বাঁশঝাড়ের আড়াল পেরিয়ে তারা ধ্বংসস্তৃপটার মুখোমুখি হল।
সুদর্শনবাবু অবাক হয়ে বললেন, “ওটা কে রে, ওই উঁচুতে দাঁড়িয়ে? ডাকাত নাকি?”
আচমকাই অক্ষয় বিকট আর্তনাদ করে উঠল, “ওরে বাবা, ও যে ভীম সরকার। সেই ন্যাড়ামাথা! সেই তেজী চেহারা! ওরে বাবা রে…”
রেমো চোখ বুজে “রাম, রাম করতে করতে কাঁপা গলায় বলল, “বড়বাবু! আজ আর রক্ষে নেই। কাঁচাখেগো দেবতা যে! ওই তো ভীম সরকার.”।
নেতাই হাউহাউ করে কেঁদে উঠল, “আপনার জন্যই এই সর্বনাশটা হল বড়বাবু! ভীম সরকার আর রক্ষে রাখবে না…”
তিনজন ঘুরে দোড়তে শুরু করতে-করতেই চারজন সেপাই “আই বাপ রে” বলে তাদের পিছু নিল। ভয় জিনিসটা অতি সংক্রামক, সুদর্শনবাবু অতি সাহসের সঙ্গে আরও ছয় সেকেন্ড দাঁড়িয়ে লোকটার দিকে হাঁ করে চেয়ে ছিলেন। হ্যাঁ, ভীম সরকার হতেও পারে।
দু লাখ টাকার কথা বেবাক ভূলে সুদর্শনবাবুও ঘুরে দৌড়তে লাগলেন। তাঁর ভুড়ি প্রবলবেগে লাফাতে লাগল। প্রতিবাদ করতে লাগল হাঁটু। তবু প্রাণের ভয় বড় ভয়। তিনি তিলেক দাঁড়ালেন না। শুধু বলতে লাগলেন, “ওরে, তোরা আমাকে একা ফেলে যাসনি। ধর্মে সইবে না। দুনিয়ায় দারোগাদের মতো দুর্গতি আর কারও নেই রে বাপ। কবে যে তোরা দারোগার দুঃখ বুঝবি?”
আর-একটা ঝোঁপের আড়াল থেকে দীর্ঘকায় গৌরবর্ণ এক মানুষও অভয়কে দেখছিলেন। তিনি ব্রহ্মদৈত্য। অভয়কে চিনতে তাঁর বিন্দুমাত্র বিলম্ব হয়নি। তবু তিনি দেখছিলেন, আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলে একটা মানুষ কত বদলে যায়। কালকেও এ-লোকটা ছিল অসহায়, দুর্বল, ভিতু। আর আজ!
জঙ্গলের ওপর দিয়ে একটা ঝটকা হাওয়া বয়ে গেল। একটা সবুজ পাতা খসে পড়ল অভয়ের ন্যাড়া মাথায়। যেন এইমাত্র কেউ সবুজ একটা রাজমুকুট পরিয়ে দিল তার মাথায়। ক্লান্ত দেখাচ্ছিল অভয়কে। তবু মনে হল, রণক্লান্ত এক দিগ্বিজয়ী রাজা।
গৌরবর্ণ পুরুষটি স্মিত হাসলেন। তারপর আপনমনে বিড়বিড় করে বললেন, “দুঃখী মানুষ, তোমার ভাল হোক।”