শাহানা আপু খাতায় বিদঘুঁটে যন্ত্রের একটা ছবি এঁকে তার দিকে তাকিয়েছিল, টুনিকে দেখে বলল, “লুডো টুর্নামেন্ট কেমন চলছে?”
“ভালো, কিন্তু একটা সমস্যা আছে। তাই তোমার কাছে এসেছি।“
“কী সমস্যা?”
“মিশু ভাইয়া একটা দুই নম্বরি ছক্কা দিয়ে খেলছে।”
“দুই নম্বরি?”
“হ্যাঁ। এই ছক্কায় কোনো পাঁচ নেই। ছক্কার এই পিঠ আর ওই পিঠ দুই পিঠেই ছয়। সেটা চাললে বেশি ছয় ওঠে।”
“ধরিয়ে দিচ্ছিস না কেন?”
“ধরিয়ে দিলেই তো শেষ। আমি ধরিয়ে দেবার আগে মিশু ভাইয়াকে একটা শিক্ষা দিতে চাই। মিশু ভাইয়া মানুষটা ভালো না-মুনিয়াকে একটু আগে বোকা বানিয়ে হা হা করে হাসছে। যে মানুষ ছোট বাচ্চাদের জ্বালায় সেই মানুষ খুব ডেঞ্জারাস।”
শাহানা জিজ্ঞেস করল, “তুই কী করতে চাস?”
“আমাকে এমন একটা ছক্কা বানিয়ে দেবে যেটা দিয়ে যখন যেটা পেতে চাই সেটা পাব। ছয় চাইলে ছয় তিন চাইলে তিন। এক চাইলে এক।”
“কখন বানিয়ে দেব?”
“এই এক্ষুনি। বিকালের মাঝে টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যাবে তার আগে।”
শাহানা আপু হাসল, বলল, “এত তাড়াতাড়ি এই রকম ছক্কা বানানো সম্ভব না। মিশু ভাইয়ার মতো আরেকটা ছক্কা বানিয়ে নে।”
টুনি মাথা নাড়ল, “উঁহু। আমি মিশু ভাইয়ার নকল করতে চাই না। নতুন কিছু করতে চাই যেন মিশু ভাইয়া টের পায় যে তার থেকে বুদ্ধিমান মানুষ আছে যে তাকে ঘোল খাওয়াতে পারে।”
শাহানা আপা ঠোঁট সুচালো করে উপরের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করল তারপর টুনির দিকে তাকিয়ে বলল, “একটা কাজ করা যেতে পারে।”
টুনি হাতে কিল দিয়ে বলল, “আমি বলেছি না, তুমি চাইলেই পারবে। বলো কী করতে হবে।”
“যেহেতু মেঝেতে বোর্ড পেতে খেলা হচ্ছে না, একটা ছোট টেবিলের উপর রেখে খেলা হচ্ছে তাই এই বুদ্ধি কাজে লাগানো যায়।”
“কী বুদ্ধি বলো?”
আমার কাছে ছোট ছোট খুব পাওয়ারফুল চুম্বক আছে। নষ্ট হার্ড ড্রাইভ থেকে বের করেছি। একটা ছক্কা নিয়ে মাঝখানে গর্ত করে সেই চুম্বকটা ঢোকাতে হবে। কাজটা সহজ না কিন্তু সম্ভব। ছক্কাটা মাঝখান থেকে কেটে ভেতরে গর্ত করে সেখানে এই খুব ছোট বিন্দি চুম্বকটা ঢোকাতে হবে। তারপর আবার দুই অংশ জুড়ে দিয়ে পালিশ করে নিয়ে ছক্কার ডটগুলো নতুন করে এঁকে দিতে হবে।”
“তারপর কী করব?”
“এটাকে দেখতে ছক্কার মতো মনে হলেও এটা আসলে একটা পাওয়ারফুল চুম্বক। আরেকটা চুম্বক দিয়ে এটাকে কন্ট্রোল করা যাবে। মনে করো এমনভাবে ছক্কাটা তৈরি হলো যেন ছক্কাটার নর্থপোল যখন নিচের দিকে থাকবে তখন ছয় উঠবে। আর যখন সাউথ পোল নিচের দিকে থাকবে তখন এক উঠবে। এবারে কেউ যখন খেলার সময় ছক্কাটা মারবে, টেবিলের নিচে আরেকটা চুম্বক ধরবি, যদি সেই চুম্বকটার সাউথ পোল উপরের দিকে রাখিস তাহলে সেই সাউথ পোলের আকর্ষণে ছক্কাটার নর্থ পোল নিচের দিকে চলে আসবে অর্থাৎ ছয় উঠবে।”
টুনি মাথা নাড়ল, বলল, “বুঝেছি। আর যদি চুম্বকটা উল্টো করে ধরি তাহলে এক উঠবে।”
শাহানা মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ।”
টুনি শাহানাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “প্লিজ, শাহানা আপু আমাকে এই ম্যাজিক ছক্কাটা বানিয়ে দাও। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
শাহানা বলল, “ঠিক আছে আমাকে ঘণ্টাখানেক সময় দে। ছক্কাটা বানাব কী দিয়ে সেটা আগে ঠিক করি।”
টুনি বলল, “আমার কাছে আরেকটা লুডো সেট আছে সেখানে একটা ছক্কা আছে, সেটা নিয়ে আসি?”
“যা নিয়ে আয়।”
টুনি ছুটে উপরে গিয়ে তার টেবিলের তাকের উপর থেকে লুডো সেটের ছক্কাটা নিয়ে আবার ছুটতে ছুটতে নিচে নেমে এসে শাহানার হাতে ধরিয়ে দিল।
এখন যে ছক্কাটা দিয়ে টুর্নামেন্ট খেলা হচ্ছে এটা তার থেকে একটু বড়, দেখতেও অন্য রকম, ঠিক টুনি যে রকম চাইছিল।
.
নিচে তখন লুডো টুর্নামেন্ট খুব জমে উঠেছে। সব খেলোয়াড়দের দুই গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে এক গ্রুপে মিশুকে কেউ হারাতে পারেনি। সে নিশ্চিতভাবে ফাইনাল খেলবে। অন্য গ্রুপ থেকে ফাইনালে কে আসবে সেটা আগে থেকে বলা সম্ভব ছিল না কিন্তু অনুমান করা হচ্ছে যে মুনিয়া উঠে আসবে। মুনিয়া ভালো খেলছে সেটা নয়, সবাই প্রাণপণ চেষ্টা করছে। মুনিয়াকে জিতিয়ে দিতে।
যখনই কেউ মুনিয়ার বিপক্ষে খেলছে তখনই সে ইচ্ছে করে ভুল চাল দিয়ে হেরে যাচ্ছে। লুডো খেলায় সেটা খুব সহজ, যখন একটা খুঁটি পেকে যাবার কথা তখন ভুল করার ভান করে দ্বিতীয়বার ঘুরিয়ে আনা যায়। শুধু তাই না মুনিয়া যেন কেটে ফেলতে পারে সে জন্যে ইচ্ছে করে তার সামনে বিপজ্জনকভাবে সবাই নিজের খুঁটি ফেলে রাখে। মুনিয়া ছোট মানুষ তাই সে বুঝতে পারছে না যে সবাই ইচ্ছে করে তার সাথে হেরে যাচ্ছে! তার ধারণা সে নিজেই অসাধারণ লুডো খেলে জিতে যাচ্ছে। সে খুবই খুশি।
টুনি গিয়ে শান্তকে খুঁজে বের করল, তাকে এক পাশে ডেকে নিয়ে বলল, “শান্ত ভাইয়া তুমি একটা কাজ করে দেবে?”
“কত দিবি?”
টুনি মুখটা শক্ত করে বলল, “তুমি টাকা ছাড়া আর কিছু বুঝো না? কাজটা কী না শুনেই জিজ্ঞেস করলে কত দিব?”
“নিশ্চয়ই তোর কোনো একটা ফিচেল বুদ্ধির কাজ করতে হবে। টাকা ছাড়া হবে না।”
“আগে শুনে দেখো কী কাজ।”
“ঠিক আছে, বল।”
“আমি যখন বলব তুমি তখন লুডো খেলার এই ছক্কাটা কোনোভাবে গায়েব করে দেবে যেন আর কেউ খুঁজে না পায়।”