“না। ফারিহাপু, তুমি কি ছোটাচ্চুকে কেসটা নিতে রাজি করাতে পারবে?”
“কিন্তু আগে শুনি কেন রাজি হতে চাচ্ছে না। সে তো দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা কেসের জন্যে বসে থাকে। এখন পেয়েও নিচ্ছে না, ব্যাপার কী?”
টুনি বলল, “আমি ঠিক জানি না, ছোটাচ্চুর কথা শুনে মনে হলো কেসটা ভূতের, আর ছোটাচ্চু ভূতকে খুব ভয় পায়।”
“শাহরিয়ার ভূতকে ভয় পায়?”
“হ্যাঁ। ভূত আর মাকড়সা।”
ফারিহা বলল, “মাকড়সাকে ভয় পাওয়া না হয় বুঝতে পারলাম কিন্তু ভূতকে ভয় পায় মানে কী? সে কোনখানে ভূত দেখেছে?”
টুনি ফারিহার কথা শুনে আরো উৎসাহ পেল, বলল, “আমিও তো তাই বলি! যেটা কেউ কখনো দেখে নাই সেটাতে ভয় পাওয়ার কী আছে! দেখা পেলে আরো ভালো, ধরে নিয়ে আসা যাবে।”
ফারিহা থতমত খেয়ে বলল, “ধরে নিয়ে আসা যাবে?”
“হ্যাঁ। বড় হলে খাঁচায় ভরে, মাঝারি সাইজ হলে বোতলে ভরে আর ছোট হলে শিশিতে ভরে”
ফারিহা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, একটা ভূতকে যে বোতল কিংবা শিশিতে ভরে আনা যায় সেটা সে কখনো চিন্তা করেনি। টুনি বলল, “ফারিহাপু, তুমি প্লিজ ছোটাচ্চুকে কেসটা নিতে একটু রাজি করাবে? প্লিজ প্লিজ? আমার খুব ভূত দেখার শখ।”
ফারিহা বলল, “কিন্তু আমি তো ভূতের ক্লায়েন্ট সম্পর্কে কিছুই জানি না। শাহরিয়ারকে কী বলব? কীভাবে বলব?”
টুনি বলল, “সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমি যে তোমাকে বলেছি সেটা কিছুতেই বলতে পারবে না। সেটা বললে ছোটাচ্চু আমাকে কাঁচা খেয়ে ফেলবে।”
ফারিহা কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করে বলল, “যদি এই ভূতের ক্লায়েন্ট কারা সেটা জানতে পারতাম তাহলে চেষ্টা করে দেখা যেত–’
টুনি বলল, “এক সেকেন্ড! ছোটাচ্চুর এই ফোনে তার টেলিফোন নম্বর আছে। এই মাত্র ফোন করেছিল।”
“বের করে বলল দেখি।“
টুনি ভূতের পার্টির টেলিফোন নম্বরটা বের করে ফারিহাকে জানিয়ে দিল।
ছোটাচ্চুকে ফোনটা ফিরিয়ে দিয়ে টুনি তাড়াতাড়ি চলে যাবার চেষ্টা করছিল, ছোটাচ্চু তাকে থামাল। জিজ্ঞেস করল, “এতক্ষণ কার সাথে গুজগুজ-ফুসফুস করছিলি?”
টুনি বলল, “এই তো!”
“এই তো মানে?”
টুনি কোনো উত্তর না দিয়ে উদাস মুখে দাঁড়িয়ে রইল, একটু আগে ছোটাচ্চু নিজেও বলেছে এই তো!’ তখন টুনি জানতে চায়নি এই তো’ মানে কী? এখন ছোটাচ্চু কেন জানতে চাইছে? ডিটেকটিভ হবার পর মনে হয় ছোটাচ্চুর কৌতূহল বেড়েছে, মোবাইল টিপে দেখে নিল টুনি কাকে ফোন করেছে, ফারিহার নাম দেখে চোখ কপালে তুলে বলল, “তুই ফারিহাকে ফোন করেছিস?”
টুনি মাথা নাড়ল।
“কেন?”
“এই তো!”
ছোটাচ্চু রেগে গেল, বলল, “এই তো এই তো করবি না, মাথা ভেঙে দেব। কেন ফোন করেছিলি?”
টুনি খুব দ্রুত চিন্তা করতে লাগল বিশ্বাসযোগ্য কী বলা যায়। তারপর বলল, “একটা শব্দের ইংরেজি জানার জন্যে।”
ছোটাচ্চু মুখ হাঁ করে বলল, “শব্দের ইংরেজি?”
“হ্যাঁ।”
“আমাকে জিজ্ঞেস করলি না কেন?”
“তুমি বাংলাই ভালো করে জানোনা ইংরেজি কতটুকু জানবে?”
ছোটাচ্চু থমথমে গলায় বলল, “আমি বাংলা জানি না?”
“নাহ্। মনে নাই হেসেছে না বলে তুমি বলো হাসি করেছে! আমরা বলি অমুক গেছে, তমুক যাবে আর তুমি বল অমুক গেছে তমুক গাবে।”
ছোটাচ্চু মেঘস্বরে বলল, “আমি কখন এইটা বলি?”
টুনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ঘাড় ঝাঁকাল, দাদুর কাছে সবাই শুনেছে ছোটাচ্চু ছেলেবেলায় এভাবে কথা বলত, সেই বিষয়টাকে এভাবে বেশি দূর টানাটানি করা বুদ্ধির কাজ হবে না। টুনি আবার ঘর থেকে বের হবার চেষ্টা করল, ছোটাচ্চু তখন হুংকার দিয়ে তাকে থামাল, “তুই কোন শব্দের ইংরেজি জানার জন্যে আমাকে জিজ্ঞেস না করে ফারিহাকে ফোন করেছিস?”
টুনি শুকনো মুখে সেঁক গিলে বলল, “শব্দটা হচ্ছে-শব্দটা হচ্ছে—ইয়ে–” হঠাৎ করে টুনির ঠিক শব্দটা মনে পড়ে গেল, সে বলল, “শব্দটা হচ্ছে অভিমান।”
“অভিমান?” ছোটাচ্চু ভুরু কুঁচকে বলল, “অভিমানের ইংরেজি জানিস না? অভিমানের ইংরেজি হচ্ছে-ইয়ে মানে–” ছোটাচ্চু মাথা চুলকাতে থাকে, টুনি সেই ফাঁকে দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
.
বিকালবেলা ফারিহা এসে হাজির আর তাকে দেখে ছোটাচ্চুর মুখ একশ’ ওয়াট বাতির মতো জ্বলে উঠল। সবগুলো দাঁত বের করে বিশাল একটা হাসি দিয়ে বলল, “আরে ফারিহা তুমি?”
“হ্যাঁ। আমি কি তোমাদের বাসায় আসতে পারি না?” “অবশ্যই আসতে পারো।”
ফারিহা বলল, “বিশেষ করে যখন তোমার জন্যে বিশাল একটা কাজ করে ফেলেছি তখন তো আসতেই পারি।”
ছোটাচ্চুর মুখ আনন্দে দুইশ’ ওয়াট বাতির মতো জ্বলে উঠল, বলল, “আমার জন্যে কী কাজ করেছ?”
ফারিহা চোখ বড় বড় করে বলল, “তোমার আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সির জন্যে একটা বিশাল ক্লায়েন্ট জোগাড় করেছি।”
“সত্যি?” ছোটাচ্চুর মুখ এবার তিনশ’ ওয়াট বাতির মতো জ্বলতে লাগল।
“হ্যাঁ। এক ভদ্রলোকের গাজীপুরের দিকে একটা বাগানবাড়ি আছে সেই বাড়িতে রাতে কেউ থাকতে পারে না। ভূতের নাকি উপদ্রব।” ফারিহা শরীর দুলিয়ে হি হি করে হাসতে লাগল।
ছোটাচ্চুর তিনশ’ ওয়াট মুখটা দেখতে দেখতে চল্লিশ ওয়াটে নেমে এলো। ফারিহা সেটা না দেখার ভান করে বলল, “তোমাকে সেই বাগানবাড়িতে এক রাত থেকে রহস্য উদ্ঘাটন করে দিতে হবে। বলে দিতে হবে ওটা কী আসলেই ভুত নাকি অন্য কিছু!”
ছোটাচ্চুর মুখটা চল্লিশ ওয়াট থেকে আরো নিচে নেমে পঁচিশ ওয়াটের বাতির মতো টিমটিম করে জ্বলতে জ্বলতে একসময় পুরোপুরি ফিউজ হয়ে গেলে। ছোটাচ্চুর মুখটা দেখে ফারিহার রীতিমতো মায়া হচ্ছিল কিন্তু সে না দেখার ভান করল, বলল, “আমি তোমার পক্ষে সব কথা পাকা করে ফেলেছি।”