বরদাচরণ গম্ভীর হয়ে বললেন, “এবার ছবির সঙ্গে ডাকাতের সদারকে মিলিয়ে দেখুন।”
রানী-মা মেজ-সদারকে কাছে টেনে “ও আমার কন্দু রে” বলে কেঁদে ফেললেন।
মেজ-সদার বিড়বিড় করে বলল, “তাই সব এত চেনা-চেনা লাগছিল বটে!”
বরদাচরণ ‘হেঃ হেঃ করে হেসে বললেন, “কত বুদ্ধি খাঁটিয়ে যে ব্যাপারটা ধরতে পেরেছি তা আর বলার নয়।”
হারাধন ধমক দিয়ে বলে, “বেশি বোকো না। মেজ-সর্দারকে রাজকুমার বলে প্রথম যে চিনতে পারে সে হল আমার ভাইপো মনোজ।”
বরদাচরণ লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি বলেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ মননজেরও যথেষ্ট অবদান আছে। এসো মনোজ, এগিয়ে এসো।”
মনোজ এগিয়ে আসে। রানী-মা তাকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করতে করতে বলেন, “সবাই শোনো তোমরা, রাত এখন যতই হোক, আমার ঘরে আজ অনেক ঘি আর ময়দা আছে। গতকাল আমাদের একটা তালুক থেকে জিনিসপত্র অনেক এসেছে। আমি এখন সবাইকে লুচি ভেজে খাওয়াব। আমার ডাকাত ছেলেদের কয়েকজন চলো গিয়ে একটু ময়দা মেখে দেবে।”
ডাকাতরা অবস্থা বুঝে যে যার হাতের অস্ত্রশস্ত্র এদিক ওদিক ফেলে দিয়ে ভাল মানুষের মতো ব্যবহার করছিল। মেজ-সর্দার যে রাজকুমার তা জানলে তারা কক্ষনো রাজবাড়িতে ঢুকত না। কানাই তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে বলল, “রাত খুব বেশি হয়নি রানী-মা। মোটে সাড়ে বারোটা, ময়দা মাখতে আমাদের বেশি সময় লাগবে না।”
ঠিক এই সময় নিশি দারোগা পিছন থেকে বলে উঠলেন, “হ্যান্ডস আপ।”
কেউ হাত তুলল না। হারাধন বলে উঠল, “আহা দারোগাবাবু, এখানে কোনও গণ্ডগোল হচ্ছে না।”
বরদাচরণও বললেন, “একটা হ্যাপি এন্ডিং হচ্ছে নিশিবাবু, এখানে কোনও গণ্ডগোল হচ্ছে না।”
রানী-মা বললেন, “ও বাবা নিশি, লুচি হচ্ছে, সবাই খেয়ে যাবে।” বলে মহারানী চারজন ডাকাতকে সঙ্গে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন।
দারোগাবাবু খুব গম্ভীর হয়ে বললেন, আমি সবাইকে হাত তুলতে বলেছি, সেকথা কারও কানে যাচ্ছে না নাকি?”
কিন্তু কেউ নিশিবাবুকে তেমন পাত্তা দিতে চাইছে না। বরদাচরণ তাঁকে বোঝাতে লাগলেন, “আপনার আসবার কোনও দরকারই ছিল না নিশিবাবু, আমি একাই সিচুয়েশনটা সামলে নিয়েছিলাম! হেঃ হেঃ!”
এদিকে রাজামশাইয়ের মূর্ছা আবার ভেঙেছে। ভেঙেছে অন্য কিছুতে নয়, গাওয়া ঘিয়ে লুচি ভাজার গন্ধে। শিউরে উঠে তিনি আপন মনে বললেন, “আবার গাওয়া ঘিয়ের লুচি?”
রাজবাড়ির পুরনো চাকর দৌড়ে এসে খবর দিল, “রাজামশাই, কুমার কন্দর্পনারায়ণ ফিরে এসেছেন। শিগগির যান, রান্নাঘরে রানী-মার কোল ঘেঁষে বসে কেমন লুচি খাচ্ছেন দেখুন গে।”
রাজা গোবিন্দনারায়ণ খানিকটা হতভম্ব থেকে তারপর তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের দিকে এগোলেন।