মিশু হাসি হাসি মুখে বলল, “কষ্ট? কষ্ট কখন দিলাম? গরম চায়ে শুধু একটু ছ্যাকা খেয়েছে! একটু মজা করলাম আর কিছু না।”
ঝুমু খালা বলল, “এই বাসায় এই রকম মজা চলে না।”
মিশু তখনো হাসি হাসি মুখ রেখে বলল, “ঠিক আছে! এই বাসায় যে রকম মজা চলে সেটাই করা হবে এখন থেকে। সেটা হচ্ছে লুডো টুর্নামেন্ট! ঠিক আছে?”
সবাই মিশুর দিকে তাকিয়ে রইল তারপর মাথা নাড়ল।
.
মিশু খুবই বুদ্ধিমান এবং লেখাপড়া জানা ছেলে, দেখতেও খুব সুন্দর, জামা কাপড় ভালো, কথা বলে খুব সুন্দর করে কিন্তু মানুষটা মনে হয় ভালো না, ঝুমু খালা সেটা টের পেয়েছে সবার আগে। অন্যরাও আস্তে আস্তে টের পেতে লাগল।
যেমন সন্ধেবেলা মিশু বাসায় এসে টুম্পাকে খুঁজে বের করে বলল, “টুম্পা তোমাকে বিকেলে গরম চা দিয়ে ছ্যাকা খাইয়েছি সে জন্যে আমার খুব খারাপ লাগছে। তোমার সাথে ভাব করার জন্যে আমি তোমার জন্যে একটা চকোলেট কিনে এনেছি। তুমি চকোলেট খাও তো?”
টুম্পা মাথা নাড়ল, চকোলেট তার সবচেয়ে প্রিয় খাবার। বড় হয়ে সে চকোলেটের ফ্যাক্টরি তৈরি করবে বলে ঠিক করে রেখেছে।
মিশু বলল, “আমি চকোলেটটা দিচ্ছি, কিন্তু তুমি তার আগে আমাকে একটা কাজ করে দিতে পারবে?”
টুম্পা জিজ্ঞেস করল, “কী কাজ?”
মিশু টুম্পার হাতে একটা কাগজ দিয়ে বলল, “এই কাগজটা ভাঁজ করে দিতে পারবে?”
টুম্পা বলল, “পারব।”
তাহলে ভাঁজ করে দাও দেখি, “সাতবার ভাঁজ করবে।”
টুম্পা বলল, “সাতবার?”
“হ্যাঁ। সমস্যা আছে?”
টুম্পা বলল, “নাহ্।”
মিশু বলল, “তাহলে শুরু করে দাও, আমি চকোলেটটা বের করে রাখি। ভজ শেষ হলেই চকোলেট!”
টুম্পা কাগজটা মাঝখানে একবার ভাঁজ করল। তারপর আবার। তারপর আবার। ভাঁজ করার জন্যে কাগজটা মোটা হতে শুরু করেছে তাই আস্তে আস্তে কাজটা কঠিন হয়ে গেল। টুম্পা অনেক কষ্ট করে ছয়বার ভাঁজ করে আবিষ্কার করল কাগজটা সাতবার ভাঁজ করা অসম্ভব।
মিশু মুখের মাঝে একটা কপট দুশ্চিন্তার ভান ফুটিয়ে বলল, “কী হলো? থেমে গেলে কেন? করো।”
টুম্পা বলল, “করা যাবে না।”
মিশু বলল, “আহা-হা-তাহলে তো চকোলেটটাও তোমাকে দেয়া যাবে। তোমার জন্যে এনেছিলাম কিন্তু মনে হচ্ছে আমাকেই খেতে হবে!” বলে চকোলেটটার র্যাপার খুলে সত্যি সত্যি সে খেতে শুরু করল।
লজ্জায় আর অপমানে টুম্পার চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। সে মাথা নিচু করে ঘর থেকে প্রায় ছুটে বের হয়ে গেল। কাছেই দাঁড়িয়ে শান্ত পুরো ব্যাপারটা দেখেছে; সে মাথা নেড়ে বলল, “কাজটা ভালো হলো না।”
মিশু চকোলেটের বারে আরেকটা বড় কামড় দিয়ে বলল, “কোন কাজটা?”
“টুম্পাকে এরকম লজ্জা দিলে? বেচারি–”
“লজ্জা দিয়েছি? আমি? মোটেও না।”
“টুম্পা কেমন করে জানবে একটা কাগজ সাতবার ভাঁজ করা যায় না?”
“জানা উচিত ছিল। প্রতি ভঁজে কাগজের সংখ্যা ডাবল হয়ে যায়। সাত ভজ মানে চৌষট্টি পাতা–একশ আটাইশ পৃষ্ঠা! একশ আটাইশ পৃষ্ঠার একটা বই ভাঁজ করতে রাজি হওয়ার আগে চিন্তা করা উচিত ছিল।”
শান্ত বলল, “টুম্পা ছোট একটা মেয়ে–”
মিশু চকোলেটের শেষ টুকরোটা মুখে দিয়ে খুব তৃপ্তি করে চিবুতে চিবুতে বলল, “ঠিক আছে টুম্পা ছোট মেয়ে–কিন্তু তুমি তো ছোট না। তুমি কি রাজি আছ?”
শান্ত বলল, “কীসে রাজি আছি?”
“আমি যেটা বলব সেটা করতে রাজি আছ?”
শান্ত অবাক হয়ে বলল, “কী করতে বলবে?”
“খুব সোজা একটা কাজ। যদি করতে পারো তাহলে আমি তোমাকে একশ টাকা দিব। না পারলে তুমি আমাকে একশ টাকা দিবে।”
শান্ত সরু চোখে কিছুক্ষণ মিশুর চোখের দিকে তাকিয়ে থাকল তারপর বলল, “আমার কাছে এত টাকা নাই।”
“কত আছে?”
“দশ টাকা।”
“ঠিক আছে তুমি করতে পারলে আমি তোমাকে একশ টাকা দিব, না পারলে তুমি আমাকে দশ টাকা দিবে।”
“কাজটা কী আগে শুনি?”
মিশু বলল “তুমি তোমার এক পায়ের উপর দাঁড়াবে।”
শান্ত অবাক হয়ে বলল, “ব্যস?”
“হ্যাঁ। তবে কোথায় দাঁড়াতে হবে সেটা আমি বলে দেব। জায়গাটা যদি তোমার পছন্দ না-হয় তোমার দাঁড়াতে হবে না। দেখে-শুনে যদি রাজি হও তাহলেই শুধু দাঁড়াবে।”
“কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে?”
মিশু বলল, “এক সেকেন্ড।”
শান্ত বলল, “মাত্র এক সেকেন্ড?”
“হ্যাঁ। মাত্র এক সেকেন্ড।”
“ঠিক আছে, কোথায় দাঁড়াতে হবে দেখাও।”
মিশু বলল, “আগে সবাইকে ডেকে আনো। সবার সামনেই কম্পিটিশনটা হোক। পরে বলবে আমি বোকা পেয়ে তোমাকে ঠকিয়ে দিয়েছি।”
শান্ত গরম হয়ে বলল, “আমি বোকা না।”
মিশু বলল, “ঠিক আছে, তুমি বোকা না। তবে জেনে রাখো, বোকা না হওয়া এক জিনিস আর বুদ্ধিমান হওয়া অন্য জিনিস।”
শান্ত সরু চোখে মিশুর দিকে তাকিয়ে রইল। মিশু বলল, “যাও সবাইকে ডেকে নিয়ে এসো! আমাদের কম্পিটিশনটা দেখুক।”
কিছুক্ষণের মাঝেই সব বাচ্চারা হাজির হলো। মিশু সবার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার আর শান্তর মাঝে এখন একটা প্রতিযোগিতা হবে। আমি শান্তকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়াতে বলব। সে যদি এক সেকেন্ড সেখানে এক পায়ে দাঁড়াতে পারে আমি তাকে দেব একশ টাকা। যদি না পারে সে আমাকে দেবে মাত্র দশ টাকা।”
মুনিয়া বলল, “আমিও এক পায়ে দাঁড়াতে পারি। এই দেখো–” বলে সে এক পায়ে দাঁড়িয়ে গেল।”
মিশু হাসি হাসি মুখে বলল, “ভেরি গুড। যখন তোমার সাথে কম্পিটিশন হবে তখন তুমি দাঁড়াবে। এখন কম্পিটিশনটা হচ্ছে শান্তর সাথে।” মিশু শান্তর দিকে তাকিয়ে বলল, “শান্ত, রেডি?”