হ্যাঁ। আমার কৌতূহল—তুমিও কি সত্যি যুদ্ধ করেছ?
হ্যাঁ। করেছি।
কমান্ডার মাথা নেড়ে বলল, কী আশ্চর্য। তোমাকে দেখে মনেই হয় না তুমি যুদ্ধ করতে পার। তোমাকে দেখে মনে হয় একজন ভাবুক, একজন বিজ্ঞানী বা সে রকম কিছু। তোমার বয়সী একজনের এখন জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করার কথা অথচ তুমি কি না–
মেয়েটা হাসার মতো শব্দ করে বলল, তুমি কেমন করে জান আমি জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করি না? আরোপিত বুদ্ধিমত্তার ওপরে আমার একটা মডেল আছে। একটু সময় পেলেই আমি সেটার একটা গাণিতিক বিশ্লেষণ করব। সত্যি কথা বলতে কী আমি এটা নিয়েই ভাবছিলাম যখন
তুমি আমার মনোযোগটা নষ্ট করলে।
খোঁচা খোঁচা দাড়িসহ মধ্যবয়স্ক মানুষটা পিচিক করে মেঝেতে একটু থুথু ফেলে বলল, আমাদের রায়ীনা খুঁটি বৈজ্ঞানিক। একশ ভাগ খাঁটি বৈজ্ঞানিক।
কমান্ডার একবার মধ্যবয়স্ক মানুষটার দিকে তাকালো, তারপর কমবয়সী মেয়েটার দিকে তাকালো, জিজ্ঞেস করল, তোমার নাম রায়ীনা?
মেয়েটা মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ।
তার মানে তোমরা তোমাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য দেবে না সেটা সত্যি না? তুমি তোমার নাম বলেছ, তুমি কী নিয়ে গবেষণা করেছ সেটা বলেছ-
তুমি যদি চাও তাহলে আমার পছন্দের খাবার কী, আমার প্রিয় সিম্ফোনি কোনটা, কোন প্রাইম সংখ্যাটা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সেগুলোও তোমাকে বলে দিতে পারব। কিন্তু আসলে আমাদের সেগুলো নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। যে ছয়জন মারা গেছে তার মাঝে একজন আমার খুব প্রিয় বন্ধু ছিল।
কমান্ডার একটা নিঃশ্বাস ফেলে বাল, আমি জানি। তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে না, কিন্তু তবু বলি। আমি খুবই দুঃখিত বীনা, আমি খুবই দুঃখিত।
মেঝেতে গাদাগাদি করে বসে থাকা মানুষগুলো কোনো কথা বলল না, শুধু মধ্যবয়স্ক মানুষটা আবার পিচিক করে মেঝেতে থুথু ফেলল।
রায়ীনা অন্যমনস্কভাবে শুনে তাকিয়ে ছিল, এবারে মাথা ঘুরিয়ে মধ্যবয়স্ক মানুষটার দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বলল, এটা তোমার খুব খারাপ একটা অভ্যাস, এভাবে মেঝেতে থুথু ফেলবে না।
ঠিক আছে ফেলব না। বলে সে নিজের অজান্তেই আরেকবার মেঝেতে থুথু ফেলল।
০৩. কন্ট্রোল রুমে উঁকি দিয়ে
কন্ট্রোল রুমে উঁকি দিয়েই য়ুহী ক্যাপ্টেন ক্রবকে দেখতে পেল। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে মহাকাশযানের সব কয়জন ক্রুয়ের ত্রিমাত্রিক ছবি তাকে দেখানো হয়েছে কিন্তু য়ুহার কারো চেহারাই মনে নেই। মহাকাশযানের ক্যাপ্টেনের কাধে একটা লাল তারা থাকে সেটা তার মনে আছে, কাজেই কন্ট্রোল রুমের মধ্যবয়সী মানুষটা নিশ্চয়ই মহাকাশযানের ক্যাপ্টেন, তার কাঁধে একটা লাল তারা জ্বল জ্বল করছে।
য়ুহা কন্ট্রোল রুমে ঢুকে ক্যাপ্টেন ক্ৰবের সামনে দাঁড়াল। ক্যাপ্টেন ক্ৰবের সামনে একটা হলোগ্রাফিক প্যানেল, সেখানে কোনো একটা অদৃশ্য সুইচকে সে টানাটানি করছিল। য়ুহাকে দেখে ক্যাপ্টেন ক্ৰব হাত নামিয়ে তার দিকে দুই পা এগিয়ে এলো, তুমি নিশ্চয়ই য়ুহা?
য়ুহা মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ। আমি য়ুহা।
কবি য়ুহা?।
য়ুহা একটু হাসার ভঙ্গি করে বলল, অনেকে আমাকে তা-ই বলে।
আমার ত্রিশ বৎসরের জীবনে আগে কখনো এ রকম ঘটনা ঘটেনি। একাডেমি থেকে নির্দেশ দিয়েছে একজন কবিকে নিয়ে যেতে। শুধু তা-ই না, সেই নির্দেশে বলা আছে তোমার সৃজনশীলতাকে উৎসাহ দেয়ার উপযোগী একটা পরিবেশ তৈরি করে দিতে! খুব একটা মজার কথা বলেছে এ রকম ভাব করে ক্যাপ্টেন ক্রুব হা হা করে হাসতে লাগল।
য়ুহা কী বলবে বুঝতে না পেরে একটু হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে রইল। ক্যাপ্টেন ত্রুব হাসি থামিয়ে বলল, একজন কবির জন্যে সৃজনশীল পরিবেশ কী আমার সে সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই!
য়ুহা বলল, আসলে আমাদের জন্যে আলাদা কোনো পরিবেশের প্রয়োজন হয় না। যে কোনো পরিবেশই আমাদের জন্যে সৃজনশীল পরিবেশ।
ভালো। খুব ভালো। শুনে নিশ্চিন্ত হলাম।
আমি কি তোমাদের কোনো কাজে সাহায্য করতে পারি?
তোমার পেছনে যদি আমাদের সময় দিতে না হয় সেটাই হবে আমাদের জন্যে একটা রিরাট সাহায্য।
য়ুহা মাথা নাড়ল, বলল, দিতে হবে না। আমি প্রশিক্ষণটা খুব ভালোভাবে নিয়েছি। তুমি বিশ্বাস করবে কি না জানি না আমাকে এগারো জি তে নিয়ে গিয়েছিল, আমি তবু জ্ঞান হারাইনি।
ভালো, খুব ভালো।
য়ুহা একটু ইতস্তত করে বলল, ক্যাপ্টেন ক্ৰব, আমি কি মহাকাশযানটা ঘুরে দেখতে পারি?
অবশই। ক্যাপ্টেন ক্ৰব একটু চিন্তা করে বলল, তোমার সাথে আমি বরং একজন ক্রুকে দিয়ে দিই, প্রথমবার সে তোমাকে সবকিছু দেখিয়ে দিক।
ক্যাপ্টেন জব তার যোগাযোগ মডিউলের একটা বোতাম টিপতেই নিঃশব্দে একজন ক্রু এসে হাজির হলো। সোনালি চুলের কমবয়সী একটা মেয়ে, তার মুখে এক ধরনের কাঠিন্য। মেয়েটি কোনো কথা না বলে ঘরের এক কোণায় নিঃশব্দে এসে দাঁড়াল। ক্যাপ্টেন ত্রুব সরাসরি তার দিকে না তাকিয়ে বলল, ক্লিজা, তুমি য়ুহাকে মহাকাশযানটা একটু ঘুরিয়ে দেখাও।
ক্লিডা বলল, দেখাচ্ছি মহামান্য ক্যাপ্টেন। তারপর ঘুরে য়ুহার দিকে তাকিয়ে বলল, চল, আমার সাথে।
য়ুহা ক্লিডার সাথে ঘর থেকে বের হতে হতে এফ, আমার নাম য়ুহা।
জানি। আমাদের রেকর্ডে তোমার নাম আছে। তুমি নিশ্চয়ই ক্লিডা। হ, আমি কর্পোরাল ক্লিডা।
তার মানে, আমার তোমাকে কর্পোরাল ক্লিডা বলে সম্বােধন করতে হবে? শুধু ক্রিড়া বললে হবে না?