য়ুহা কৈফিয়ত দেয়ার ভঙ্গিতে বলল, আসলে দোষটা আমার–
রায়ীনা য়ুহার দিকে তাকিয়ে একটু হাসার ভঙ্গি করে বলল, তোমার কোনো দোষ নেই, তুমি যেটা করেছ সেটা অসাধারণ। তোমার কারণে আমি এই মহাকাশযানের ক্যাপ্টেনের কাছে আমার দাবিগুলোর কথা বলতে পারছি।
ক্যাপ্টেন ক্ৰব শক্ত মুখ করে বলল, তোমার কথা শেষ হয়েছে।
না। শেষ হয়নি। রায়ীনা বলল, আমার দলের সবাইকে জাগিয়ে তুললেই হবে না। তাদের নিরাপত্তার জন্য তাদের সবার হাতে একটা করে অস্ত্র দিতে হবে যেন ইচ্ছে করলেই তোমরা তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে না পার। শুধুমাত্র তাহলেই আমি তোমার সাথে কথা বলতে পারি।
ক্যাপ্টেন ক্ৰব শীতল চোখে রায়ীনার দিকে তাকিয়ে রইল। সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কয়েকবার চেষ্টা করে বলল, তুমি নিশ্চয়ই একবারও বিশ্বাস করনি যে তোমার এই দাবিগুলো আমরা মেনে নেব।
স্বাভাবিক অবস্থা হলে বিশ্বাস করতাম না, কিন্তু এখন অবস্থাটা খুব জটিল। হয়তো তোমার একটা সঠিক সিদ্ধান্তে এতগুলো মানুষের প্রাণ বেঁচে যাবে।
আমি দুঃখিত রায়ীনা। তোমার রক্তসঞ্চালনের জন্যে হাতের বাঁধনটা একটু ঢিলে করে দেয়া ছাড়া আমার পক্ষে তোমার আর কোনো দাবিই মেনে নেয়া সম্ভব না।
রায়ীনা আবার শব্দ করে হাসল। ক্যাপ্টেন ক্ৰব ভুরু কুঁচকে বলল, তুমি কেন হাসছ।
তোমার কথা শুনে। তোমার আশেপাশে তোমার কমান্ডের এত জন। মানুষ দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত দেবার জন্যে একবারও তাদের সাথে কথা বললে না! আমি তোমার জায়গায় হলে তাদের সাথে একবার কথা বলতাম।
ক্যাপ্টেন জব ক্রুদ্ধ গলায় বলল, আমি কীভাবে সিদ্ধান্ত নেব সেটি আমার ব্যাপার। আমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি বলেই আমি এই মহাকাশযানের ক্যাপ্টেন।।
য়ুহা মাথা নাড়ল, বলল, তোমার সিদ্ধান্ত দেখে সেটা মনে হচ্ছে না ক্যাপ্টেন ক্ৰব।
আমার সিদ্ধান্তটি কী সেটা তোমরা এখনো জান না। আমি এখনো সেটা বলিনি।
সবাই এবার উৎসুক দৃষ্টিতে ক্যাপ্টেন ক্ৰবের দিকে তাকাল। ক্যাপ্টেন ক্রব তার মুখে একটা বিচিত্র হাসি ফুটিয়ে বলল, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটা স্কাউটশিপে করে তোমাদের দুজনকে এই কালো কুৎসিত গ্রহটাতে পাঠাব। এই গ্রহতে মহাজাগতিক প্রাণীগুলো আছে, দেখা যাক তারা তোমাদের কীভাবে গ্রহণ করে!
য়ুহা চমকে উঠে বলল, কী বলছ তুমি?
আমি ঠিকই বলছি। দেখি তোমরা এই মহাজাগতিক প্রাণীকে পরাস্ত করে ফিরে আসতে পার কী না।
য়ুহা কী বলবে বুঝতে না পেরে বলল, পরাস্ত করতে হবে? আমাদের?
সেটা তোমাদের ইচ্ছে।
য়ুহা ভয়ার্ত চোখে রায়ীনার দিকে তাকালো। রায়ীনার চোখে-মুখে ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই। সে য়ুহার দিকে তাকিয়ে চোখ মটকে বলল, আশা করি সঙ্গী হিসেবে তুমি ভালো হবে–তোমার সাথে অনেক সময় কাটাতে হবে আমার।
আসলে সঙ্গী হিসেবে আমি যাচ্ছেতাই! য়ুহা মাথা নেড়ে বলল, এত বয়স হয়েছে এখনো আমার কোনো ভালো বন্ধু নেই!
১১. স্কাউটশিপে ওঠার আগে
রায়ীনা বলল, আমি স্কাউটশিপে ওঠার আগে আমার বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিতে চাই।
ক্যাপ্টেন ত্রুব বলল, তুমি অর্থহীন কথা বলো না। তোমার বন্ধুরা সবাই একটি করে জড় পদার্থ হয়ে আছে। একটা স্ক্রু ড্রাইভারের কাছ থেকে বিদায় নেয়া আর তোমার বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।
রায়ীনা বলল, কে আমার বন্ধু কে ক্রু ড্রাইভার আমি সেটা নিয়ে তর্ক করতে চাই না। আমি বলছি যে আমি আমার এই বন্ধুদের সাথে আমার জীবনকে এক সুতায় বেঁধেছি। আমার কাছে আমি যেটুকু গুরুত্বপূর্ণ আমার এই বন্ধুরাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমি চলে যাবার আগে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিতে চাই।
ক্যাপ্টেন ত্রুব বলল, এটি অত্যন্ত ছেলেমানুষী, অর্থহীন একটা প্রক্রিয়া।
রায়ীনা বলল, আমি ছেলেমানুষ এবং এই মুহূর্তে আমার জীবনের কোনো অর্থ নেই। তবে তুমি নিশ্চিত থাক আমি পালিয়ে যাবার চেষ্টা করব না। শুধু তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসব।
ক্যাপ্টেন ত্রুব বলল, তারা সেটি জানতেও পারবে না।
রায়ীনা বলল, যদি কখনো তাদেরকে জাগিয়ে তোলা হয় তখন তারা জানতে পারবে।
হিসান ক্যাপ্টেন বের কাছে গিয়ে গলা নামিয়ে বলল, ক্যাপ্টেন ক্রব, মেয়েটি যখন চাইছে তাকে অনুমতি দেয়া যেতে পারে। আমরা কয়েকজন তাকে শীতল ঘরে নিয়ে যাব তারপর ফিরিয়ে আনব। প্রতিমুহূর্ত তাকে চোখে চোখে রাখব।
ক্যাপ্টেন ত্রুব হিসানের দিকে তাকিয়ে বলল, ঠিক আছে। আমি তোমাকে দায়িত্ব দিচ্ছি তুমি এই মেয়েটিকে শেষবারের মতো শীতলঘর থেকে ঘুরিয়ে আনে। সে তার বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসুক। ক্যাপ্টেন ক্রব এক মুহূর্ত থেমে যোগ করল, মনে রেখো সে যদি অন্য কিছু করতে চায় তুমি তাকে সাথে সাথে গুলি করে হত্যা করতে পার।
১২. স্কাউটশিপটা ছোট
স্কাউটশিপটা ছোট, দুজন পাশাপাশি বসতে পারে। নানারকম যন্ত্রপাতিতে বোঝাই, যার কোনটা কী কাজ করে সে সম্পর্কে য়ুহার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। য়ুহাকে প্রথমবারের মতো বায়ু-নিরোধক একটা পোশাক পরিয়ে দিচ্ছিল মিটিয়া। সে নিঃশব্দে কাজ করছে, য়ুহা জিজ্ঞেস করল, তুমি এবারে কিন্তু গুন গুন করে গান গাইছ না।
না। গাইছি না। মিটিয়া একটু হাসার চেষ্টা করে বলল, আসলে সব ।সময় গান গাইতে ইচ্ছে করে না।
সেটা আমি বুঝতে পারছি।