বঙ্গসুন্দরী বললেন, “ও চিঠির আর দরকার নেই। ফটিক আমার দাদার লেখা যে চিঠি ওর পিসেমশাইয়ের হাতে দিয়ে যায় সেইটে পড়েই বুঝতে পারি যে, এই আমার আসল ফটিক। চিঠিতে দাদা আমাকে পাঠ লিখেছিল ‘স্নেহের কুনু’ বলে। কুনু নামে একমাত্র দাদাই আমাকে ডাকত, আর সবাই ডাকত পুতুল বলে। ওই চিঠি পড়েই আমি ওঁকে বলি, ওগো, এই ছেলেটাই আমার ফটিক।”
হঠাৎ নটবর রায় বললেন, “ফটিক আর নিতাই দু’জনই আমার কাছে থাকবে। ফটিক সম্পত্তি পাবে, নিতাইকে ম্যানেজার করে দেব। কিন্তু দুলু কোনও গণ্ডগোল করবে না তো সতীশবাবু?”
সতীশ মাথা নেড়ে বললেন, “না, দুলুবাবুর বিরুদ্ধে চারটে প্রমাণিত খুনের মামলা আছে। আর আজকেরটা নিয়ে আছে তিনটে খুনের চেষ্টার অভিযোগ। ফাঁসির দড়ি ওর কপালে নাচছে।”
সতীশ দারোগা ফটিক আর নিতাইয়ের দিকে চেয়ে বললেন, “তোমরা লাঠিখেলা কোথায় শিখলে?”
ফটিক আর নিতাই মুখ চাওয়াচাওয়ি করে নিল। ফটিক বলল, “জীবনে কখনও লাঠিখেলা শিখিনি।”
“তা হলে কী করে এসব হল? দশ বারোজন লেঠেলের সঙ্গে লড়লে কী করে?”
নিতাই চাপা গলায় বলল, “গড়াইঠাকুমা।”
সতীশ দারোগা মৃদু হেসে বললেন, “আমারও তাই মনে হয়েছিল।”
ফটিক বলে ওঠে, “কিন্তু আপনি সতীশ দারোগা হলেও আপনি কিন্তু আমাদের নদিয়াদা।”
সতীশ দারোগা হেসে বললেন, “হ্যাঁ, কখনও আমি নদিয়া চোর, কখনও গজপতিবাবুর শ্বশুর, কখনও বাঘ, কখনও সাধু। কত কী যে হতে হয় আমাকে!”
গজপতিবাবু তাড়াতাড়ি উঠে বললেন, “আপনি আমার শ্বশুর নন ঠিকই। কিন্তু তাতে কী? দিন তো মশাই, আর-একবার পায়ের ধুলো দিন।”