শশীমুখী হাপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে অজয়পদকে ধরে ১০৪
পড়লেন, “যেমন করে পারো ওই হতভাগা বটু সর্দারকে ছাড়িয়ে আনো। নইলে আমি অন্নজল ত্যাগ করব, তা বলে রাখছি।”
পরদিন সকালেই পাঁচভাই আর গাঁয়ের মেলা লোকজন থানায় গিয়ে হাজির। ছোট গরাদের মধ্যে বটু তখন কম্বলমুড়ি দিয়ে বসা। লোজন দেখে তটস্থ হয়ে জুলজুল করে চেয়ে রইল।
অজয়পদ বললেন, “ও বটু, আমরা তোমাকে ছাড়িয়ে নিতে এসেছি।”
বটু গম্ভীর মুখে মাথা নেড়ে বলল, “না মশাই, এই বেশ আছি! মাথার উপর ছাদ আছে, কম্বল জুটেছে, দু’বেলা খ্যাটনের ব্যবস্থা আছে। আর চাই কী?”
“তা বললে তো হবে না বটু! আমাদের উপর হুকুম হয়েছে, তোমাকে আমাদের বাড়িতেই নিয়ে যেতে হবে।”
বটু ফের জুলজুল করে চেয়ে মাথা নেড়ে বলল, “না মশাই, ওরা বড় মারে।”
কথাটা এমনভাবে বলল বটু যে, গাঁয়ের যেসব লোকজন এসেছিল, তারা অনেকে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল। “আর কখনও তোমাকে মারব না… আর আমাদের ভুল হবে না… এবারকার মতো আমাদের মাপ করে দাও বটু সর্দার… তুমি জিলিপি ভালবাসো, আমরা রোজ তোমাকে জিলিপি খাওয়াব…নতুন জুতো কিনে দেব…!”
অজয়পদ চোখের জল মুছে বললেন, “তোমাকে বুঝতে ভুল হয়েছিল বাপু! তা পাপের একটা প্রায়শ্চিত্তও তো আছে! নইলে যে আমাদের দগ্ধে মরতে হবে!”
.
রাত্রিবেলা নতুন নরম বিছানায় নতুন মশারি খাঁটিয়ে দিতে দিতে শশীমুখী বললেন, “তুমি ভাল লোক না মন্দ লোক তা আজও বুঝে উঠতে পারিনি। যতদিন সেটা ঠিকমতো বুঝতে না পারছি, ততদিন এ বাড়ি থেকে বিদেয় হওয়ার চেষ্টা করলে তোমার ঠ্যাং ভেঙে দেব।”
মশারির ভিতর থেকে জুলজুলে চোখে চেয়ে বটু বলল, “আমাকে অত বিশ্বাস করবেন না মাঠান! আমি বড় গোলমেলে লোক!”
“সেটা হাড়ে-হাড়ে জানি। সেই গোলমালটা না ধরতে পারা পর্যন্ত আমার কাছেই থাকতে হবে তোমাকে।”
“উটকো তোক আমি মাঠান! উটকো লোককে ঠাই দেওয়া কি ভাল?”
“উটকো আবার কী? ছেলেবেলায় আমার বাবা মারা যান, তাঁকে আমার মনেও নেই। উটকো লোক হবে কেন, তুমি আমার বাবা হয়ে এ বাড়িতে থাকবে!”