—আমি সাহিত্যিক।
—ডুবাইতে পারো আর ডুবিতে পারো না?
—আমি সাংবাদিক শুনিয়া তাহারা ঢেলা মারিল।
—আমি সাধুপুরুষ—শুনিয়া তাহারা হাসিল।
—আমি বৈজ্ঞানিক—শুনিয়া তাহারা সাড়াশব্দ করিল না।
—আমি গায়ক—শুনিয়া তাহারা কেহ কেহ চঞ্চল হইয়া উঠিল।
—আমি খেলোয়াড়—শুনিয়া দু-একজন জলে নামিতে উদ্যত হইল।
—আমি চলচ্চিত্র অভিনেতা।
তাহারা বুঝিতে পারিল না। তখন বলিলাম—যাহার বাংলা হইতেছে ‘সিনেমা স্টার’।
ইহা শুনিবামাত্র মেলার সমস্ত জনতা একসঙ্গে ঝাঁপ দিয়া পড়িল। পুকুরের জল স্ফীত হইয়া উঠিয়া মেলার জিনিসপত্তর ভাসাইয়া লইয়া গেল।
সকলেরই মুখে হায় হায়! গেল গেল! দেশ ডোবে, জাতি ডোবে, সমাজ ডোবে, রাজ্য সাম্রাজ্য সভ্যতা আদর্শ ডোবে তাহাতে ক্ষতি নাই কেবল সিনেমা স্টার ডুবিলে সমস্ত গেল! হায়, হায়! গেল, গেল!
সকলে মিলিয়া আমাকে টানিয়া তুলিয়া ফেলিল। সকলে অর্থাৎ আবাল বৃদ্ধ নর নারী যুবক যুবতী বালক বালিকা কিশোর এবং কিশোরী।
আমাকে মাটিতে ফেলিয়া দিয়া আমার দেহের অঙ্গ প্রতঙ্গের মাপজোক লইতে আরম্ভ করিয়া দিল। পা হইতে মাথা পর্যন্ত নানাস্থানের মাপা তারপরে চুলের রং, ঠোঁটের রং, নখের রং দাঁতের রং, চোখের রং এ সব টোকা হইয়া গেলে, আমার জীবনেতিহাসের খুঁটিনাটি লইয়া প্রশ্ন সুরু করিলা আমাকে কিছুতেই ছাড়িতে চাহে না। আগামী কল্য তাহাদের সম্বর্ধনা গ্রহণ করিব এই প্রতিশ্রুতি দিয়া তবে ছাড়া পাইয়া আসিয়াছি।
চতুর্থ পথিকের অভিজ্ঞতা শুনিয়া অপর তিনজনে বুঝিতে পারিল আজ রাত্রে তক্তপোশে শুইবার অধিকার কাহারা।
চার বন্ধুতে আহারান্তে শয়ন করিলা সিনেমা স্টার তক্তপোশে শুইল—অপর তিনজনে সেই ভেজা মেঝের উপরে তক্তপোশশায়ী সিনেমা স্টারের নিদ্রার তালে তালে যখন নাসিকা গর্জন চলিতেছিল, তখন তিনজনে মশা, মাছি, ছুঁচো, ইঁদুর প্রভৃতি তাড়াইয়া বিনিদ্র-নিদ্রায় রাত্রি কাটাইতেছিল। সারারাত ছুঁচোগুলো চিক চিক করিয়া ঘরময় দৌড়িয়া বেড়াইল—তিনজনের কানে তাহা বিদ্রুপের ফিক ফিক হাসির মতো বোধ হইল। ঘরের একপ্রান্তে একটা সাপের খোলস পড়িয়া থাকা সত্বেও তাহারা নির্বিঘ্নে রাত্রি অতিবাহিত করিল। কপালে যাহাদের দুঃখ সাপেও তাদের স্পর্শ করে না!