“আমি পালিয়ে যেতে আসিনি।”
ভারি অমায়িক হেসে পাঁচ বলল, “আজ্ঞে তা হলে কি চোখ খুলেই ফেলব। ভিরমি যাব না তো?”
“যেতেও পারো।” বলে ভগবান যেন মেঝের ওপর লাঠি ঠুকলেন।
চোখ খুলে ফেলল পাঁচু এবং ভারি অবাক হয়ে বলল, “এ কী?”
“এখন তা হলে ভগবানকে ডাকাডাকি হচ্ছে। তা এই ধর্মভাবটা আরও বছর ত্রিশেক আগে হলেই তো ভাল হত হে। তা শুনলুম, তুমি নাকি আমাদের দুলালবাবুকে চুরি-জোচ্চুরিতে নামাতে চাইছ! ঘাড়ে ক’টা মাথা তোমার, অ্যাঁ?”
পাঁচু মাথা চুলকে বলল, “আজ্ঞে, আমি যে আর কিছু জীবনে শিখিনি। আর দুলালবাবুও ভারি ওস্তাদ লোক।”
“বটে! ফের যদি আমাদের বাড়িতে ঢোকো বা দুলালবাবুকে ভাঙানোর চেষ্টা করো তা হলে কিন্তু—”
পাঁচু ভারি অভিমানী গলায় বলল, “সবাই তো আমাকে বকাঝকাই করে ভুবনবাবু। কিন্তু আমার যে উপায়টা কী হবে তা কেউ ভাবে না। বুড়ো বয়সে আমি এখন কী খাই, কী পরি, কে-ই বা আমাকে দেখে, অসুখ হলেই বা কী হবে কেউ ভেবে দেখে না। তা মারতে হয় দশ ঘা মারুন।
ভুবনবাবু একটু ইতস্তত করে বললেন, “তোমার ছেলেপুলে নেই?”
“কেউ নেই।”
“ইয়ে, তাহলে একটা কাজ করলে কেমন হয়? আমার ল্যাবরেটরিতে একজন আগুপিছু করার লোক দরকার। খেতে পাবে, সঙ্গে কিছু হাতখরচাও। চুরি জোচ্চুরির দিকে ঝোঁক দেখলে কিন্তু—”
পাঁচু তাড়াতাড়ি নিজের নাক কান মলে বলল, “প্রাণ থাকতে আর ওসব নয়। আপনার বাড়িতে খ্যাঁটের বন্দোবস্তও বেশ ভাল। তবে আমার খোরাকটার কথা যদি মনে রাখেন-”
.
ভুবনবাবুর বাড়িতে এখন অখণ্ড শান্তি বিরাজ করছে। দুলালবাবু বাচ্চাদের হাতে কলমে বিজ্ঞান শেখাচ্ছেন। তাঁর কাজে পাঁচু নানারকম সাহায্য করে আর ফাঁক পেলেই খানিক ঘুমিয়ে নেয়। ভুবনবাবু রোজই আজকাল কিছু না কিছু আবিষ্কার করে ফেলছেন। রামলাল ভুবনবাবুর ধমক খাচ্ছেন রোজ। নন্দবাবু বিজ্ঞান ও কবিতার হাত থেকে রেহাই পেয়ে ভূতপ্রেত তন্ত্রমন্ত্র ইত্যাদি নিয়ে ভারি ব্যস্ত আছেন। ভুতো এক ফাঁকে হেলমেটটা আবার যথাস্থানে রেখে এসেছে। ভূতেরাও আজকাল আর কোনও গণ্ডগোল করছে না।