টুনি জিজ্ঞেস করল, “তার আগে বলো, চিঠিটা পেলে কেমন করে? খামে করে বাসার ঠিকানায় পাঠিয়েছে?”
“না।”
“তাহলে?” “আমার ব্যাগের ভিতরে ছিল।”
“ও” টুনি বলল, “তাহলে এইটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো দরকার নাই। ক্লাশের কেউ তোমার সাথে মজা করছে।”
মৌটুসী বলল, “কিন্তু আমি জানতে চাই। তুমি না এত বড় ডিটেকটিভ, পত্রিকায় তোমার ছবি ছাপা হয়, আর এইটা বের করতে পারবে না?”
“পারব।”
“তাহলে বের করো।”
“আমার এই চিঠির একটা কপি দরকার।”
“ফটোকপি?”
“না ফটোকপি লাগবে না। আমি চিঠিটা পড়ি তুমি একটা কাগজে লিখে দাও।”
টুনি তখন চিঠিটা পড়ল আর মৌটুসী সেটা কাগজে লিখে দিল। মৌটুসীর লেখা চিঠিটা হাতে নিয়ে টুনি জিজ্ঞেস করল, “তুমি কি কাউকে সন্দেহ করো?”
মৌটুসী মুখ শক্ত করে বলল, “সেটা আমি কেন তোমাকে বলব?”
“একজন ডিটেকটিভ যখন কেস সলভ করতে যায় তখন তাকে সবকিছু বলতে হয়।”
“আমি যদি বলে দেই তাহলে তুমি কীসের ডিটেকটিভ?”
“তুমি যদি জানো তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?”
“আমি দেখতে চাই তুমি কত বড় ডিটেকটিভ।”
তাদের কথা শুনে ক্লাশের একটা ছেলে এগিয়ে এলো, জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
টুনি বলল, “কিছু না।”
মৌটুসী বলল, “টুনি কত বড় একজন ডিটেকটিভ সেইটা পরীক্ষা করে দেখছিলাম।”
ছেলেটা জিজ্ঞেস করল, “কীভাবে?”
“আমার কাছে কে যেন চিঠি লিখছে। টুনিকে বলছিলাম বের করতে কিন্তু টুনি সেটা বের করতে পারছে না।”
“কী চিঠি লিখছে?”
মৌটুসী বেশ উৎসাহ নিয়ে চিঠিটা বের করে ছেলেটাকে দিল। ছেলেটা চিঠিটা হাতে নিয়ে বলল, “এ তো দেখি উল্টা লেখা!”
টুনি বলল, “কাগজটা উল্টো করে জানালার সামনে ধরো। তাহলে পড়তে পারবে।”
ছেলেটা জানালার সামনে ধরে চিঠিটা পড়ে চোখ বড় বড় করে বলল, “কী ভয়ঙ্কর!”
কাজেই কিছুক্ষণের মাঝেই ক্লাশের সবাই জেনে গেল মৌটুসীর কাছে কে যেন গোপনে ভয়ঙ্কর চিঠি পাঠাচ্ছে! সবাই মৌটুসীর কাছে সেই ভয়ঙ্কর চিঠি দেখতে আসা শুরু করল। মৌটুসী মনে হয় ব্যাপারটা বেশ পছন্দই করল। যখনই কেউ আসছে তাকেই সে খুব উৎসাহ নিয়ে চিঠিটা দেখাতে লাগল। মৌটুসী সব সময়েই সবার কাছ থেকে গুরুত্ব পেতে চায়।
পরের দিন মৌটুসী আরেকটা চিঠি নিয়ে এলো, এই চিঠিটা আগের থেকেও লম্বা, আগের থেকেও বড়। এই চিঠিটাও কোনো একজন তার ব্যাগের ভিতরে রেখে দিয়েছে। চিঠিটা আরো ভয়ঙ্কর। এই চিঠিটাতে শুধু যে মৌটুসীকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তা নয়, শাস্তিটা কী হতে পারে সেটার বর্ণনা দেওয়া গেছে। (চুলের মাঝে চিউয়িংগাম লাগিয়ে দেওয়া, ব্যাগের ভেতর বিষ পিঁপড়া রেখে দেওয়া, শরীরের মাঝে মাকড়সা ফেলে দেওয়া, বাসার ভিতরে সাপ ছেড়ে দেওয়া) এরকম ভয়ঙ্কর চিঠি পেয়েও মৌটুসী খুব ঘাবড়ে গেল না! চিঠিটা টুনির হাতে দিয়ে বলল, “এই যে আরেকটা চিঠি!”
টুনি চিঠিটার মাঝে চোখ বুলিয়ে মৌটুসীকে ফিরিয়ে দিল। মৌটুসী জিজ্ঞেস করল, “পড়বে না?”
“নাহ্। পড়ার দরকার নাই।”
“কেন?”
“কী লিখতে পারে আমি জানি।”
“তাহলে বলো, কে লিখছে এই চিঠিগুলো।”
টুনি চুপ করে রইল। মৌটুসী ঠোঁট উল্টে বলল, “যদি বলতে না পারো তাহলে স্বীকার করে নাও তুমি বের করতে পারবে না।”
টুনি এবারেও কথা বলল না। মৌটুসী তখন বলল, “তুমি কচু ডিটেকটিভ।”
টুনি কোনো কথা না বলে মৌটুসীর দিকে তাকিয়ে একটু হাসল।
টুসী বলল, “কী হলো তুমি হাসছ কেন বোকার মতো?”
টুনি বলল, “তার আগে বলো তুমি কেন প্রত্যেক দিন নিজের কাছে একটা করে চিঠি লিখো? তোমার কোনো কাজ নাই?”
মৌটুসীর মুখটা হাঁ হয়ে গেল, তোতলাতে তোতলাতে বলল, “আ আ-আমি?”
টুনি মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ। তোমার প্রথম চিঠিটা পড়েই আমি বুঝেছিলাম, এরকম চিঠি তুমি নিজে ছাড়া আর কেউ লিখবে না।”
মৌটুসী গলা উঁচিয়ে বলল, “না–আমি লিখি নাই।”
টুনি গলা নামিয়ে বলল, “মনে আছে আমি তোমাকে দিয়ে তোমার চিঠি কপি করিয়েছিলাম? কেন করেছিলাম জানো?”
“কেন?”
“দেখার জন্যে গোপন চিঠি আর তোমার চিঠির বানান ভুল একরকম হয় কি না!”
মৌটুসী মুখ শক্ত করে বলল, “আমার কোনো বানান ভুল হয় না।”
“গোপন চিঠিতেও কোনো বানান ভুল হয় না। একটা ছাড়া—“
“কোনটা?”
“কী। ক দীর্ঘ ঈকার আর ক হ্রস্ব ইকার-এর পার্থক্যটা তুমি শিখো নাই, গোপন চিঠি যে লিখেছে সেও, শিখে নাই। লিখেছে তুমি কী তাই চাও? লেখার কথা ছিল তুমি কি তাই চাও?”
মৌটুসীর মুখটা লাল হয়ে উঠল, “পার্থক্যটা কী?”
“নার্গিস ম্যাডামকে জিজ্ঞেস কোরো।”
মৌটুসী বলল, “তোমার সব কথা ভুল।”
“ঠিক আছে।”
“তুমি কিছু জানো না।”
“ঠিক আছে।”
“তুমি কচু ডিটেকটিভ।”
টুনি বলল, “ঠিক আছে। শুধু একটা জিনিস।”
“কী জিনিস?”
“গোপন চিঠিগুলো তুমি কীভাবে পেতে?”
“আমার ব্যাগে।”
“তোমার ব্যাগে আমিও প্রত্যেক দিন একটা করে চিঠি দিয়েছি। আমার চিঠিগুলো তুমি পাও নাই, কেন জানো? তার কারণ তুমি কোনোদিন তোমার ব্যাগে কোনো চিঠি খুঁজে দেখো নাই! তুমি চিঠিগুলো নিজে বসে বসে লিখেছ, কেন ব্যাগে চিঠি খুঁজবে?”
মৌটুসী কেমন যেন ফ্যাকাসে হয়ে গেল, বলল, “তুমি কী লিখেছ চিঠিতে?”
“বাসায় গিয়ে পড়ে দেখো। তোমাকে বলেছি নিজেকে চিঠি লেখা বন্ধ করতে।”
ঠিক এরকম সময় কয়েকজন ছেলেমেয়ে তাদের দিকে এগিয়ে এলো। একজন মৌটুসীকে জিজ্ঞেস করল, “মৌটুসী, আজকে কোনো চিঠি এসেছে?”