- বইয়ের নামঃ জলপরী, সুবিমল ও একটি ধর্ষণের গল্প
- লেখকের নামঃ জগন্নাথ প্রামাণিক
- বিভাগসমূহঃগল্পের বই
জলপরী, সুবিমল ও একটি ধর্ষণের গল্প – জগন্নাথ প্রামাণিক
যাব না যাব না করেও বেরিয়ে পড়লাম। অবশ্য আমাকে যে যেতে হবে তার কোন মাথার দিব্যি নেই অথবা না যাওয়াটাই শ্রেয়, (অনেকেই বলেছিল) কিংবা কেন যাচ্ছি, কিসের জন্য যাচ্ছি, কার কাছে যাচ্ছি, গিয়েই বা কি হবে, যেহেতু সমস্যার কোন সমাধান আমি করতে পারিনি। তবু যেতে হয়, এবং এই যাওয়াটা স্বাভাবিক কি অস্বাভাবিক তা আমি বলতে পারব না। অতএব আমি যাচ্ছি…বিজয়ার কাছে।
এই পৃথিবীর ঘাস ফুল পাতা আলো বাতাসকে ভালবাসার মত কোথাও, কোনখানে, হয়তো বা, তা আমার অনুভূতি, রক্তে কিম্বা অন্য কোথাও কোনও দুর্বলতা যা আমার বিবেক, আমার মনুষ্যত্বকে আলোড়িত করেছে, তাই আমি যাচ্ছি।
গতকাল সারারাত কখনও বিছানায়, কখনও জানলার ধারে, হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি নক্ষত্রের দিকে চেয়ে নিজেকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টায়, মুখের সিগারেটের ধোঁয়া স্পষ্ট থেকে অস্পষ্ট হতে হতে ক্রমশঃ মিলিয়ে গেছে শূন্যে। জোনাকির নীল আলো ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়েছে, টুকরো মেঘমালা একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে মিলিয়ে গেছে, রাস্তার কুকুরের কান্না, পাগলের চিৎকার ভয়ার্ত হয়ে কম্পন তুলেছে শিরা-উপশিরায় এক বা একাধিক প্রশ্নের উত্তর খোঁজার। রেস্তোরাঁয় কাঁটা চামচ দিয়ে চিকেন রোস্ট কাটার মত নিজেকে টুকরো টুকরো করে কেটেছি। বিধ্বস্ত করেছি মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রীকে। কবিতায় ডুবিয়েছি মনকে–আজ বা কাল অথবা পরশু পৃথিবী টুকরো হলে / নীল পখি লাল পাখি গ্রহান্তরে উড়ে যাবে। তখন ভীষণ অন্ধকারে ডুবে / শাড়িটা উড়িয়ে দেবে আকাশে / আঁচলের এক প্রান্তে আমি অন্য প্রান্তে তুমি।
—আমাকে কবে নিয়ে যাবে সুবিদা? কবে আসবে সেদিন? ভিক্টোরিয়া দেখাবে-নতুন হুগলি সেতু?
—হ্যাঁরে। নিশ্চয়, কেন দেখাব না।
–সত্যি বলছ?
—হ্যাঁ, সত্যি বলছি।
—না আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, তুমি আমার মাথা ছুঁয়ে দিব্বি কর।
—এই তোর মাথা ছুঁয়ে…।
তখন পশ্চিমাকাশে তীব্র আলোর ছটা। আমি পিরামিডের ওপর মাথা রেখে, বিজয়া কাঁপছে যেন ভূমিকম্পে কম্পিত ভূতল।
.
স্টপস্টপ-প্লিজ স্টপ। এটা প্রবন্ধ না নিবন্ধ? নাকি পাগলের প্রলাপ। গল্পের কোন মাথা নেই মুণ্ডু নেই। স্রেফ আত্মকথন। যত্ত সব রাবিশ। সেই প্রথম থেকে। ফার্স্ট পার্শেন—আমি আমি। আর আপনাকেও বলি সুনীল দা, দেশে কি লেখকের আকাল পড়ে গেছে? তাচ্ছিল্য, বিরক্তি, উপহাসে বলেন রণধীর চৌধুরী। প্রযোজক কাম পরিচালক। সুনীল বোসের চোখমুখ লজ্জা ও সংকোচে লাল হয়ে ওঠে। কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম রুমাল দিয়ে মুছে ঢোক গিলে বলেন, নামানে সুবিমলবাবুতো ভাল লেখেন টেখেন, তাই–
এটা ভাল লেখার নমুনা? ধর্ষণের গল্প এইভাবে নিজের কথা দিয়ে আরম্ভ হয়? পাগল নাকি? কি চরিত্র থাকবে আপনাকে তো আমি আগেই বলে দিয়েছিলাম। আপনি কি বলেননি সুবিমলবাবুকে? আবার বলছি শুনুন—
১) একজন ধনীর খেয়ালি জেদি ছেলে, যার দু’চারজন সমবয়সী বন্ধুবান্ধব, ড্রাগঅ্যাডিক্ট, কিন্তু ব্রেনি। লেখাপড়া শিখছে কলেজ অথবা য়ুনিভার্সিটিতে। ছেলেটি হবে নায়ক।
২) নায়িকা হবে সহপাঠিনী, সুন্দরী, একগুঁয়ে, মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে।
৩) মেয়েটিকে (নায়িকা) দু’জন ভালবাসবে, মানে টুয়াইস হিরো। ওই বড়লোকের ছেলেটি বাদে আর একজন ছেলে, যে শিক্ষিত, আদর্শবাদী কিন্তু গরিব।
৪) মেয়েটি বড়লোকের ছেলেটিকে, আই মিন, কি বলব, প্রেফার করবে, কিন্তু গরিব ছেলেটিকে বারবার অপমান করে ফিরিয়ে দেবে বাড়ির দরজা থেকে।
৫) একদিন ছেলেটি হুগলি সেতু-মানে ওই বিদ্যাসাগর সেতু কিম্বা আউট্রাম ঘাট অথবা রেসকোর্সে মেয়েটিকে বেড়াতে নিয়ে যাবে। সে সময় প্রকৃতির বর্ণনা থাকবে, ওই সন্ধে কিংবা সন্ধের পরপর, কয়েকজন গুণ্ডা তুলে নিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে রেপ করে ঝোঁপের ধারে ফেলে রেখে চলে যাবে।
৬) থার্ড পার্শেন, মানে পাবলিক, মেয়েটিকে গোঙাতে দেখে (যন্ত্রণায় ছটফট করবে মেয়েটি, ঘেঁড়াখুঁড়ি পোষাক পরিচ্ছদ) তুলে নিয়ে গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
৭) মেয়েটি—ওই যা হয় আর কি রেপ টেপ কেসে, প্রথমে একটু অ্যাবনরম্যাল, তারপর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসে বড়লোকের ছেলেটির সঙ্গে দেখা করতে যাবে, কিন্তু অপমানিত হয়ে ফিরে আসবে।
৮) গরিবের ছেলেটি ততদিনে পাশ-টাশ করে দামি চাকরিতে জয়েন করেছে, সেও আর মেয়েটিকে…নাকি কি করা যায়, আরে চুপ করে বসে আছে কেন সুনীল দা, কিছু বলবেন তো?
–না না, আমি না। আপনি তো প্লটটা বলছেন ভালই বলুন না।
৯) তারপর-তারপর হ্যাঁ, ততদিনে বড়লোকের ছেলেটির কিছুটা বিবেকবোধ জন্মেছে, বিবেক তাড়িত হয়ে মেয়েটির সঙ্গে পুনরায় দেখা করতে যাবে, কিন্তু মেয়েটি অপমান করে তাড়িয়ে দেবে। রাজনীতি-টাজনীতি কিছু রণবীর দা, সুনীল বোস বলেন।
১০) হ্যাঁ-হ্যাঁ, অফ কোর্স-সিওর। হসপিটালে রিপোর্টার মানে পেপার নিউজ, রুলিং পার্টি, বিরোধী পার্টি, আই মিন বিরোধী পার্টি মেয়েটিকে নিয়ে একটা বন্ধ দেখাতে পারলে খুব ভাল হয়, তাই না সুনীল দা?