- বইয়ের নামঃ তারার দোলনায় দীপিতা
- লেখকের নামঃ শামসুর রাহমান
- বিভাগসমূহঃ ছড়াসমগ্র
আঁধার তাড়ানো ছড়া
শহরটাকে ধরল ঘিরে
মিশমিশে এক আঁধার,
খোলা ছাদের, হাটের মাঠের
সময় হল কাঁদার।
কেমন করে সইব এমন
অন্ধকারের কামড়?
এমন আঁধার জালিম বড়
ভীষণ এক পামর।
আমার প্রিয় শহরটাকে
করেছে তো বন্দী
ছাড়বে না সে কোনও মতে
এঁটেছে এক ফন্দি।
সবাই মিলে করি যদি
‘আঁধার খেদাও’ লড়াই,
লেজটি তুলে পালাবে সে
করবে না আর বড়াই।
আমার ছড়া
একটি আমার আলসে ছড়া
দিব্যি ঘুমায় খাটে,
একটি আমার উদাস ছড়া
বেড়ায় নদীর ঘাটে।
একটি আমার রাগী ছড়া
চেঁচায় ঝাঁঝাঁ স্বরে,
শাসায় আমায় থাকবে না সে
এমন ছোট্র ঘরে।
একটি আমার জেদী ছড়া
তাকায় লালচে চোখে।
মানে না সে কোনও কিছুই,
ভয় পেয়ে যায় লোকে।
একটি আমার সুবোধ ছড়া
দেবেই সাড়া ডাকে,
কলম থেকে নেমে এসে
খাতার পাতায় থাকে।
আমার দেশের শিশু
আমার দেশের শিশু, সবাই দলে দলে
কখনও যায় মুক্ত মাঠে, নদীর কিনারে-
কখনও যায় প্রতিবাদী নিশান হাতে
বুক ফুলিয়ে রক্তে-গড়া শহীদ মিনারে,
নানা রঙের শক্র যখন ঘটায় ভাষার ক্ষতি
এবং দেশের হৃদয় নিয়ে করে তামাশা,
নতুন যুগের শিশুরা সব দেবে মুছে
হাটের, মাঠের, শহর গাঁয়ের কালো হতাশা।
ইতিহাসের পাতা
ঘোড়ার গাড়ি, বলো তোমায়
কোথায় গেলে পাব?
এই দুপুরে ঝাঁঝাঁ রোদ
কোন্ সে পাড়ায় যাব?
ঘোড়ার গাড়ি, তুমি আমার
মনের মতো গাড়ি।
তোমার কাছে আছে জমা
গল্প সারি সারি।
ঘোড়ার গাড়ি, তুমি আমার
রঙিন ছেলেবেলা-
তোমার স্মৃতি জাগায় মনে
কত্ত মজার মেলা।
ঘোড়ার গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি,
ছুটছে দুটি ঘোড়া।
পীচের পথে উড়ছে যেন
পক্ষীরাজের জোড়া।
ঘোড়ার গাড়ি, তোমার চাকা
ঘুরছে খুশির সুরে;
খোকা-খুকির দলটি নিয়ে
যাচ্ছ অচিনপুরে।
ঘোড়ার গাড়ি, তোমার মনে
আছে নিখুঁত গাঁথা
আমার প্রিয় ঢাকার কিছু
ইতিহাসের পাতা।
এই পৃথিবীকে
এই পৃথিবীকে আমি বড় ভালবাসি-
এখানে রঙিন ফুল আছে রাশি রাশি,
আছে সুন্দর পাখিদের নানা ঝাঁক,
ফিতের মতন কালো নদীটির বাঁক,
আছে গোলগাল চাঁদ মামাটির হাসি-
তাই পৃথিবীকে আমি বড় ভালবাসি।
বক-সাদা মেঘ আকাশে সাঁতার কাটে,
সোনা-রোদ্দুরে লোকগুলো যায় হাটে,
অনেক অনেক দুষ্ট চোখের মতো
আসমানে কাঁপে মিটিমিটি তারা কতো।
বাঁশবাগানের ধার ঘেঁষে খোলা মাঠ,
পদ্মপুকুরে জল থইথই ঘাট।
ময়ূরপঙ্খী সেই ঘাটে বাঁধা আছে,
সাদা পালে তার হাওয়ার পরীরা নাচে-
তাতে চড়ে সুখে তীর থেকে তীরে ভাসি
এই পৃথিবীকে আমি বড় ভালবাসি।
ছড়ার ছন্দে খোলা মাঠে অবিরত
প্রজাপতি ওড়ে রঙের গুঁড়োর মতো।
ধূলি-ওড়া পথে একলা গোরুর গাড়ি,
রৌদ্র পোহায় খেলনা তো নয়, বাড়ি।
দরজা পেরিয়ে চেনা ঘরে ফিরে আসি-
এই পৃথিবীকে আমি বড় ভালবাসি।
রোদ-ছায়া পৃথিবীটা সুন্দর,
সকলের বাড়া আমাদের খেলাঘর।
এক যে ছিল কবি
এক যে ছিল কবি,
হরফ দিয়ে লিখতো
এবং আঁকতো বটে
নানা ঢঙের ছবি।
তার সে লেখায়, আঁকায়
থাকতো বটে সবই।
লোকটা ছিল একা,
ছোট্র ঘরে থাকতো।
সহজে তার সত্যি
পেতো না কেউ দেখা।
‘ঝিলিমিলি’র পাতায়
থাকতো কবির লেখা।
মজার কথা হলো-
কবির ছড়া প’ড়ে
বলতো নানা মুনি,
‘পদ্যগুলো জোলো’
তাই না শুনে হাসতো
ছড়াকারের ঢোলও।
কবিকাহিনী
শোনো সবাই, আমার পাড়া বেজায় শান্ত,
নয়কো গোঁয়ার-গোবিন্দ সে, নয়কো ভ্রান্ত।
এই পাড়াতে জ্যোৎস্না ঝরে, যেন বৃষ্টি,
যখন তখন নেইকো কোনও অনাসৃষ্টি।
এখানে নেই খুনখারাবি, তবে সত্যি-
গুলির চোটে লাশ পড়ে যায় ষোলো রত্তি!
গলির মোড়ে থাকেন বটে পদ্য লিখিয়ে,
আছেন বেঁচে বিদ্যালয়ে ছাত্র পড়িয়ে
কবির চুলে জমায় উঁকুন ইয়া আড্ডা,
হুমড়ি খেয়ে পড়েন পথে থাকলে গাড্ডা।
‘কবি’ বলে ছোঁড়ারা সব করে ঠাট্রা,
কেউবা মজার খেলা ভেবেই মারে গাট্রা!
৩০-১১-২০০২
গাছতলার লোক
একদা রোজ সকাল সন্ধ্যা নদীতীরে
বসতো এসে একটা লোক,
কে জানে তার হৃদয় জুড়ে ছিল নাকি
পুরনো এক বেজায় শোক।
কারও সংগে বলতো না সে কোনও কথা
থাকতো এক গাছতলাতে নিত্য,
হাওয়া খেয়ে অষ্টপ্রহর কাটাতো সে
ছিল না তার একটুও বিত্ত।
কিন্তু নদী, সোঁদামাটি ঘাসের জন্যে
ফুলের জন্যে মায়া ছিল ঢের,
কুকুরছানা, পাখি এবং ন্যাংটো শিশু
সেই আদরের আলো পেতো টের।
এক বিকেলে হঠাৎ রোগের আক্রমণে
প্রাণ হারালো একলা থাকা লোক,
কুকুরছানা, পাখপাখালি, শিশু ছাড়া
তার মরণে করলো না কেউ শোক।
ছোট্র শিশুদের জন্যে
ছোট্র শিশু, বলছে আমায়-
‘শোনো তো ভাই কবি,
পারবে না কি আঁকতে তুমি
আঁকতে আমার ছবি?’
ছিলাম আমি একলা তখন
রাঙা মেঘের ভেলায়,
তারার সঙ্গে ছিলাম সুখে
মন-মাতানো খেলায়।
ছোট্র শিশু, তোমার কথা
ফেলতে পারি না তো।
দিচ্ছি তোমায় তারার তোড়া,
হাতটা তুমি পাতো।
ছোট্র শিশু বললো ‘শোনো,
চাইনে আমি তারা।
পেলে ছড়া আনন্দে ভাই
হবো আত্মহারা’।
মিষ্টি শিশু, এবার তোমার
জন্মদিনে হেসে
আসবে দেখো আমার কথার
সপ্ত ডিঙা ভেসে।
ঠাকুর বাড়ির সেই ছেলেটি
জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির
বাসিন্দা এক ছেলে
আকাশ পাতাল অনেক কিছুই
দ্যাখে দু’চোখ মেলে।
সেই ছেলেটি খাতার পাতা
সাজায় পদ্য লিখে,
দূরের চন্দ্র তারা থেকে
নেয় সে কিছু শিখে।
সেই ছেলেটি যুবক হয়ে
কাজের ফাঁকে সুখে
বজরা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়
পদ্ম নদীর বুকে।
সেই ছেলেটির মিতা বটে
রোদ-ছড়ানো রবি,
সেই ছেলেটি পদ্য লিখে
হলো বিশ্বকবি।
তারার দোলনায় দীপিতা
দীপিতা রোজ সাঁঝের বেলা
চাঁদ মামাকে ডাকে,
চাঁদ মামা তো অনেক দূরে
নীল আকাশে থাকে।
দীপিতা ওই চাঁদকে দেখে
তা ধিন নেচে ওঠে,
নাচন দেখে চাঁদের ঠোঁটে
মধুর হাসি ফোটে।
নাচের ছন্দে তারাগুলো
দোলনা হয়ে যায়।
দীপিতা ওই দোলনাটিতে
রোজানা দোল খায়।
দীপিতা রোজ ঘুমের আগে
গল্প শুনতে চায়
পরীর দেশের গল্প শুনে
ঘুমের বাড়ি যায়।
ঘুমের বাড়ি নিঝুম বড়,
পরী হাওয়ায় ভাসে,
পরীর পাখায় স্বপ্নগুলো
রঙ ঝরিয়ে হাসে।
তারার মালা
জানি না এই ছোট্র মেয়ে চুপটি ব’সে
আকাশ থেকে কত্ত কিছু শিখছে।
আবার ঝুঁকে কলম দিয়ে শব্দ ঝেড়ে
নক্শা এঁকে কী যেন সব লিখছে।
ছোট্র মেয়ে দীপিতা ওর তুলির কাছে
কী-যেন আজ নতুন কিছু চাইছে,
গাছের পাতার নাচন দেখে দীপিতা খুব
মধুর সুরে মজার গান গাইছে।
দীপিতা এই সাঁঝের বেলা তারার ফুলে
চোখ-জুড়ানো একটি মালা গাঁথছে,
সেই মালাটি পাওয়ার আশায়
সবাই দীপুর কাছে দু’হাত পাতছে।
দীপু তারার মালা থেকে ফুল খুলে আজ
সব শিশুকে হাসি মুখে দিচ্ছে,
ছোট্র, মিষ্টি শিশুরা সব তারার ফুলের
মন-মাতানো অচেনা ঘ্রাণ নিচ্ছে।
দিদাভায়ের ঝুলি
আয় নয়না আয় দীপিতা
তোদের দিদাভায়ের কাছে,
দিদাভায়ের ঝুলির ভেতর
অনেক মজার গল্প আছে।
দিদা তোদের যাবে নিয়ে
সোনার রাঙা বেলাশেষে,
সাত আকাশের ওপারে এক
ডানাঅলা পরীর দেশে।
পরীর দেশে গহীন রাতে
নানা রঙের বসে মেলা,
সেই মেলাতে তোদের মতো
মিষ্টি মেয়ে করে খেলা।
কিন্তু সে দেশ হোক না যতই
মজার খেলার রঙে ভরা,
নেই সেখানে ফুলের আসর,
নেই’ক নদীর ঘাটে ঘড়া।
শোন নয়না, শোন দীপিতা
দেশ আমাদের মায়ের মতো,
তার মাটিতে আমরা সবাই
নিত্য করি মাথা নত
দীপিতা আর মেঘ
দীপিতা রোজ দূর আকাশে
দেখে কত্ত মজার খেলা।
দেখে ওই তো যাচ্ছে ভেসে
আপন মনে মেঘের ভেলা।
কখনও ফের মেঘের কোলে
উঠছে দুলে ছোট্র মেয়ে
রাঙাপাখার পাখি হেসে
দেখছে তাকে চেয়ে চেয়ে।
ওই যে মেঘে যাচ্ছে মেয়ে,
বলতো তোরা যাচ্ছে কে রে?
ডাকছে তাকে ভালবেসে
দীপিতা হাত নেড়ে নেড়ে।
দীপিতা মেঘ-পরীর কাছে
বলছে, ‘ওকে যাও না রেখে।
খেলার সাথী হবে আমার,
করবো আদর কাছে ডেকে’।
মেঘ-পরীরা যায় ভেসে যায়,
মেঘলা পুরীর মেয়ে ভাসে।
দীপিতা মন খারাপ করে-
কোলের মাটির পুতুল হাসে।
দীপিতা তুই যাবি কি আজ
দীপিতা তুই যাবি কি আজ ময়নামতীর মাঠে?
আমার সংগে যাবি এখন পদ্মবতীর ঘাটে?
চাস যদি তুই আনতে পারি পক্ষীরাজের মামা,
আনতে পারি পাষাণপুরীর পরী রানীর জামা।
দীপিতা তুই চাস কি খেতে স্বপ্নমাখা ফল?
তাহলে আয় আমার সংগে খোশ বাগানে চল।
আয় না দু’জন আজকে রাতে তারার দেশে যাই,
তারার কাছে হাতটি পেতে আলোর শোভা চাই।
দীপিতা শোন রাখিস না আর মুখটি করে ভারি
আজকে তোকে যাবোই নিয়ে সবুজ পরীর বাড়ি।
দীপিতার খেলা আর পড়া
দীপিতা এক ছোট্র মেয়ে
আমার কাছে থাকে।
পাখির সুরে সুর মিলিয়ে
‘দাদ্দু’ আমায় ডাকে।
দীপিতা ওর খেলাঘরে
নিত্য করে খেলা,
সেই ঘরে সে বসায় রোজই
পুতুল রানীর মেলা।
খেলার মাঝে ডাকলে ওকে
লাগে না তার ভালো,
রাঙা মুখটি বিরক্তিতে
নিমেষে হয় কালো।
খেলায় খেলায় হামেশা তার
বেলাটা যায় উড়ে।
দীপিতা আর পুতুলগুলো
নাচে গানের সুরে।
পড়ার কথা বললে ওকে
দেয় সে জবাব হেসে-
“অ আ, ক খ সব পড়েছি
মেঘের কোলে ভেসে”।
দীপিতার পাখি
দীপিতা ওর কাঁধে রাখে
ছোট্র পাখি ময়না।
সেই পাখিটা নাচে, হাসে
কিন্তু কথা কয় না।
সেই পাখিটা কেমন যেন,
এমন পাখি হয় না।
রোদের ছটা শরীরে তার
এত্তটুকু সয় না।
দীপিতা তো দুপুর বেলা
ঘরে শুয়ে রয় না।
পাখিটাকে পরায় হেসে
ঝাঁঝাঁ রোদের গয়না।
দীপিতার বায়না
দীপিতা আজ বায়না ধরে
যেতে হবে মেলায়,
লাগে না আর ভালো মোটেই
ঘরে ব’সে খেলায়।
না নিলে ওই মেলায় তাকে
তাড়াতাড়ি আজকে,
লণ্ডভণ্ড করে দেবে
সারা বাড়ির সাজকে।
এসব শুনে ভয়ে সবাই
দীপিতাকে বললো-
‘লক্ষ্মীরে তুই রাগটি থামা’
বলেই মেলায় চললো।
দুই পাখির ঝাঁকে
শহর থেকে অনেক দূরে এক বাগানে
থাকতো সুখে নানা রঙের পক্ষী।
সবাই ওরা সেখানে খুব হেসে নেচে
দিন কাটাতো, ছিল ওরা লক্ষ্মী।
ওরা হাওয়ায় পাখনা মেলে দিনদুপুরে
নীল আকাশে খুশির ছন্দে ভাসতো
দলের সবাই মেঘের সাথে গল্প ক’রে
হর-হামেশা ফুর্তিতে খুব হাসতো।
সহসা সেই পাখির দলের একটি পাখি
নিলো খুঁজে আলাদা এক পক্ষ;
নতুন দলের সঙ্গে জুটে গেল ভুলে
আগের দলের সাথীদেরই সখ্য।
নয়া ঝাঁকের পাখিরা সব ছিল পটু
ঘোঁট পাকাতে এবং এবং ষড়যন্ত্রে।
দলত্যাগী সেই পাখি নতুন দলে জুটেই
দীক্ষা নিলো একটি নয়া মন্ত্রে!
নয়া ঝাঁকের পাখিগুলো হামলা করে
অন্য দলের শান্ত নীড়ের লক্ষ্যে।
হিংসার ঝড়ে নানা রঙের পাখি মরে,
আলো ফোটে ভালো পাখির বক্ষে।
নয়না এবং ‘টইটম্বুর’
নয়না, তোমার সমান বয়সী ‘টইটম্বুর’ আজ
তোমার মতোই পরেছে সে খুব জ্বলজ্বলে এক সাজ।
যখন সে হেসে নেচে নেচে ঠিক আসতো তোমার কাছে,
তুমিও তো তাকে নেচে নেচে ঠিক মেতে মজাদার নাচে।
কত যে দেখেছি সকালে বিকেলে তুমি তার হাত ধরে
নিমেষেই গেছ মেঘের মুলুকে এবং তেপান্তরে।
‘টইটম্বর’ এতটুকু দেরি করলেই তুমি খুব
মুখ ভার করে কষ্টের হ্রদে ঘন ঘন দিতে ডুব।
তোমার হাসির জন্যে জলদি ‘টইটম্বুর’ এনে
ধরেছি তোমার চোখের সামনে, নিয়েছ তুমি তা টেনে
নয়না, তোমার ‘টইটম্বুর’ এবং আমার তুমি
বেঁচে থাকো সুখে যতদিন থাকে আমার জন্মভূমি।
মনের মতো দাদু
দূর আকাশের শুকতারাটা
আমার মিতা,
আমার খেলার সাথীরা সব
জানোকি তা?
মামণিটা যখন তখন
বলে, ‘পড়ো’।
আচ্ছা দাদু এই কথাটা
কেমনতরো?
যখন আমি তোমার কাছে
গিয়ে দাঁড়াই,
তুমি কি ছাই বলো দাদু
‘তোকে পড়াই’!
তুমি আমার মনের মতো
মিষ্টি দাদু,
দেখতে তুমি শাদা চুলের
ভালো সাধু।
দেখলে আমায় হাতের মোটা
বইটা রেখে
দীপিতাকে গল্প ছায়ায়
দাও যে ঢেকে।
এই পাড়ার কত্তজনের
গাড়ি আছে।
নেইকো কেন মোটর গাড়ি
তোমার কাছে?
‘শোন্ দীপিতা, দাদু যে তোর
নয়তো ধনী,
আমার আছে দীপিতা এক
লক্ষ্মীমণি’।
‘হ্যাঁ, দীপিতা আমার হাতে
আছে মায়া,
তার যাদুতে তোকে নিয়ে
হই তো ছায়া’।
‘আমরা তখন দূর আকাএ
বেড়াই উড়ে
তারার মেলায়, মায়াবী এক
চন্দ্রপুরে’।
সবার মনেই খেলাঘর
আছে, আছে, আছে,
সবার মনেই একটি মজার
খেলাঘর আছে।
আমাদের এই
খেলাঘরে, ওহো, তারার সঙ্গে,
চাঁদের সঙ্গে ছড়ার ছন্দে
নীল পরী নাচে।
আসে, আসে, আসে,
অনেক কিছুই মনের কোঠায়
রাঙা সাজে আসে।
স্বপ্নরা সব ওহো
সাঁতরে বেড়ায় এদিক সেদিক,
নানা রঙে ভাসে।
আরে আরে আরে
আমাদের এই মনের শহর
প্রতিদিনই বাড়ে।
দোলনায় দোলে শিশু,
নানান খেলনা, পুতুলের মেলা
শিশুদের-মন কাড়ে।
জাগে, জাগে, জাগে,
যারা বামে হাঁটে, রোশনি ছড়ায়,
তারা জাগে আগে।
আগে, আগে, আগে,
আলোর ঝর্ণা ভালবাসে যারা,
তাদের মধুর হাসির ছটায়
কালো ছায়া ভাগে।
হুতুম ভুতুম
হুতুম প্যাঁচার ভুতুম সাথী দু’জন মিলে
নেচে বেড়ায় ডানে বামে।
যেমন তেমন সুরের তালে তিন বছরে
ইচ্ছে হ’লে খানিক থামে।
হুতুম প্যাঁচার ভুতুম সাথী মনের সুখে
আকাশ পাতাল জুড়ে নাচে,
খায় না ওরা পোকা মাকড়, ইচ্ছে হ’লে
একটু হাওয়া খেয়েই বাঁচে।
হুতুম ভুতুম ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়ায়
মগের মুলুক, জাদুর দেশে।
হঠাৎ যদি ঘুটঘুটে সব বিপদ দ্যাখে,
পালায় তখন হাওয়ায় ভেসে।
বাংলাদেশে লক্ষ্মীছাড়া আঁধার আছে,
তবু দেশের মাটি ভালো।
ভবিষ্যতে জুলুমবাজি, সর্বনাশা
আঁধার ছিঁড়ে জাগবে আলো।