যাই হোক, তুমি এই পোশাকটি কখনো ব্যবহার করনি।
য়ুহা বাধা দিয়ে বলল, করেছি। আমাকে যখন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছিল তখন তারা এই পোশাকটা পরিয়েছিল।
সেটা ছিল খুবই কৃত্রিম একটা পরিবেশ—এখন পরিবেশটা খুব ভিন্ন। মিটিয়া গম্ভীর গলায় বলল, সব সময় মনে রাখতে হবে তোমার চলাফেরা হবে খুব সীমিত। এমনিতে তুমি যা যা করতে পার এই বিদঘুটে পোশাক পরে তুমি কিন্তু তার বিশেষ কিছুই করতে পারবে না।
য়ুহা জিজ্ঞেস করল, তাহলে আমাদের এই পোশাক পরাচ্ছ কেন?
তোমরা গ্রহটিতে যাচ্ছ সে জন্যে–
আমরা মোটেও গ্রহটিতে যাচ্ছি না-আমাদের জোর করে এই অন্ধকার গ্রহটাতে পাঠানো হচ্ছে।
মিটিয়া একটু থতমত খেয়ে বলল, আমি দুঃখিত য়ুহা।
তোমার দুঃখিত হবার কিছু নেই মিটিয়া।
যাই হোক, আমি যেটা বলছিলাম, এই পোশাকটা যদিও অত্যন্ত বিদঘুটে কিন্তু এটি একটি অসাধারণ পোশাক। একজন মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে যা যা দরকার তার সবকিছু এর ভেতরে আছে। একবার চার্জ করিয়ে নিলে এটা একজন মানুষকে পুরো আটচল্লিশ ঘণ্টা বাঁচিয়ে রাখতে পারে! এর ভেতরে যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে, অস্ত্র আছে
অস্ত্র আছে? য়ুহা চমকে উঠে বলল, আমাদের হাতে তোমরা অস্ত্র তুলে দিচ্ছ?
হ্যাঁ, দিচ্ছি তার কারণ তোমরা এখন সেটা ব্যবহার করতে পারবে। নিচের অন্ধকার গ্রহটাতে পৌঁছানোর পর সেটাকে চালু করা হবে।
নিচের গ্রহ সম্পর্কে তুমি কিছু জান মিটিয়া?
না। আমি বিশেষ কিছু জানি না। তোমাকে এই মুহূর্তে বলা হয়তো ঠিক হবে না কিন্তু গ্রহটি অত্যন্ত কুৎসিত। এর মাঝে এক ধরনের অশুভ ব্যাপার লুকিয়ে আছে।
য়ুহা কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে রইল।
মহাকাশযান থেকে স্কাউটশিপটা উড়ে গেল কোনোরকম আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই। য়ুহা মাথা ঘুরিয়ে একবার পেছন দিকে তাকিয়ে মহাকাশযানটিকে দেখার চেষ্টা করল, ঠিক কী কারণ জানা নেই সেটিকে একটা বিধ্বস্ত জাহাজের মতো দেখাচ্ছে। সে আর কখনো এখানে ফিরে আসতে পারবে কী
জানে না। য়ুহা মাথা ঘুরিয়ে রায়ীনার দিকে তাকালো, রায়ীনা।
বল।
তোমার কী মনে হয়? এই গ্রহটার প্রাণীগুলো কী রকম?
আমার এখনো কোনো ধারণা নেই। তবে প্রাণীগুলো বুদ্ধিমান সে ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।
তারা কী আমাদের থেকে বুদ্ধিমান?
রায়ীনা শব্দ করে হেসে বলল, আমরা বুদ্ধিমান তোমাকে কে বলেছে? আমরা যদি বুদ্ধিমান হতাম তাহলে কি নিজেরা নিজেরা যুদ্ধ করি? নিজেদের গ্রহটাকে ধ্বংস করে মহাজগতের এখানে-সেখানে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি? মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে হত্যা করি? জোর করে অপছন্দের মানুষদের কালো কুৎসিত অন্ধকার একটা গ্রহে ঠেলে পাঠিয়ে দিই?
তার পরও আমরা তো একটা সভ্যতা গড়ে তুলেছি তুলিনি—
এটাকে সভ্যতা বলে না।
য়ুহা সভ্যতার সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন করতে গিয়ে থেমে গেল। হঠাৎ করে তার মাথাটা একটু ঘুরে উঠেছে, হালকা এক ধরনের মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে কোথা থেকে। সে রায়ীনার দিকে তাকিয়ে ভয় পাওয়া গলায় ডাকল, রায়ীলা—
হ্যাঁ। রায়ীনা মাথা নাড়ে, আমাদের অচেতন করে দিচ্ছে।
কে অচেতন করছে? কেন করছে?
ক্যাপ্টেন জব নিশ্চিত করতে চাইছে যেন আমরা এই স্কাউটশিপটা ব্যবহার করে অন্য কিছু করতে না পারি। রায়ীনা ঘুমঘুম গলায় বলল, য়ুহা, আমি জানি না এই স্কাউটশিপটা আমাদের ঠিকভাবে গ্রহটাতে পৌঁছাতে পারবে কী না। যদি না পারে তাহলে বিদায়! তোমার সাথে পরিচয় হওয়াটা আমার জন্যে চমৎকার একটা অভিজ্ঞতা ছিল।
য়ুহা কিছু একটা বলতে চাইছিল, কিন্তু কিছু বলার আগেই সে গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল।
১৩. য়ুহা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল
য়ুহা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছিল সে একটি গহিন বনে হারিয়ে গেছে, যেদিকেই যায় সে দেখতে পায় শুধু গাছ আর গাছ। কৃত্রিম গাছ নয়, সত্যিকারের গাছ। সেই গাছের ডাল, গাছের পাতায় তার শরীর আটকে যাচ্ছে, লতাগুলোতে সে জড়িয়ে যাচ্ছে, তখন শুনতে পেল বহুদূর থেকে কেউ যেন তাকে ডাকছে, য়ুহা।
য়ুহা এদিকে সেদিকে তাকালো, কাউকে দেখতে পেল না। শুধু মনে হলো কণ্ঠস্বরটি বুঝি আরো কাছে এগিয়ে এসেছে—আবার ডাকছে, য়ুহা। এ রকম সময় সে ধড়মড় করে ঘুম থেকে জেগে উঠল, তার ওপর ঝুঁকে পড়ে আছে রায়ীনা, তাকে ধাক্কা দিতে দিতে সে ডাকছে।
য়ুহা এসে বসে এদিক-সেদিক তাকিয়ে বলল, আমরা কোথায়? আমরা গ্ৰহটাতে নেমে এসেছি।
আমরা তো বেঁচে আছি তাই না?
মনে হচ্ছে বেঁচে আছি। তবে এটাকে তুমি যদি বেঁচে থাকা না বলতে চাও তাহলে অন্য ব্যাপার।
য়ুহা স্কাউটশিপের গোল জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল, সর্বনাশ, কী বিদঘুটে গ্রহ!
রায়ীনা মাথা নাড়ল, বলল, হ্যাঁ এটা খুব বিদঘুটে একটা গ্রহ।
য়ুহা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আমি কখনো চিন্তা করিনি, আমার জীবনের শেষ সময়টা কাটাব এ রকম একটা বিদঘুটে অন্ধকার গ্রহে।
তোমার জীবনের শেষ সময়টা কোথায় কাটানোর কথা ছিল?
আমি ভেবেছিলাম আমার নিজের পরিচিত মানুষের সাথে। সাধারণ মানুষ। সাদামাটা মানুষ।
রায়ীনা মাথা ঘুরিয়ে য়ুহার দিকে তাকিয়ে বলল, বিষয়টা নিয়ে আমারও এক ধরনের কৌতূহল! তুমি তো সামরিক কমান্ডের কেউ নও-তুমি কেমন করে এই মহাকাশযানে আছ?
আমি একজন কবি! আমি একাডেমির কাছে আবেদন করেছিলাম যে আমি মহাকাশ ভ্রমণে যেতে চাই। একাডেমি এদের সাথে আমাকে যেতে দিয়েছে।