“সত্যি?”
“একশ ভাগ সত্যি।”
আর্ট এক্সিবিশানের এই ভয়ংকর বর্ণনা শুনে মুনিয়া পিছিয়ে গেল। মুনিয়াকে পিছিয়ে যেতে দেখে টুম্পাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলল, তখন বাকি থাকল শুধু টুনি। টুনির যে খুব যেতে ইচ্ছে করছিল তা নয় কিন্তু ছোটাচ্চুকে ঠিক লাইনে রাখার জন্যে টুনি ঠিক করল সে একাই যাবে। তাদের বাসার কাছের বাস স্ট্যান্ড থেকে একটা বাসে করে খুব সহজে ছোটাচ্চুর অফিসে যাওয়া যায়।
কাজেই কিছুক্ষণের মাঝেই টুনি ছোটাচ্চুর অফিসে পৌঁছে গেল, এখানে সে আগে অনেকবার এসেছে। অফিসের সবাই তাকে চিনে। রঞ্জনা তাকে দেখে হাসি হাসি মুখে বলল, “আরে আমাদের বড় ডিটেকটিভ চলে এসেছে! আমাদেরকে কি ভুলে গেছ নাকি?”
টুনি বলল, “না রঞ্জনাপু, তোমাদেরকে মোটেই ভুলিনি। ছোটাচ্চু আমাদের নিয়ে আসে না।”
“তাই নাকি?”
“হ্যাঁ। আজকে কি হয়েছে জানো? ছোটাচ্চু বলেছে আমাদের বাসা থেকে নিয়ে আসবে, তারপর ভুলে গেছে।”
রঞ্জনা হি হি করে হেসে বলল, “আমাদের অফিসে সব সময় এটা হয়। এখানে সবাই সবসময় সবকিছু ভুলে যায়।”
টুনি বলল, “ছোটাচ্চুর অফিসে কেউ আছে?” “হ্যাঁ, একটা ফ্যামিলি আছে। তুমি ভিতরে যাও, কোনো সমস্যা নেই।”
টুনি তখন ছোটাচ্চুর অফিসের দরজা খুলে তার অফিসে উঁকি দিল। ছোটাচ্চু একটা সেক্রেটারিয়েট টেবিলের উল্টোপাশে গদি আঁটা একটা চেয়ারে খুব কায়দা করে বসে আছে, টেবিলের সামনে কমবয়সী একজন পুরুষ আর মহিলা, পাশের চেয়ারে ছয়-সাত বছরের একটা ছেলে, সে খুবই বিরক্ত মুখে বসে আছে।
ছোটাচ্চু টুনিকে দেখে মুখে খুব একটা ভাব ফুটিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, “ও, টুনি এসেছিস?”
ছোটাচ্চুর ভাব দেখে টুনির হাসি পেয়ে গেল কিন্তু টুনি হাসল না, সেও গম্ভীর হয়ে বলল, “হ্যাঁ, ছোটাচ্চু আমি এসেছি।”
“আয়। অন্যেরা কই?”
“আর কেউ আসেনি।”
“আর কেউ আসিনি? কী আশ্চর্য! আর্টে কারো ইন্টারেস্ট নেই?”
এটা এমন কিছু আশ্চর্য না কিন্তু ছোটাচ্চু ভান করল সে খুবই অবাক হয়েছে। গম্ভীর মুখে বলল, “ঠিক আছে টুনি, তুই একটু অপেক্ষা কর, আমি এই ফ্যামিলির সাথে একটু কথা বলে নেই।”
টুনি মাথা নেড়ে বলল, “ঠিক আছে।”
তারপর ছোটাচ্চুর অফিসের অন্য পাশে বসে একটা ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে সেটা দেখার ভান করে কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করল তারা কী নিয়ে কথা বলছে। তার এরকম কথা শুনতে খুব মজা লাগে।
ছোটাচ্চু বলল, “হ্যাঁ, আপনারা জানি কী বলছিলেন?”
মহিলাটি বলল, “জি, আমি বলছিলাম যে আমাদের কাছে খুবই আজব মেসেজ আসতে শুরু করল।”
ছোটাচ্চু জিজ্ঞেস করল, “আজব মানে কী রকম?”
অনেকটা এ রকম, “ফেসবুক করা ছাড়া আর কোনো কাজ নাই? কিংবা ফেসবুকে সময় নষ্ট না করে একটা বই পড়ো। কিংবা, ফেসবুক না আসল বুক? আসল বুক আসল বুক। এই রকম ম্যাসেজ।”
ছোটাচ্চু বলল, “ও, আচ্ছা, কোনোরকম ভয়-ভীতি দেখায় না?”
“না। কিন্তু আমাদের যথেষ্ট বিরক্ত করেছে। তখন আমরা এই মানুষটাকে ব্লক করে দিলাম, ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে সরিয়ে দিলাম। এক-দুই দিন শান্তিতে ছিলাম তারপর আবার শুরু হলো। নতুন একটা ফ্রেন্ড কিন্তু বোঝা গেল একই মানুষ। আমাদের জ্বালাতন শুরু করল, মাঝে মাঝে একটু ভয়ও দেখায়, বলে, ফেসবুক বন্ধ না করলে তোমাদের উপর মহাবিপদ হবে, সাবধান।”
ছোটাচ্চু বলল, “আপনারা কি আসলেই অনেক ফেসবুক করেন?”
এবারে পুরুষ মানুষটা বলল, “তা একটু করি। অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকি। বাসায় আসার পর একটু রিলাক্সেশন।”
ছোটাচ্চু বলল, “কী করেন ফেসবুকে?”
“এই তো স্ট্যাটাস দেই, শেয়ার দেই। লাইক দেই। ছবি আপলোড করি। সেলফি আপলোড করি।”
“দুজনেই?”
“জি।”
মহিলাটি বলল, “আমার ফ্রেন্ড বেশি ওর থেকে।”
মানুষটা একটু রেগে গেল, বলল, “তুমি একজন মহিলা, মহিলার ফ্রেন্ড বেশি হবে না। তুমি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেই সবাই এক্সেপ্ট করে।”
“তুমি ঠিক করে রিকোয়েস্ট পাঠাও, না করেছে কে?”
পুরুষ আর মহিলাটা ঝগড়া শুরু করে দিচ্ছিল, তখন ছোটাচ্চু তাদের থামিয়ে দিল, বলল, “আপনারা দিনে কত ঘণ্টা ফেসবুক করেন?”
“সাত-আট ঘণ্টা হবে।”
ছোটাচ্চু চোখ কপালে তুলে বলল, “সাত-আট ঘণ্টা?”
“হ্যাঁ। ল্যাপটপ তো খোলা থাকে। একটু পরে পরে দেখি নতুন ছবিতে লাইক পড়েছে কি না। বুঝতেই পারেন নেশার মতো হয়ে গেছে।”
ছোটাচ্চু বলল, “তাহলে তো সমস্যাটা আপনাদের। সবরকম কাজকর্ম বন্ধ করে যদি শুধু ফেসবুক করেন তাহলে কেমন করে হবে?”
মহিলাটা বলল, “আমরা কী করি না করি সেটা আমাদের ব্যাপার, অন্যেরা সেখানে নাক গলাবে কেন? আমরা আপনার কাছে এসেছি অন্য ব্যাপারে। মানুষটা কে বের করে দেন। যতই চেষ্টা করি এই মানুষটাকে খসাতে পারছি না। ব্লক করে দিলে নতুন একাউন্ট থেকে জ্বালাতন শুরু করে।”
ছোটাচ্চু বলল, “মেনে নেন। মানুষটা তো খারাপ কিছু করে না, আপনাদেরকে ফেসবুক না করার জন্যে উপদেশ দিচ্ছে, ভালো উপদেশ। খুব ভালো উপদেশ।”
“কিন্তু মানুষটা কে সেটা বের করতে চাই। কীভাবে কীভাবে জানি আমাদের সব খবর জেনে যায়। আপনার এখানে আসার আগে আমাদের কি লিখেছে জানেন?”
“কী?”
“লিখেছে আমাকে ধরার জন্যে টিকটিকির কাছে যাচ্ছ? টিকটিকির বাবার সাধ্য নাই আমাকে ধরবে! হা হা হা।”
“তাই লিখেছে? টিকটিকি?”