মৌটুসী কিছু বলার আগে টুনি বলল, “না। আসে নাই।”
“আসে নাই?”
“না। আর আসবে না।”
“আসবে না? কেন আসবে না?”
“তার কারণ যে গোপনে চিঠি লিখত সে ধরা পড়ে গেছে।”
সবাই চিৎকার করে বলল, “কে? কে চিঠি লিখত?”
“আমাদের ক্লাশের?” “ছেলে না মেয়ে?”
”নাম কী?”
টুনি বলল, “আমি তাকে বলেছি সে যদি আর গোপন চিঠি না লিখে তাহলে তার নাম আমি কাউকে বলব না। সে রাজি হয়েছে।”
“প্লিজ প্লিজ আমাদের বলো, আমরা কাউকে বলব না।”
টুনি বলল, “আমি মৌটুসীকে নামটা বলেছি, তোমরা মৌটুসীকে জিজ্ঞেস করো। সে যদি বলে আমার কোনো আপত্তি নাই।”
তারপর টুনি হেঁটে চলে গেল আর সবাই তখন মৌটুসীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তারা ভেবেছিল মৌটুসী গোপন পত্র লেখকের নাম বলবে।
কিন্তু দেখা গেল মৌটুসীরও নাম বলতে আপত্তি আছে! সে মুখ। শক্ত করে বসে রইল।
এরপর থেকে মৌটুসীর কাছে আর কোনোদিন কোনো গোপন চিঠি আসেনি।
২. টুনি ছোটাচ্চুর ঘরের সামনে
টুনি ছোটাচ্চুর ঘরের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, হঠাৎ ভেতর থেকে ছোটাচ্চুর উত্তেজিত গলার স্বর শুনে দাঁড়িয়ে গেল। ছোটাচ্চু বলছে, “না না না, এটা কিছুতেই সম্ভব না।”
সাধারণ কথাবার্তা না শুনলে ক্ষতি নেই কিন্তু কেউ যখন উত্তেজিত গলায় কথা বলে তখন সেটা শুনতে হয় আর কথাটা যদি ছোটাচ্চু বলে তাহলে কথাটা অবশ্যই ভালো করে শোনা দরকার। টুনি তাই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গেল, শুনল ছোটাচ্চু বলছে, “দেখেন, আমাদের আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সি তৈরি হয়েছে মানুষের সমস্যা মেটানোর জন্যে। এটা মোটেও ভূতের সমস্যার জন্যে তৈরি হয় নাই। আমরা ভৌতিক সমস্যা মেটাতে পারব না।”
বোঝাই যাচ্ছে ছোটাচ্চু টেলিফোনে কথা বলছে, অন্য পাশ থেকে কী বলছে টুনি সেটা শুনতে পেল না, যেটাই বলুক সেটা শুনে ছোটাচ্চু মোটেও নরম হলো না, আরো গরম হয়ে বলল, “আপনার মোটেও ডিটেকটিভ এজেন্সির সাহায্যের দরকার নাই। আপনার দরকার পীর ফকির না হলে সাধু-সন্ন্যাসী। তাদের কারো কাছ থেকে একটা হাই পাওয়ার তাবিজ নিয়ে নেন। দেখবেন সমস্যা মিটে যাবে।”
ছোটাচ্চু আবার চুপচাপ কিছু একটা সুনল, শুনে আরেকটু গরম হয়ে বলল, “আমি আপনার কোনো কথা শুনতে চাই না। আমি এক কথার মানুষ, আমি আপনাকে স্পষ্ট বলে দিচ্ছি, আমাদের এজেন্সি কখনো ভূত-প্রেত, জিন-পরী নিয়ে কাজ করে নাই, ভবিষ্যতেও করবে না। লাখ টাকা দিলেও না। আপনি শুধু শুধু আমার সময় নষ্ট করছেন।”
টুনি বুঝতে পারল কথা শেষ করে ছোটাচ্চু টেলিফোনের লাইনটা কেটে দিল। টুনি কিছুক্ষণ দরজার সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল তারপর কিছু জানে না শুনে না এরকম ভান করে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল। ছোটাচ্চু টুনিকে দেখে নাক দিয়ে ফোঁস করে একটা শব্দ করে বলল, “যত সব পাগল-ছাগল।”
টুনি জিজ্ঞেস করল, “কে পাগল-ছাগল?”
ছোটাচ্চু হাত দিয়ে পুরো ব্যাপারটা উড়িয়ে দেবার ভঙ্গি করে বলল, “এই তো!”
তার মানে ছোটাচ্চু টুনিকে ভূত পার্টির কথা বলতে চাইছে। না, টুনি তাই ভান করল সে কিছুই শুনে নাই। একটু এদিক-সেদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তোমার নতুন কোনো কেস এসেছে ছোটাচ্চু?”
ছোটাচ্চু মাথা নাড়ল, “নাহ্।”
টুনি শেষবার চেষ্টা করল, “কেউ কখনো ফোন-টান করে না?”
ছোটাচ্চু ভুরু কুঁচকে টুনির দিকে তাকাল, তারপর বলল, “করে আবার করে না।”
এই কথাটার অর্থ যা কিছু হতে পারে। টুনি বুঝতে পারল ছোটাচ্চু ভূত পার্টির কথা নিজে থেকে বলবে না অন্য কোনো লাইনে চেষ্টা করতে হবে। টুনি খুব চাইছিল ছোটাচ্চু এই ভূত পার্টির কেস নিয়ে নিক কিন্তু কীভাবে সেটা করবে বুঝতে পারল না। সে খানিকক্ষণ চিন্তা করল তারপর বুঝতে পারল ফারিপুর লাইন ছাড়া গতি নেই। তাই তখন একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “ছোটাচ্চু, তোমার মোবাইল ফোনটা একটু দেবে?”
ছোটাচ্চু চোখ সরু করে জিজ্ঞেস করল, “কেন?”
মোবাইল ফোন দিয়ে কেউ কান চুলকায় না কিংবা চুল আঁচড়ায়, মোবাইল ফোন দিয়ে মানুষ টেলিফোন করে, কাজেই ছোটাচ্চুর এই প্রশ্নটার কোনো অর্থ নেই, এর উত্তর দেওয়ারও দরকার নেই। কিন্তু গরজটা যেহেতু টুনির তাই সে ধৈর্য ধরে উত্তর দিল, “একটা জরুরি ফোন করতে হবে।”
ছোটাচ্চু মুখের মাঝে একটা বিরক্তির ভান করে ফোনটা টুনির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “নে। বেশিক্ষণ লাগাবি না কিন্তু, আমার কিছু জরুরি ফোন আসবে।”
টুনি মাথা নেড়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বের হয়ে গেল। ছোটাচ্চু যেন শুনতে না পায় সেরকম দূরে গিয়ে ফোনটা টেপাটেপি শুরু করে
ফারিহার নাম্বারটা বের করে ডায়াল করল। ডায়াল টোন একটা দেশাত্মবোধক গান, বেশ সুন্দর, গানটা যখন উপভোগ করতে শুরু করেছে তখন ফারিহার গলার স্বর শুনতে পেল। খানিকটা ধমকের সুরে বলল, “কী সাহেব? আমাকে কী মনে করে?”
টুনি বলল, “ফারিহাপু আমি টুনি।”
“ও টুনি! আমি ভাবলাম শাহরিয়ার–তা কী খবর? “ফারিহাপু, তোমাকে একটা কাজে ফোন করেছি।”
“কী কাজ?”
“কাজটা একটু গোপনীয়। আমি যে তোমাকে ফোন করছি ছোটাচ্চু সেটা জানে না।”
ফারিহা শব্দ করে হাসল, বলল, “জানার দরকার নেই। কী কাজ বলো?”
টুনি বলল, “ছোটাচ্চুর একটা কেস এসেছে। ছোটাচ্চু কেসটা নিতে চাচ্ছে না।”
“কী বললে? শাহরিয়ারের কেস্ এসেছে সে কেস নিতে চাচ্ছে না?”