মাথার বিষ নাই বেথা দিনে দিনে বাড়ে।
একপয়সা সুদ পাইলে কড়া নাই সে ছাড়ে।।
অভাবে পড়িয়া বাপ বেইচ্যাছে ক্ষেত-খলা।
ঘর-বাড়ী ভাইঙ্গ্যা পড়ছে নাই ছানি-পালা।।
হালের মইষ বেইচ্যা আগে কইরাছে পিতৃকাম।
কি দেইখ্যা সুদের উসুল দিব বলরাম।।
ভাইব্যা চিন্ত্যা ডিঙ্গাধর কোন কাম করে।
দুইপর বেলা উপনীত মাহাজনের দুয়ারে।।
ছান নাই খাওয়া নাই বালক দিনের উপবাসী।
বলরামের ঘরে গেল বড়ো দুঃখ বাসি।।
বইসা আছে বলরাম বাড়ীর বাইর ময়ালে।
পায়ে ধইরা ডিঙ্গাধর মাহাজনে বলে।।
সুজিতে বাপের দেনা কইরাছি আমি মনে।
তুমি যদি কিরপ কইরা রাখো ছিচরণে।।
বাপের সে ধার যত পুত্রের হয় দেনা।
আমি পুত্র সুজিয়া দিবা তোমায় পাওনা।।+
বলরাম কয় আমি কইরাছি হিসাব।
কত ট্যাকা আইনাছ দেখি হিসাব কিতাব।।
তোমার কাছেতে বাপু নাই সে চাই সুদ।
আসলে উসুল হইলে তোমার দেনা শোধ।।+
খালি হাত দেখাইয়া কান্দে ডিঙ্গাধর।
কড়ার ভিখারী আমি তোমার চাকর।।
আইসছি তোমার কাছে বড়ো আশা করি।
বাপের ঋণ শোধ দিবাম্ করিয়া চাকুরি।।
সাত পাঁচ ভাইবা তবে কয় বলরাম।
চ্যাংড়া চাকরে এক আছে মোর কাম।।
আইজ থাইকা করব। তুমি মইষের রাখালী।
ছয় বচ্ছর খাইট্যা দিলে তবে হইব ফালি॥
বড়ো দুঃখে ডিঙ্গাধরের হাসি আইল মুখে।
আইজ থাইকা বাপের ঋণ সুজব একে একে।।
নদীর পাড়ে বড়ো মাঠ মইষের বাথান।+
মইষ চড়ায় বাঁশি বাজায় আর গায় গান॥+
সইন্ধ্যা বেলা ঘরে আইসা খায় ভাত পানি।+
পরভাতকালে মইষ লইয়া বাথানে মেলানি॥+
এইমতে ডিঙ্গাধরের পাঁচ বচ্ছর যায়।+
বিপাকে ফেইলাছে বিধি কি হইব উপায়॥+
———–
১। আয়রণে = অরণ্যে, নিরাশ্রয়ে। ২। অখন = এখন। ৩। শেষকাম =শ্রাদ্ধ। ৪। পরমাণ = প্রমাণ। ৫। সুজন = পরিশোধকরা। ৬। বেডে =বেষ্টন করে। ৭। কাইল= কাহিল, শীর্ণকায়। ৮। বল্লা =বোলতা। ৯। ফানা=পাগল, অস্থির। ১০। খলা = খোলা, ধানের বীজতলা ও ধান মাড়াই করার জায়গা। ১১। ছানিপালা = ছাউনী ও খুটি। ১২। পিতৃকাম=পিতার শ্রাদ্ধ। ১৩। বাসি =মনে করিয়া। ১৪। বাইর ময়ালে = বাহির মহলে। ১৫। সুজিতে পরিশোধ করিতে। ১৬। ফালি=পরিশোধ, খালাস। ১৭। মেলানি =গমন।
পাঠান্তর :
হয়রাণে ফেলিয়া বাপ কুথায় চইলা যাও।।
হালের না মইষ বেইচ্যা শেষ কাম করে।।
তের বচ্ছর ডিঙ্গাধর কাটাইল ঘরে।।
সময় লইল দুইমাস বলরামের কাছে।।
কিমতে বাপের ডিঙ্গা সুজন সে যায়।।
গরু হইয়া খাট্যা মহাজনের ধার।
ঋণ পাপের মুক্তি নাই জন্ম জন্মান্তর।।
জ্বর মাথাবিষ নাই দিনে দিনে বাড়ে।
বলরাম কয় কাল কইরাছ হিসাব।
তোমার কাছেতে বাপু নাহি চাই লাভ।
[অসম্পূর্ণ]