেশনে খুবই ইম্পোটেন্ট। এইজন্য আপনের কাছে আসছি আমরা।”
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ডাক্তার আসকার। “মুশকানকে কি কেসে সন্দেহ করা হচ্ছে?”
কপাল চুলকালো কেএসকে। “এইটা তো এখন ডিটেইল বলা যাইবো না। …সংক্ষেপে মুশকানের বিরুদ্ধে অভিযোগটা বলি আপনেরে…তাইলে হয়তো সিচুয়েশনের গ্র্যাভিটিটা ধরবার পারবেন।” ডাক্তারকে দৃষ্টির তীরে বিদ্ধ করে রেখেছে সে। “পাঁচজন মানুষ হত্যার অভিযোগ আছে ওই ভদ্রমহিলার বিরুদ্ধে। লোকগুলারে নিয়া সে কি করছে সেইটা শুনলে আপনের পিলা চমকাইয়া যাইবো।”
ডাক্তার আসকার একটু চমকে উঠলেন। “মানে?”
“সেইটা আপনেরে পরে বলবো। তার আগে আপনের বোঝা উচিত আমাদের কাছে মিথ্যা বললে কি হইতে পারে। নুরে ছফা একটু ঘাড়ত্যাড়া মানুষ…এই পাঁচজন মানুষের হত্যা মামলায় আপনেরেও জড়াইয়া ফেলবো। সে, অভিযোগ আনবো আপনে ইচ্ছা কইরা সত্য লুকাইছেন। এমনও হইতে পারে, সে দাবি কইরা বসলো, আপনেও ঐ মুশকানের সাথে জড়িত
ডাক্তার ভয় না পাবার চেষ্টা করলেন।
“মুশকানের শেষ ভিক্টিমটা আবার প্রধানমন্ত্রীর অফিসের এক ক্ষমতাবান লোকের আপন ভাগিনা। মনে হইতাছে সে তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা অ্যাপ্লাই করবো।”
এবার ঢোক গিললেন ডাক্তার। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে তিনি ভড়কে গেছেন কথাটা শুনে।
“আদালতে আপনের অ্যাগেইনস্টে অভিযোগ প্রমাণ হইবো কি হইবো না তা তো জানি না…তয় আপনার রেপুটেশন যে নষ্ট হইবো তা বুঝবার পারছি।”
মাথা দোলালেন আসকার ইবনে সায়িদ। কথাটার সাথে দ্বিমত পোষন করে নাকি আক্ষেপে বোঝা গেলো না। আস্তে করে মাথা নীচু করে রাখলেন তিনি।
“তাছাড়া আপনের হাসপাতালের অনেকরে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও অনেক কিছু জানা যাইবো কিন্তু এইটা আমি চাই না। এইটা করলে ব্যাপারটা সবাই জাইনা যাইবো। আমি জানি আপনে সবই জানেন। তাই ভাবলাম, আপনেরে একটা চান্স দেয়া দরকার। কী বলেন?”
স্থিরচোখে চেয়ে রইলেন ডাক্তার আসকার, যেনো কী বলবেন সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
“এইসব ব্যাপারে যারে-তারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে খালি আপনেই না, আপনের ঐ হাসপাতালেরও রেপুটেশন নষ্ট হইবো। যতোদূর জানি, আপনে আবার হাসপাতালের একজন পার্টনারও।” একটু থেমে ভদ্রলোককে আবারো দেখে নিলো সে। “কিন্তু আমি চাই আপনে এই জঘন্য কেসটা থেইকা নিজেরে দূরে রাখেন।”
গভীর করে নিঃশ্বাস নিলেন ডাক্তার। “মুশকান কি বলেছে?” অনেকটা অসহায়ের মতো জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
মাথা দুলিয়ে জবাব দিলো কেএস খান। “সরি। এইটা বলা যাইবো না, টেকনিক্যাল সমস্যা আছে।”
কপালের বামপাশটা হাত দিয়ে ঘষতে লাগলেন ভদ্রলোক। কেএস খান বুঝতে পারলো ডাক্তার এখন চৌরঙ্গির মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে একটা পথ বেছে নিতে সাহায্য করা দরকার। আর সেই পথটা অবশ্যই সঠিক পথ।
“সহমরণে যায়েন না, ডাক্তার…” আস্তে করে বললো কেএসকে। “যে মারা যায় তার লগে কেউ সহমরণে গেলেও মৃতব্যক্তির কইলাম কোনো লাভ হয় না। সহমরণে যে যায় তারই ক্ষতি হয়।”
ডাক্তার আসকার ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে রইলেন। “আপনের জন্য কাজটা কিন্তু খুব সহজ…”