“নিচে। দরজার কাছে রেখে দিব।”
“কেন?”
“সকালে উঠে যেন খুঁজতে না হয়। কুত্তাটাকে এমন ঝাড়পেটা দিমু যে এইটা আর এই জন্মে এই বাসায় আসবে না।”
“কিন্তু তুমি তো সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারো না।”
“মোবাইলে এলার্ম দিছি।”
“তুমি মোবাইলে এলার্ম দিতে পারো?”
“না। বড় খালুজান করে দিছে। কালকে কুত্তার জান শেষ।”
ঝুমু খালা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যেতে থাকে। টুনি ফিসফিস করে বলল, “সর্বনাশ!”
টুম্পাও ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল, “কেন?”
“কাল সকালে সত্যি সত্যি কুকুরকে ঝাড়পেটা করলে ঝামেলা হয়ে যাবে। ঝুমু খালাকে থামাতে হবে।” টুনি এক সেকেন্ড চিন্তা করল, চিন্তা করে বলল, “তুই নিচে যা। ঝুমু খালাকে কোনোভাবে ব্যস্ত রাখ।”
“তুমি কী করবে?”
“ঝুমু খালার ঘরে গিয়ে তার মোবাইলের এলার্ম এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিয়ে আসি।”
টুনি ঝুমু খালার ঘরের দিকে গেল আর ঝুমু খালাকে ব্যস্ত রাখার জন্যে টুম্পা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল।
ঝুমু খালার ঘরে মোবাইলটা খুঁজে বের করতে কোনো সমস্যা হলো না, টুনি কয়েক সেকেন্ডের মাঝে এলার্মের সময়টা এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিল। তারপর নিচে গেল দেখার জন্যে টুম্পা কীভাবে ঝুমু খালাকে ব্যস্ত রাখছে। নিচে গিয়ে দেখল টুম্পা মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে আছে আর ঝুমু খালা টুম্পার ডান পায়ের আঙুল ধরে টানাটানি করছে। টুনি জিজ্ঞেস করল, “কী হয়েছে?”
টুম্পা কিছু বলার আগেই ঝুমু খালা ঝংকার দিয়ে উঠল, বলল, “এই বাসায় কোনো সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ আছে? নাই? সিঁড়ি দিয়ে মানুষ হেঁটে হেঁটে নামে, আর এই মেয়ে নামে ফাল দিয়ে দিয়ে–”
টুম্পা ফিসফিস করে বলার চেষ্টা করল, “ফাল না, শব্দটা হচ্ছে লাফ।”
ঝুমু খালা আরো জোরে ঝংকার দিল, বলল, “থাউক, আমারে আর বেঙ্গলি শিখাতে হবে না।”
টুনি জিজ্ঞেস করল, “তারপর কী হয়েছে? টুম্পা পড়ে গেছে?”
“হ্যাঁ। পড়ে ঠ্যাংয়ে ব্যথা পেয়েছে। মনে হয় রগে টান দিছে।” টুম্পা টুনির দিকে তাকাল, টুনি চোখ টিপে দিল তখন টুম্পা বলল, “ঝুমু খালা, রগে টান মনে হয় বন্ধ হয়েছে। এখন ব্যথা নাই।”
ঝুমু খালা বলল, “রগে টান পড়লে এত সহজে বেদনা কমে না। মনে হয় গরম তেল দিয়ে মালিশ করতে হবে।”
টুম্পা বলল, “করতে হবে না ঝুমু খালা।”
ঝুমু খালা টুম্পার পায়ের আঙুলে একটা হ্যাঁচকা টান দিয়ে বলল, “তুমি বেশি কথা বোলো না, চুপ করে বসে থাকো।”
কাজেই টুম্পা চুপ করে বসে রইল আর ঝুমু খালা তার পায়ের আঙুল ধরে টানাটানি করতে লাগল। টুনি তাদেরকে সেই অবস্থায় রেখে উপরে উঠে গেল।
তিনতলায় গিয়ে সে শাহানাকে খুঁজে বের করল। তাদের বাসায় শাহানা হচ্ছে জ্ঞানী মানুষ। মন দিয়ে লেখাপড়া করে, পৃথিবীর সবকিছু জানে, কারো যখন কিছু জানতে হয় তখন সে শাহানার কাছে আসে।
টুনিও শাহানার কাছে এলো, শাহানা মোটা একটা বই পড়ছিল, বইটা নামিয়ে রেখে টুনির দিকে তাকাল। টুনি বলল, “শাহানাপু, তুমি কী ব্যস্ত?”
শাহানা বলল, “কী বলবি বলে ফেল।”
“মনে আছে একবার আমরা সবাই শিশু পার্কে গিয়েছিলাম। শান্ত ভাইয়ার কাছে একটা কোকের ক্যান ছিল, সেটা খুলতেই ভেতর থেকে সব কোক ফেনা হয়ে বের হয়ে শান্ত ভাইয়ার মুখ, পেট, বুক সব ভিজিয়ে দিয়েছিল?”
শাহানা মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ মনে আছে। শান্ত হচ্ছে একটা গাধা, কোকের মাঝে কার্বন-ডাইঅক্সাইড ডিজভ থাকে। যদি গরম করা হয় সেটা বের হয়ে আসে, আঁকালেও বের হয়ে আসে। এমনিতে দিনটা ছিল গরম আর গাধাটা তার ক্যানটা ঝাঁকাঝাঁকি করেছে, তাই যখন খুলেছে পুরো ক্যানের কোক কার্বন-ডাইঅক্সাইডের চাপে বের হয়ে এসেছে–মনে আছে গাধাটার কী অবস্থা হয়েছিল?”
টুনি মাথা নাড়ল, তারপর বলল, “একটা ছোট শিশি দিয়ে কি এ রকম কিছু করা সম্ভব?”
“কী রকম?”
“যে শিশিটা খুলতেই ভেতর থেকে সবকিছু হুস হুস করে বের হয়ে সবকিছু মাখামাখি করে ফেলবে?”
শাহানা সন্দেহের চোখে টুনির দিকে তাকাল, জিজ্ঞেস করল, “কেন?”
টুনি মাথা নিচু করে বলল, “প্লিজ শাহানাপু আজকে জিজ্ঞেস কোরো না। কালকে আমি নিজেই বলব।”
শাহানা একটু হাসল, বলল, “ঠিক আছে।” তারপর তার চশমা খুলে কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করল, তারপর বলল, “তোর সিক্রেট প্রজেক্টে তুই ঠিক কী করতে চাস আমি জানি না। ধরে নিচ্ছি কারো কোনো ক্ষতি না করে তাকে বোকা বানাতে চাস।”
টুনি বলল, “অনেকটা সে রকম।”
“তাহলে সবচেয়ে সোজা হচ্ছে কার্বন-ডাইঅক্সাইড। একটা ছোট শিশিতে একটু ভিনেগার আর খাওয়ার সোডা দিয়ে যদি ছিপিটা বন্ধ করিস তাহলে ভেতরে কার্বন-ডাইঅক্সাইড তৈরি হয়ে প্রেশার তৈরি করবে। তাই ছিপিটা খুলতেই ভেতর থেকে সবকিছু বের হয়ে আসবে। ঠিক কোকের ক্যানের মতো। তবে–” বলে শাহানা থেমে গেল।
টুনি জিজ্ঞেস করল, “তবে কী?”
“কতটুকু ভিনেগারের সাথে কতটুকু খাওয়ার সোডা দিচ্ছিস সেটা খুবই ইম্পরট্যান্ট। বেশি হয়ে গেলে কার্বন-ডাইঅক্সাইডের প্রেশার অনেক বেশি হয়ে তোর শিশি ফেটে যেতে পারে, নিজে থেকে ছিপি খুলে যেতে পারে। কাজেই সাবধানে এক্সপেরিমেন্ট করে ঠিক পরিমাণটা বের করতে হবে।”
টুনি বলল, “বের করব শাহানাপু।”
শাহানা বলল, “দরকার হলে আমার কাছে নিয়ে আসিস, আমি এডজাস্ট করে দিব।”
টুনির মুখে এগাল থেকে ওগাল জোড়া হাসি ফুটে উঠল। সে শাহানার গালে চুমু দিয়ে বলল, “শাহানাপু, তুমি হচ্ছ বেস্ট থেকেও বেস্ট।”