তুমি যেহেতু আমাদের কমান্ডের নও তুমি যা ইচ্ছে তা-ই ডাকতে পার।
আচ্ছা ক্লিভা, তোমাকে একটা জিনিস জিজ্ঞেস করি?
কর।
ক্যাপ্টেন ত্রুব যখন তোমাকে ডাকল, আর তুমি যখন এলে তখন এসে তুমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে। কোনো কথা বললে না! কারণটা কী?
ক্লিডা এমনভাবে য়ুহার দিকে তাকালো যেন সে খুব একটা বিচিত্র কথা বলেছে, ভুরু কুঁচকে বলল, আমি নিজে থেকে কেন ক্যাপ্টেন ক্ৰকে কিছু জিজ্ঞেস করব? ক্যাপ্টেন ক্ৰব আমাকে ডেকেছে, দেখেছে আমি এসেছি।
তার যখন ইচ্ছে করবে তখন সে কথা বলবে।
কিন্তু আমাকে যদি ডাকত আমি ঘরে গিয়েই জিজ্ঞেস করতাম, ক্যাপ্টেন ক্ৰব! তুমি কি আমাকে ডেকেছ?
তুমি সেটা করতে পার, কারণ তুমি কমান্ডের মাঝে নেই। যারা কমান্ডের মাঝে থাকে তাদের কিছু নিয়মকানুন মানতে হয়।
এটাই তোমাদের নিয়ম? আমি আসলে সেটাই জানতে চাচ্ছিলাম। হ্যাঁ, এটাই নিয়ম।
যুহ বলল, তুমি কিছু মনে করো না ক্লিড়া তোমার কাছে আমার আরও একটা প্রশ্ন।।
বল, কী প্রশ্ন।
তুমি যখন এলে, ক্যাপ্টেন ক্রব যখন তোমার সাথে বলল তখন সে তোমার দিকে না তাকিয়ে কথা বলেছে। আমরা যখন একজন আরেকজনের সাথে কথা বলি তখন তার দিকে তাকাই। আমার মনে হলো, মনে হলো।
কী মনে হলো?
মনে হলো যেন তোমাকে একটু তাচ্ছিল্য করা হলো।
য়ুহার কথা শুনে ক্লিডা একটু অবাক হয়ে তাকালো, বলল, তাচ্ছিল্য?। মোটেও তাচ্ছিল্য করা হয়নি।
নিশ্চয়ই করেনি কিন্তু আমার মনে হলো।
তোমার মনে হওয়াটা ভুল। আমাদের কমান্ডে একেকজন একেক ধাপে থাকে। যারা নিচের ধাপে থাকে তারা সব সময়েই উপরের ধাপের যে আছে তার আদেশ মেনে চলে। এটা শৃঙ্খলার জন্যে প্রয়োজন, শৃঙ্খলা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
য়ুহা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমার জীবনে কোনো শৃঙ্খলা নেই। আগে কখনো ছিল না, পরেও থাকবে বলে মনে হয় না।
ক্লিডা মুখ শক্ত করে বলল, শৃঙ্খলা ছাড়া কোনো বড় কাজ করা যায় না।
য়ুহা বলল, বড় কাজ করার জন্যে সবার জন্মও হয় না। অনেকের জন্ম হয় ছোট কাজ করার জন্যে। ছোট আর তুচ্ছ। কিন্তু খুব প্রয়োজনীয়। সবাই যদি বড় কাজ করে তাহলে কেমন করে হবে?
ক্লিডা একবার য়ুহার দিকে তাকালো কিন্তু কোনো কথা বলল না। য়ুহা গলার স্বর পাল্টে বলল, আমাকে একবার মহাকাশযানটা দেখাও।
কোথা থেকে শুরু করতে চাও? ইঞ্জিন। আমি প্রথমে দেখতে চাই মহাকাশযানের ইঞ্জিন।
বেশ। চল তাহলে ইঞ্জিনঘরে যাই। এই মহাকাশযানের ইঞ্জিন দুটো। দুটোই কুরু ইঞ্জিন। এর জ্বালানি হিসেবে বের করা হয় পদার্থ এবং প্রতিপদার্থ। নিরাপত্তার দিক দিয়ে এই জ্বালানির কোনো তুলনা নেই। বিশাল একটা মহাকাশযানকে এটা অনির্দিষ্ট সময় দশ জি ত্বরণে রাখতে পারে। মহাকাশযাত্রার ইতিহাসে একটা ব্ল্যাক হোলের কাছে বিপজ্জনকভাবে গিয়ে বের হওয়ার একমাত্র উদাহরণটুকু এই কুরু ইঞ্জিনের।
ক্লিডা শান্ত গলায় কথা বলতে থাকে, য়ুহা এক ধরনের মুগ্ধ চোখে কথাগুলো শোনে। সে আগে কখনোই এ ধরনের কোনো কথা শোনেনি।
খাবার টেবিলে ক্যাপ্টেন ত্রুব য়ুহাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি মহাকাশযানটা দেখেছ?
হ্যাঁ দেখেছি।
তোমার কী মনে হয়, যেতে পারবে আমাদের সাথে?।
য়ুহা মাথা নাড়ল, বলল, অবশ্যই পারব। চমৎকার একটা মহাকাশযান। দেখে মনে হয় এর প্রত্যেকটা স্কু বুঝি অনেঃ যত্ন করে তৈরি করা হয়েছে।
সেটা তুমি খুব ভুল বলনি।
আমরা কখন রওনা দেব?
চব্বিশ ঘণ্টার মাঝে। কার্গো পৌঁছানোর সাথে সাথে।
আমাদের কার্গোটা কী?
য়ুহার কথা শুনে খাবার টেবিলের সবাই এক মুহূর্তের জন্যে থেমে গেল। য়ুহা একটা অবাক হয়ে বলল, আমি কি ভুল কিছু জিজ্ঞেস করে ফেলেছি?
বলতে পার। এটা সামরিক মহাকাশযান। এখানে কেউ নিজে থেকে কিছু জানতে চায় না। যার যেটা জানার দরকার তাকে সেটা জানানো হয়।
য়ুহা মুখে হাসি টেনে বলল, আর আমি যদি জিজ্ঞেস না করেই কিছু একটা জেনে যাই, সেটা কি বেআইনি হবে?
ক্যাপ্টেন ক্ৰব তার পানীয়ের গ্লাসটা স্নায়ু উত্তেজক পানীয় দিয়ে ভরতে ভরতে বলল, না সেটা বেআইনি হবে না। তুমি কি কিছু জেনেছ?
য়ুহা মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ জেনেছি।
কী জেনেছ?
এই মহাকাশযানের কার্গো হচ্ছে মানুষ। এগারোজন মানুষ।
ক্যাপ্টেন ক্ৰব চোখ বড় করে য়ুহার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কেমন করে সেটা অনুমান করলে?
ক্লিডা যখন আমাকে মহাকাশযানটি দেখাচ্ছিল তখন শীতলঘরে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে এগারোটা ক্রায়োজেনিক ক্যাপসুল চার্জ করা হচ্ছিল। তার মানে নিশ্চয়ই এগারোজন মানুষকে নেয়া হবে।
ক্যাপ্টেন ক্ৰব তার পানীয়ে চুমুক দিয়ে বলল, আর কিছু অনুমান করেছ?
হ্যাঁ করেছি।
কী অনুমান করেছ?
য়ুহা পানীয়ের গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলল, এই এগারোটা মানুষকে তোমরা নিশ্চয়ই খুব ভয় পাও। তা না হলে তাদের ক্রয়োজেনিক ক্যাপসুলে করে কেন নেবে? আমার মতো যাত্রী হিসেবে নিতে পারতে।
ক্যাপ্টেন ক্ৰব মাথা নাড়ল, বলল, ভালো অনুমান করেছ য়ুহা।
য়ুহা তার পানীয়টুকু এক চুমুকে শেষ করে দিয়ে বলল, আমি মানুষগুলো দেখার জন্যে খুব আগ্রহী হয়ে আছি।
কেন?
আমার মনে হচ্ছে তাদের মাঝে নিশ্চয়ই রহস্য আছে। আমি একজন কবি, মানুষের চরিত্র, তাদের চরিত্রের রহস্য বুঝতে আমার খুব ভালো লাগে।
ঘুম থেকে উঠে য়ুহা আবিষ্কার করল মহাকাশযানের ক্রুদের প্রত্যেকের হাতে একটা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। সে একটু অবাক হয়ে একজন ক্রুকে জিজ্ঞেস করল, তোমাদের সবার হাতে অস্ত্র কেন? কিছু কি হয়েছে?