মড়া দুটো ঘাপটি মেরে বসে সবই দেখছিল। একজন মাথা নেড়ে বলল, “হচ্ছে না।”
আর-একজন বলল, “তা হলে মুষ্টিযোগ দিই?”
“দাও।”
তখন একজন মড়া খুব চিকন সুরে বলে উঠল, “রাঘবের চুলে আরশোলা।”
এই শুনে রাঘব বেখেয়ালে নিজের চুলে হাত দিল।
গৌর অবাক হয়ে দেখল, নিজের চুলে হাত দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাঘব চোখ উলটে গোঁ গোঁ আওয়াজ করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।
বেকুবের মতো কিছুক্ষণ রাঘবের দিকে চেয়ে রইল গৌর। তারপর তার নজর পড়ল, মড়া দুটোর ওপর। সেইরকম ঘাপটি মেরে বসে তাকে জুলজুল করে দেখছে।
“তবে রে? এবার তোদেরও ব্যবস্থা করছি!” বলে গৌর তাদের দিকে তেড়ে যেতেই মড়া দুটো ভয়ে সিটিয়ে গেল।
একটা মড়া বলে, “উঁহু উঁহু, ছুঁসনি রে হতভাগা! তফাত থাক। আমরা মড়া নই!”
“তবে কী?”
দাঁত খিঁচিয়ে মড়াটা বলল, “আমি ফটিক। তুই আমার নাতির নাতি। আমাদের দেবদেহ, ওই এঁটোকাঁটা নরদেহ নিয়ে আমাদের ছুঁলে মহাপাতক হবে।”
ফটিক! গৌর হাঁ হয়ে গেল।
মড়া দুটো উঠে দাঁড়িয়ে গা ঝাড়া দিল। ফটিক বলল, “সারাজীবন লড়াই করেও রাঘবকে কাবু করতে পারবি না। ক্রমে-ক্রমে তোকে হাফসে-হাফসে মেরে ফেলত। তাই মুষ্টিযোগটা কাজে লাগাবার চেষ্টা করেছিলাম।”
গৌর অবাক হয়ে বলল, “মুষ্টিযোগ কী?”
“রাঘবের নিয়তি ওর চুলে। চুলে হাত দিলেই ওর পতন। তা এমনিতে কিছুতেই চুলে হাত দেওয়ার লোক নয় রাঘব। তোর সঙ্গে লড়াই করতে করতে যখন আনমনা হয়ে গিয়েছিল, তখনই কৌশলটা কাজে লাগালুম। এখন আমরা চলে যাচ্ছি। আর দেখা পাবি না।”
বলতে না বলতেই দুজন অন্ধকার একটা রন্ধ্রে ঢুকে সরে পড়ল। গৌর পিছন থেকে চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল, “ফটিকদাদু, উনি কে?”
“যোগেশ্বরবাবা।”
.
হাউ, মাউ আর খাউকে দাদা বাড়ি থেকে তাড়িয়েছে। গৌরের এখন খুব খাতির বাড়িতে। গোরু চরাতে হয় না, তোক রাখা হয়েছে। বাসন-টাসন বউদিই মাজে। গৌর পেটভরে চারবেলা ভালমন্দ খায়।
কবরেজমশাই, ফকিরসাহেব, গোবিন্দ, সুবল, যে যার কাজকর্ম করে। সবই আগের মতো। নদীর ধারে দুপুরের দিকে একটা লম্বা লোক জমি চাষ করে হালগোরু নিয়ে। লোকটা কে, তা গাঁয়ের লোক খুব ভাল করে জানে না। শুধু জানে, লোকটাকে খানিকটা চাষের জমি আর বাস্তু দিয়েছেন কবরেজমশাই।
লোকটা আর কেউ নয়, রাজা রাঘব।